মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ মেয়েদের বেশি হয় কেন?
ইউটিআই বা মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ একটি জটিল রোগ। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা মূত্রতন্ত্র সংক্রমিত হয়ে এই রোগ হয়। সাধারণত এই রোগ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেশি হয়।
এর কারণ কী এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪১৯তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. শামীম আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি কিডনি ফাউন্ডেশনের কিডনি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন কী?
উত্তর : কিডনি রোগের জন্য প্রথম যে কারণ, সেটি হলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলার আগে আমাকে বলতে হবে এই ট্র্যাক্টটা কী? আমাদের শরীরের পেছনের অংশে দুই দিকে দুটো কিডনি থাকে। এরপর নালি থাকে। নালির প্রথম অংশে প্যালভিস থাকে। এরপর মূত্রনালি, এরপর মূত্রথলি। তারপর যে রাস্তাটি একে বলা হয় ইউরেথ্রা। প্রস্রাবের যে রাস্তা বের হয়ে আসে সেটি।
আসলে গঠনগতভাবে ট্র্যাক্টটি ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। একটি মজার বিষয় হলো, এটি একদিকে খোলা, আরেকদিকে বন্ধ। সংক্রমণটা কিন্তু নিচ থেকে ওপরের দিকে যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই সংক্রমণটা বাইরে থেকে হয় না। সংক্রমণটা ভাইরাল হতে পারে, ব্যাকটেরিয়াল হতে পারে বা ফাঙ্গালও হতে পারে। কিন্তু জীবাণু দিয়ে যেটি হয়, এটি আমাদের শরীরে পায়ুনালি থেকে আসে।
এ কারণে এই সংক্রমণ পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। এই জীবাণুটা সেখান থেকে এসে প্রস্রাবের রাস্তায় আসবে। আর এটি কোনোভাবে যদি মূত্রথলিতে ঢুকতে পারে, তখন সমস্যা হয়। দেখুন, ছেলে ও মেয়েদের এই যে গঠনগত বিষয়, অর্থাৎ পায়ুনালির গঠন কিন্তু অনেক আলাদা। ছেলেদের পায়ুনালির থেকে প্রস্রাবের রাস্তাটা অনেক দূরে থাকে। কিন্তু মেয়েদের কাছাকাছি থাকে। যেটা হয়, কোনো ক্যাথেডার ঢুকালে বা সহবাসের পর সংক্রমণটা বেশি হয়।
এখন এই জীবাণু ঢুকলেই যে সংক্রমণ হবে, সেটি নয়। কতটুকু জীবাণু ঢুকল, জীবাণুর ক্ষমতাটা কী—এর ওপর নির্ভর করে। আমাদের কিন্তু একটি ক্ষমতা রয়েছে। শরীরে জীবাণু ঢুকল, আমরা প্রস্রাব করে শেষ করে দিলাম। আপনি যদি প্রস্রাবটা আটকে রাখেন, প্রস্রাব না করেন, যেহেতু মেয়েরা অনেক সময় ভালো টয়লেট না হলে প্রস্রাব আটকে রাখে, ওই সময় কিন্তু এই জীবাণুগুলো তৈরি হয়।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করি। আবার তিন থেকে চার ভাগেও ভাগ করতে পারি।
একটি হলো, কিডনির ভেতর যদি সংক্রমণ হয়, একে আমরা পাইলোনেফ্রাইটিস বলি। ব্লাডারে যদি হয় সিস্টাইটিস, ইউরেথ্রায় হলে ইউরেথ্রাইটিস বলি। এগুলো জানা প্রয়োজন। কারণ, ওপরের চিকিৎসা একরকম। নিচের সংক্রমণের চিকিৎসা আরেকরকম।
আরেকটি বিষয় হলো, সংক্রমণটাকে আমরা আরেকটি ভাগে ভাগ করি। একটি হলো জটিল ইউটিআই, আরেকটি হলো কম জটিল ইউটিআই।
জটিল ইউটিআই কখন হয়? যদি আপনার প্রস্রাবের রাস্তা ব্লক হয়, ধরুন, আপনার পাথর রয়েছে অথবা ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট বড় অথবা মেয়েদের কোনো কারণে বন্ধ রয়েছে অথবা মেয়েদের জরায়ুর টিউমার হয়েছে, রাস্তা বন্ধ অথবা তার ইমিউনো সাপ্রেসড- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে তখন সংক্রমণটা জটিল। যাঁরা স্টেরয়েড নিচ্ছেন, যাঁরা ট্রান্সপ্ল্যান্টের রোগী অথবা রেনাল ফেইলিউরের রোগী অথবা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় চলে আসে। সেটি হলো, রিকারেন্ট ইউটিআই বা বারে বারে সংক্রমণ। এটি নির্ণয় করা খুব কঠিন।
আমাদের কাছে যেসব রোগী আসেন, বিশেষ করে স্থূল, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, রেনাল ফেইলিউর রয়েছে, যাঁরা স্টেরয়েড নিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণটা খুব জটিল। সংক্রমণ হলে আমরা প্রথমে রোগ নির্ণয় করার চিন্তা করব।