ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার খাবার কেমন হবে?

Looks like you've blocked notifications!
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা প্রয়োজন। ছবি : সংগৃহীত

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবার-দাবারের প্রতি সব সময় সতর্কতা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার খাবার কেমন হবে, এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ডা. শাহজাদা সেলিম।

বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৩৩তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা ইফতার ও সেহরিতে কী ধরনের খাবার খাবেন?

উত্তর : এ সময় পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বেশি। আবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা গ্লুকোজ কমে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেক বেশি। তাহলে সারা দিন রোজা রাখলে ইফতারের সময় এ দুটো বিষয়ের ওপরই লক্ষ রাখতে হবে। তাহলে অবশ্যই কিছু পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। আবার পানি হলেও দোষ নেই। সাধারণ পানি হতে পারে, শরবত হতে পারে অথবা অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। সেটা ফলের রসও হতে পারে।

ফলের রস খেলে দুটো লাভ হবে। এতে কিন্তু বেশি ক্যালরি রয়েছে। তবে এতে বাড়তি চিনি দেওয়া যাবে না। কেউ যদি ফলের রস পান করেন, তাহলে সেখানে আরো পানি মেশাতে হবে। এতে পানিও পেলেন, কিছু ক্যালরিও পেলেন। অন্য খাবার কিন্তু আমরা এভাবে খেতে পারি। কিন্তু পানি অবশ্যই থাকবে। ডাবের পানিও খেতে পারি আমরা। হয়তো অল্প একটু পান্তা খেল, চিড়া ভিজিয়ে খেল; সেটি কিন্তু অনেক ভালো কাজ করবে না। পানি অবশ্যই খেতে হবে। তবে মুশকিল যেটি হয়, যাঁরা শরবত খান, তাঁরা যদি চিনি দেন, তাহলে কিন্তু ভালো হবে না। শরবত খেলে এক চামচ চিনি যথেষ্ট। তবে সতর্ক থাকার বিষয় হলো বাজারে যেসব চটকদার শরবত পাওয়া যায়, এগুলো কোনোটিই সুস্বাস্থ্যকর এমনটা প্রমাণ করা যায়নি।

তাহলে আমরা বলব, এক চামচ চিনি দিয়ে বাসায় বানানো শরবত খান। খুব সুস্বাদু করার জন্য লেবু দেওয়া যেতে পারে। অথবা বিকল্প হিসেবে কমলা, মাল্টার রস খান। বেলের শরবত খেতে পারেন। এর মধ্যে কিছু পানি দিয়ে তরল করে খেয়ে নিলেন। এটি সবচেয়ে নিরাপদ হবে।

তবে ইফতার কিন্তু শুধু রোজা ভেঙে খাওয়া নয়। বাংলাদেশে এখন ইফতার অন্যতম আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আনুষ্ঠানিকতা করার কারণে খাবারে যেগুলো ঢুকছে, দেখতে সুন্দর, নাম সুন্দর। তবে কাজে কিন্তু অতটা সুন্দর নয়। যেমন ধরুন, খেজুর। একজন ডায়াবেটিস রোগীর ইফতারের সময় একাধিক খেজুর খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্ন : অনেকে একটি খেজুর দিয়ে ইফতার ভাঙেন। সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর : এটি করলে কিন্তু অন্য মিষ্টি খেতে পারবেন না। খেজুর খেলেন, জিলাপিও খেলেন, তা হবে না। কোনো একদিন হয়তো ছোট এক টুকরো জিলাপি খেলেন, শরবত খেলে কিন্তু মিষ্টি পেয়ে গেলেন। তাহলে আলাদা করে আর মিষ্টি খাওয়ার দরকার নেই। তাহলে এগুলোর কিন্তু ভারাসাম্য বজায় রাখতে হবে। আপনি সবই খান। তবে একদিনে সব খেতে পারবেন না। একদিন হয়তো জিলাপি খেলেন, একদিন ফলের রস খেলেন, একদিন খেজুর খেলেন—এভাবে করতে হবে।

তবে মারাত্মক খাবারগুলো হলো বেগুনি, পেঁয়াজু ইত্যাদি। এগুলো একটি খেতে পারে একদিন। তবে সমস্যা হলো আমরা তো অনেকগুলো খেতে চাই।

ইফতারের পর রাতের খাবারে একটি সম্পর্ক থাকবে এখানে। যাঁরা তারাবির নামাজ পড়বেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আর আলাদা করে শারীরিক শ্রম করতে বলা হচ্ছে না। রোজার সময় আমাদের লক্ষ্য কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা নয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করা। আর রক্তের খুব বেড়ে যাবে, এটা থামানো।

কেউ যদি তারাবি সম্পূর্ণটা পড়েন, উনি আগে যে শারীরিক শ্রম করতেন তা নয় কিন্তু। তবে এ অবস্থায় এর চেয়ে বেশি করতে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় লাভজনক হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলি। প্রায় ৮০ শতাংশ, ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন বেশি। তাঁদের ওজন কমাতে হবে। এর জন্য তাঁকে শারীরিক শ্রম বেশি করে করতে হবে। কিন্তু যোগব্যায়ামের কিছু আলাদা সুবিধা রয়েছে। আবার যাদের ওজন ঠিক রয়েছে, তারা এটি বজায় রাখবে। খুব কম সংখ্যক রোগীই রয়েছে, যাদের ওজন কম। তাদের আমরা খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও শারীরিক শ্রম দিয়ে কিন্তু ওজন বাড়াতেও সাহায্য করি।

যদি ছোট তারাবি হয় তাহলে আলাদা করে ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে হবে। কিন্তু অনেকে হয়তো সেহরিতে বেশি খাচ্ছেন, ইফতারে প্রচুর খাচ্ছেন, রাতের খাবারটা বাদ দিচ্ছেন। এটা করা যাবে না।

কোলেস্টেরল নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণ রয়েছে। ডায়াবেটিসের অধিকাংশ রোগীদের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। রোজার পরে খাদ্যব্যস্থাপনা, ওষুধ কেমন হবে সেটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করতে হবে।