ডায়াবেটিস রোগীর ত্বকের যত্ন কীভাবে করবেন?

ডায়াবেটিস বর্তমানে খুব প্রচলিত একটি রোগ। ডায়াবেটিস হলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হয়। ডায়াবেটিস রোগীর ত্বকের রোগগুলো কী এবং ত্বকের রোগ প্রতিরোধে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রেবেকা সুলতানা।
বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪১০তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কি ত্বকে বাড়তি কোনো সমস্যা হয়?
উত্তর : ডায়াবেটিসে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের যখন চর্মরোগ হয়, তখন স্বাভাবিক মানুষদের থেকে চিকিৎসাটা একটু দীর্ঘ হয়। ডায়াবেটিস রোগীর ত্বকের চিকিৎসাটা একটু আলাদা। ডায়াবেটিস রোগীর ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে সচেতনতাটা একটু বেশি দরকার।
সাধারণত ডায়াবেটিসে দুই ধরনের চর্মরোগ দেখা যায়। একটি হলো ডায়াবেটিসসহ চর্মরোগ। আরেকটি হলো, ডায়াবেটিসের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য সংক্রমণ।
সংক্রমণের মধ্যে বেশিরভাগই হলো ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। যেমন : ঘন ঘন ফোঁড়া হচ্ছে, লোমকূপের গোড়ায় প্রদাহ হচ্ছে। এ ছাড়া ভাইরাল ইনফেকশন বেশি হয়। হারপিসটা বেশি হয়। এ ছাড়াও তাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশি হয়।
পায়ে বা হাতের কিছু প্রদাহ হয়। অনেক সময় শুধু ব্লিস্টার নিয়ে আসে। এগুলো ব্যথামুক্ত থাকে। ব্যথা নেই, তবে একটা ফোস্কা হলো। আবার নিরাময় অযোগ্য আলসার হয়। অনেক দিন ধরে ঘা রয়েছে, কিন্তু শুকাচ্ছে না। দেখা গেল তার ডায়াবেটিস রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়াবেটিস পা, গোঁড়ালি বা হাঁটুতে হয়। দাগ নিয়ে আসে। বাদামি বাদামি বা কালো রঙের কিছু দাগ। সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু কখনো কখনো উপসর্গ হয়। মাঝেমধ্যে খুব চুলকায়। মাঝেমধ্যে সেখানে ব্যথা নিয়ে আসে। যখন সেডেন্টারি সংক্রমণ হয় তখন। এ ছাড়া কোনো সমস্যা থাকে না।
আরেকটি ত্বকের রোগ রয়েছে। এটি গোল ধরনের বা লম্বাটে হয় এবং শক্ত হয়। একটু হলুদাভ রং থাকে। এটাও প্রথমত লক্ষণহীন থাকে। পরে কখনো কখনো লক্ষণ দেখা যায়।
আরেক ধরনের চর্মরোগ হয়; এটি গুটি গুটি ব্রণ ধরনের। হলুদ রঙের হয়। কেবল ডায়াবেটিস নয়, সঙ্গে দেখা যায় তাদের ডিসলিপিডিমিয়া থাকে।
অনেক সময় দেখা যায় সমস্ত গায়ে গোল গোল র্যাশ ওঠে। আরেকটি হলো স্কিন টাইটেন, পিঠে ওপরের দিকে বেশি হয়। একটু ফোলা ফোলা ধরনের হয়। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস যাদের থাকে, ডায়াবেটিস রোগীদের, তাদের হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হলে সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়।
প্রশ্ন : যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদেরও কি এই সমস্যা হয়?
উত্তর : যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাদেরও আমরা অনেক সময় সমস্যা পাই।
আরেকটি ত্বকের সমস্যায় আঙুল আঁটসাঁট হয়ে যায়। রোগী এসে হয়তো বলতে পারে আঙুল ভাঁজ করতে পারছি না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষত থাকে।
আরেকটি বিষয় হলো ঘাড়ে একটু দাগ থাকে। টেকচারটা একটু বেগুনি রঙের হয়। ঘাড়ে, হাতে, ঊরুতে এসব জায়গায় কালো কালো দাগ নিয়ে আসে। যারা স্থূল এবং যাদের ডায়াবেটিস থাকে, তাদের এই সমস্যা প্রধানত হয়। স্থূলতা কমালে অনেকটা কমানো যায়। এটা খুবই প্রচলিত।
প্রশ্ন : ত্বকের এসব সমস্যা যেন না হয়, তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী চলা প্রয়োজন। কিছু ওষুধ নেবে। হাঁটা-চলা, খাওয়া-দাওয়া নিয়ম অনুযায়ী করবে। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবে, প্রচুর পরিমাণে সতেজ সবজি খাবে; ফল খাবে। প্রোটিন খেতে হবে বেশি। রোগীরা অনেক সময় বোঝে না। যদি কিডনির কার্যক্রম ভালো থাকে, তাহলে তাকে বাড়তি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়। যতবার মুখ ধুবেন, ততবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। যদি এমন হয় যে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়েও শুষ্কতা যায় না, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যা তিনি ব্যবহার করতে বলবেন, সেটি ব্যবহার করবে।
তবে ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষভাবে পায়ের যত্ন নিতে হবে। আমাদের কিন্তু ত্বকের যত্ন নিয়ে বই রয়েছে আলাদা। পায়ের যত্ন ঠিকমতো না হলে গ্যাংরিন হয়ে যেতে পারে আমরা জানি।
নখের যত্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নখ কাটার বিষয়ে যদি একটু বয়স্ক হোন, তখন আমরা নিষেধ করি। নখটা একটু বড় রেখে কাটতে বলি। ত্বকে যেন কোনো রক্তপাত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
জুতা পরার আগে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। দেখতে হবে এটার ভেতরে সূচালো কিছু রয়েছে কি না। এর চাপে হয়তো তার পায়ে একটি আঘাত লাগল, এই আঘাত থেকে ভয়াবহ কিছু হয়ে যেতে পারে।