বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস
আপনার হাড়কে ভালোবাসুন
আজ ২০ অক্টোবর, বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস। এই উপলক্ষে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় অস্টিওপরোসিস। আজ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৮০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরি।
প্রশ্ন : এ বছর অস্টিওপরোসিস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর : এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে লাভ ইউর বোনস। অর্থাৎ আপনার হাড়কে ভালোবাসুন।
প্রশ্ন : অস্টিওপরোসিস বিষয়টি কী?
উত্তর : অস্টিওপরোসিসের দুটি অংশ। একটি হলো, এই রোগটিকে প্রতিরোধ করা। আরেকটি হলো, যাদের রোগটি হয়ে গেল তাদের একটি বড় জটিলতা হলো হাড়গুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা। তাদের সহজে হাড় ভেঙে যায়, আমরা একে বলি ফ্রাজিলিটি ফ্যাকচার। আমি এখানে বসে আছি, একজন সুস্থ মানুষ, তবে যার অস্টিওপরোসিস রয়েছে তিনি যদি পড়ে যান, তার হাড়গুলো ভেঙে যেতে পারে। অল্প আঘাতে ভেঙে যাবে। সেই জন্য অস্টিওপরোসিস রোগটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের জন্য।
অস্টিও শব্দটির অর্থ হচ্ছে হাড়, আর পরোসিস হলো ছিদ্র ছিদ্র হয়ে যাওয়া। এ থেকে বোঝা যায় যে হাড়ের অপরিসীম ক্ষতি হয়ে যায়, এই রোগটি যদি দানা বাঁধে।
অস্টিওপরোসিসের কারণ কী? আমাদের শরীরের ভেতরে যে হাড়গুলো থাকে সেখানে প্রতিনিয়ত ভাঙা গড়া চলতে থাকে এবং আমরা বলি কিছু হাড় উৎপন্ন হয়, কিছু হাড় নষ্ট হয়। এটা চলতেই থাকে। আমরা বলি অস্টিওপ্লাস্টি একটিভিটি, অস্টিক্লাস্টি একটিভিটি। যাদের অস্টিওপ্লাস্টি একটিভিটি বেশি হচ্ছে, বেশি হলে তাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপরোসিস হয়ে যায়। উৎপাদন কম হচ্ছে, তবে ক্ষয় বেশি হচ্ছে।
এর আবার অনেক রূপ আছে। প্রধাণত বলা হয়, মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে এই রোগটির প্রকোপ বেশি। এক সময় মনে করা হতো পুরুষদের বোধ হয় এই রোগটি হবেই না। কিন্তু এখন দেখা যায় পুরুষদেরও হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে পুরুষদের অস্টিওপরোসিসকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।urgentPhoto
আর অস্টিওপরোসিস রোগটি আরেকটি কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগটির সচরাচর কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তখনই উপসর্গ দেখা দেয় যখন একটি হাড় হয়তো ভেঙে গেছে। যেমন একজন রোগী হয়তো হঠাৎ করে দেখছে তার কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। একটা সাধারণ এক্সরে করে দেখা গেল হাড় অস্টিওপরোসিস হয়ে ফ্রাকচার হয়ে গেছে এবং ভেঙে যাওয়ার কারণে হয়তো ব্যথা করছে। রোগটি নিজে কোনো উপসর্গের জন্ম দেয় না। এর জন্যই বলা হয়, নীরব ঘাতক।
প্রশ্ন : এই নীরব ঘাতক, আমাকে বধ করার আগেই তাকে চিহ্নিত করতে চাই। এর উপায় কী?
উত্তর : কারণগুলো জানার একটি চেষ্টা করতে হবে। একটি বলা হয় ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এগুলোর ঘাটতিজনিত কারণে মূলত আমাদের হাড়গুলোর ক্ষতি হয়। আমরা মূলত ভিটামিন ডি পাই সূর্যের আলো থেকে। সূর্যের আলো আমাদের ত্বকে আসে সেখান থেকে রূপান্তিরত হয়ে ভিটামিন ডি আমাদের শরীর পায় এবং সেখান থেকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এভাবে হাড়ের গঠন ভালোমতো মজবুত হয়। এরও বাইরে আসলে কতগুলো জায়গা আছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর খাবার দাবারের কিছু বিষয় আছে। দুধ এবং দুধ জাতীয় কিছু খাবার আমাদের ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম দুটো উপাদান জোগাড় করে দেয়। এ ছাড়া আমাদের একটু হাঁটা চলা দরকার।
অস্টিওপরোসিসের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হচ্ছে যাদের ওজন খুব বেশি হয়ে গেছে তাদেরও অস্টিওপরোসিস বেশি হয়। আবার দেখা যায় যারা খুবই হালকা পাতলা মানুষেরও বেশি হয়। এজন্য অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধের জন্য বলা হয় আদর্শ ওজন রাখতে হবে। এ ছাড়া কিছু কিছু বিষয় আছে। যারা ধূমপান করেন তাদের অস্টিওপরোসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিশেষ করে পুরুষদের বলব, যারা মদ্যপান করেন তাদের এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। পারিবারিক সূত্রেও এই রোগটি হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তাহলে এই কারণগুলোকে আমরা যদি চিহ্নিত করতে পারি তবেই এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আর যাদের হয়ে গেছে তাদের জন্য বলব চিকিৎসা লাগবে। বাংলাদেশে এর সব ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : যাদের বেলায় অস্টিওপরোসিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, এদের বেলায় কি হাড়ের ঘনত্ব নিরূপণ করার জন্য স্ক্রিনিং করার কোনো উপায় আছে?
উত্তর : এর আরেকটি শব্দ আছে। আমরা বলি প্রিমেনোপোজাল অস্টিওপরোসিস। যদি মহিলাদের কথা বলি। প্রথম কথা হচ্ছে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা কম। দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই্ ধরনের রোগীদের সাধারণত দেখা যায় ভিন্ন কোনো কারণ রয়েছে, কিছু ওষুধ রয়েছে এগুলো খেলে এই রোগ হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যারা খাচ্ছেন তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কিছু বাত জাতীয় রোগ আছে, যেমন আমরা বলি রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস অথবা এনকাইলোজিং স্পনডিলাইটিস। এসব রোগে যারা ভুগছেন তাদের অস্টিওপরোসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত বলা হয়, মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি এই সমস্যা তৈরি করে। তাই এই রোগটিকে নির্ণয় করার কিছু পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে একটি হলো বোন মিনারেল ডেনসিটি। এর ঘনত্ব মাপা যায় একটা পরীক্ষা করলে। ইদানীং আরেকটি পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়। একে বলা হয় ফ্রেক্স মডেল। এটা খুব কম খরচে করা যায়। এখানে কিছু ডাটা রোগীর কাছ থেকে নেব এর পর বলে দিতে পারব যে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা কত।
প্রশ্ন : আর যাদের রোগটি হয়ে গেছে তাদের জন্য চিকিৎসা বা আশার বাণী কী?
উত্তর : অবশ্যই আশার বাণী রয়েছে। এই রোগের চিকিৎসায় এখন অনেক ভালো ভালো ওষুধ বেরিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে। আরো আশার কথা বাংলাদেশে এগুলো এখন সচরাচর পাওয়া যায়। মেনোপোজাল মহিলাদের আমরা বলি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সবসময় খাওয়া লাগবে, অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধের জন্য। যাদের হয়ে গেছে তারাও খাবে। আমরা আগেই বললাম আমাদের এই দিবসের প্রতিপাদ্য হলো হাড়কে ভালোবাসুন। তাই হাড়কে ভালো রাখতে এই কাজটুকু করতে হবে।