ডিম কীভাবে খাওয়া ভালো?
ডিম প্রাণীজ প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। অনেকের কাছে খুব প্রিয় একটি খাবারের নাম ডিম। ডিমে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ডিম শুধু আদর্শ প্রোটিনই নয়, বরং অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এটি শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে অনেক কার্যকর।
একটি ডিম থেকে অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। যেমন : ভিটামিন বি৬, বি১২, রিবোফ্লাভিন, ফলিক এসিড, আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ প্রভৃতি। ডিমের প্রোটিন শরীরে খুব ভালো মতো কাজে লাগে। এটি মাংসপেশির গঠনে সাহায্য করে। ডিমে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা অনেক কম।
তবে বিভিন্ন গবেষণা বিভিন্ন সময় এই প্রিয় খাবারটি খাবে কি খাবে না, এ নিয়ে শঙ্কায় ফেলে।
কোনো কোনো গবেষণা বলে, প্রতিদিন ডিম খাওয়া যাবে, আবার কোনো গবেষণা বলে সপ্তাহে দুটি। শরীরের প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রার গ্রহণ করা উচিত। খাবারের, কোলেস্টেরলই শুধু রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ানোর মূলে নয়, বরং সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট, যা অনান্য খাবার থেকে আসে, তাও রক্তের কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম বরং রক্তে খারাপ চর্বি বা এলডিএল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও এলডিএলের মাত্রা ঠিক থাকে, তাদের জন্য দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ২৫০ মিলিগ্রাম।
সাধারণত একটি ডিমের কুসুম থেকে প্রায় ১৬৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়।
কোনো কোনো গবেষণায় ডিমের কুসুম এবং এর উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আবার কোনো কোনো গবেষণায় এর ক্ষতি তুলে ধরা হয়েছে। আসলে, গবেষণাগুলো শুধু ডিমের ওপর ভিত্তি করে এর একটি ফলাফল তুলে ধরে। দৈনিক জীবনযাত্রার সঠিক নিয়ম মেনে চললে, মাংস ও তেলের গ্রহণ সীমিত করলে, ভাজা পোড়া খাবার কম খেলে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন গ্রহণ করলে, নিয়মিত হাঁটলে, একটি দেশি ডিম রোজ খেলে খুব কি ক্ষতি? তবে ডিমকে কীভাবে রান্না করে খাচ্ছেন তার ওপর ক্ষতি অনেক নির্ভর করে। অনেক তেলে ডিম ভেজে রোজ খেলে তা থেকে ক্ষতি হলে হতেও পারে। আবার ডিম কী দিয়ে খাবেন সেটাও কিন্তু বিবেচনার বিষয়। পরোটা, লুচি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ইত্যাদির সঙ্গে ডিম খেলে তা থেকে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ারই কথা। লাল আটার রুটি, সিরিয়াল মিল্ক আর ডিম সিদ্ধ, ব্রেড আর ডিম- এভাবে খেলে তা তেমন ক্ষতিকর নয়।
অনেকে ডায়রিয়া হলে ডিম খাওয়া বন্ধ রাখে। অথচ ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পুষ্টি ঘাটতি হয়। তাই ডায়রিয়া হলে একটা ডিম খাওয়া যেতে পারে। যেকোনো বয়সে ডিম একটা আদর্শ প্রোটিন। তবে কিডনি রোগে ডিম খাবে কি খাবে না তা নির্ভর করবে পুষ্টিবিদের ওপর।
খাদ্যের অভ্যাস পরিবর্তন না করে যদি ডিমসহ অন্যান্য কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করা হয়, তখনই বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। ডিম পরিমিত পরিমাণে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। একটি খাবার অনেক স্বাস্থ্যকর হলেও সেটি অতিরিক্ত গ্রহণ উপকারের পাশাপাশি অপকারও করে থাকে এটাই স্বাভাবিক। দৈনিক চাহিদার তুলনায় যেকোনো খাবার বেশি গ্রহণ না করাই ভালো।
ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। বরং রোজ মাংস না খেয়ে তার পরিবর্তে একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে।
লেখক : পুষ্টিবিদ, থাইরোকেয়ার বাংলাদেশ।