ঘাড় ব্যথার কারণ কী?
ঘাড় ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা। ঘাড় ব্যথার বিভিন্ন কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪০২তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক কাজী শহীদুল আলম।
বর্তমানে শহীদুল আলম আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, তার জীবনে কখনো না কখনো ঘাড় ব্যথা হয়নি। অত্যন্ত সাধারণ কারণ থেকে গুরুতর কারণেও হতে পারে। ঘাড় ব্যথার প্রধান কারণগুলো কী?
উত্তর : আমাদের দেশে ঘাড় ব্যথা নিয়ে প্রায়ই লোকজন আসে। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, ঘাড় ব্যথা সামান্য কারণেও হতে পারে, আবার গুরুতর কারণেও হতে পারে। একটি কারণ হলো পশচার। এর মানে হলো ভঙ্গি। যে ভঙ্গিতে আমরা বসি, যে ভঙ্গিতে আমরা ঘাড়কে পরিচালনা করি, সেটি। তবে এগুলো জানার আগে আমাদের জানতে হবে ঘাড়ে কী কী রয়েছে। ঘাড়ে রয়েছে সাতটা হাড়। এর ভেতর দিয়ে স্পাইনাল কর্ড গেছে, একে মেরুরজ্জু বলে এবং তার থেকে অন্যান্য স্নায়ুগুলো গেছে। আর এই হাড়গুলো একটি আরেকটির সঙ্গে কাপড়ের মতো, কিন্তু শক্ত, লিগামেন্ট দিয়ে আটকানো রয়েছে। বেশ কয়েকটি লিগামেন্টগুচ্ছ রয়েছে। এগুলোর যেকোনো একটিতে অসুবিধা হলে, ঘাড় ব্যথা হতে পারে। পেশিতেও হতে পারে। ভাসকুলার পেইন হতে পারে।
এ ছাড়া, আরো তিনটি জিনিস রয়েছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো থাইরয়েড, আরেকটি হলো প্যারাথাইরয়েড, টনসিল। এগুলোতেও ব্যথা হলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
আমরা প্রথমেই দেখি যে ঘাড় ব্যথা নিয়ে কারা আসে? যারা ঘুমানোর সময় একটু অন্যভাবে ঘুমায়, বসার সময় অন্যভাবে বসে তারা আসে। যারা অনেকক্ষণ বসে, একইভাবে বসে কাজ করে, তাদের ঘাড়ব্যথা হয়।
আরেকটি জিনিস দেখা যায়, এখন সবার হাতে একটি টেলিফোন রয়েছে। সেই টেলিফোনে যখন কথা বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলছে, ঘাড় কাত করে কথা বলছে, রাস্তা পার হচ্ছে, কথা বলছে, গাড়িতে ওঠে কথা বলছে। এই যে ঘাড় বাঁকানো, এই অভ্যাসটি থেকেও ঘাড় ব্যথা হয়। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালালেও একই সমস্যা হতে পারে। একে বলে ব্রাউজ সিনড্রম। দুই ঘণ্টার বেশি যদি কম্পিউটার দেখতে থাকে, তাহলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
আসলে একটি অবস্থায় আমরা বেশিক্ষণ থাকি না। দেখা গেছে, কয়েক মিনিট পর পর আমাদের ভঙ্গি বা অঙ্গবিন্যাস কিছুটা পরিবর্তন হয়। এটা নিজে থেকেই হয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক।
এই ব্যথাগুলো হলে অনেক সময় আমরা তেল মালিশ করি, গরম স্যাঁক দেই, তা ভালো। ভালো হয়ে গেলে ভালো। তবে এটি অনেকদিন ধরে থাকলে, দেরি করা উচিত নয়। এক সপ্তাহের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন : জটিল কোনো রোগের কারণে কি ঘাড়ব্যথা হতে পারে?
উত্তর : একটি হতে পারে টিউমার। দুই নম্বর হলো, মেরুদণ্ডের অনেক যক্ষ্মা হয়। আগে অনেক বেশি হতো, তবে এখন আমাদের সৌভাগ্য যে টিবি অনেক কমে গেছে। লোকে বুঝতে পারে না, হাড়ে আবার কেন টিবি হবে। সাধারণ লোকের ধারণা কেবল ফুসফুসে টিবি হবে। টিবি কিন্তু হাড়েও হয়।
এ ছাড়া আমাদের ওখানে, কিছু গ্রন্থি রয়েছে, এগুলোকে আমরা বলি লিম্ফোয়েড গ্রন্থি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে লিম্ফয়েড গ্রন্থি, যেগুলোর মধ্যে টিবি হয়। এই লিম্ফয়েডগুলো একসঙ্গে মিশে যায়। মিশে গেলে এদের বলে ম্যাটেট লিম্ফয়েড। তখন এগুলোতে ব্যথা হতে পারে।
টনলিস যদি ফুলে তাহলে ঘাড় ঘোরাতে পারে না। আমরা যখন কথা বলি, সবাই মাথা নাড়াই। এখনই আমি মাথা নাড়াই। আমরা কথা বলার সময় ঘাড় শক্ত করে কথা বলি না, তবে কোনো সময় ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে, তখন বুঝতে পারি, কিছু সমস্যা রয়েছে। আমার ঘাড়ে কোনো ব্যথা হয়েছে। এই জন্য দেখা যায়, যাদের ঘাড় ব্যথা, তাদের জন্য রাস্তা পার হওয়াটা খুব জটিল। ঘাড় ঘুরিয়ে যে দেখা এটা কঠিন হয়ে যায়।
ঘাড়ে ব্যথা হলে হাতেও ব্যথা হতে পারে। স্নায়ুগুলো যে যায়, সেখান থেকে উৎপন্ন হতে পারে। একে আমরা বলি ব্রেকিয়াল প্রেকসাস। এর মানে অনেকগুলো স্নায়ুর দড়ি। এগুলো আমাদের হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। হাত দিয়ে জিনিসপত্র উঠাতে অসুবিধা হতে পারে। হাত ঝিন ঝিন করতে পারে। হাত অবশের মতো ভাব হতে পারে।
এ ছাড়া রয়েছে রক্তের নালি। ঘাড়ের ভেতর রক্তের নালিগুলোও অনেক সময় ছোট হয়ে যায়।
এ ছাড়া কয়েকটি অসুখ রয়েছে। এগুলো খুব জটিল অসুখ। এর মধ্যে একটি হলো আরথ্রাইটিস। সারভাইক্যাল আরথ্রাইটিস হলে বা রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস হলে, ঘাড়ে ব্যথা হলে, সাংঘাতিক ব্যথা হবে। আর আরথ্রাইটিসের জন্য যখন চাপ খায়, তখন মস্তিষ্কেও সমস্যা তৈরি করে। এমনকি অনেক অঙ্গবিন্যাসের সময় মাথা ঘুরে যায়, চারদিকে অন্ধকার দেখে।