শ্বাসকষ্ট কি নিয়ন্ত্রণযোগ্য?
শ্বাসনালির একটি জটিল রোগ ক্রনিক অবসট্রাকটিভ এয়ারওয়ে ডিজিস বা সিওপিডি। এ রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নানা সমস্যা হয় শরীরে। রোগটি পুরোপরি নিরাময়যোগ্য না হলেও এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। আজ ২৪ অক্টোবর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৮৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন শহীদ তাজুদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজের বক্ষব্যধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোশনি জাহান।
প্রশ্ন : সিওপিডি রোগটি আসলে কী এবং কেন হয়?
উত্তর : সিওপিডির পুরো নাম ক্রনিক অবসট্রাকটিভ এয়ারওয়ে ডিজিস। যেটাকে এখন বলা হয় সিওএডি। এটা হলো অনেকদিনের প্রদাহজনিত অতি সংবেদনশীল শ্বাসনালি। শ্বাসনালিতে এই রোগ হয়। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে এর অন্যতম কারণ হিসেবে আমরা ধূমপানকে বলে থাকি।
প্রশ্ন : এটির সাথে শ্বাসকষ্টের সম্পর্ক কতখানি রয়েছে— সেটি আমাদের বুঝিয়ে বলেন?
উত্তর : ক্রনিক অবসট্রাকটিভ এয়ারওয়ে ডিজিজ; এতে শ্বাসনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং সেটা বিভিন্ন কারণে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধূমপান। ধূমপানের গ্যাসগুলো বিব্রতকর বিষয় হিসেবে কাজ করে এবং শ্বাসনালি তখন সংকুচিত হয়ে আসে। রোগী আমাদের কাছে সাধারণত যে উপসর্গগুলো নিয়ে আসে এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তবে যখন হাঁটতে যাচ্ছে বা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাচ্ছে তখন তার শ্বাসকষ্টটা বেড়ে যাচ্ছে। সে হাঁপিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে সাধারণত এসে থাকে।
প্রশ্ন : ধূমপান হচ্ছে এর প্রধান কারণ। এছাড়া আর কোনো কারণে কী এটা হতে পারে?
উত্তর : এ ছাড়া পরিবেশগত দূষের কারণে হতে পারে। যেমন ধোঁয়া থেকে, কিছু রাসায়নিক পদার্থ থেকে এই সমস্যা হতে পারে। আর এখন গ্রামাঞ্চলে মহিলাদেরও বেশি সিওপিডি হচ্ছে।
প্রশ্ন : এটা কেন হচ্ছে?
উত্তর : এর অন্যমত কারণ হচ্ছে মহিলারা যে লাকড়ির চুলা ব্যবহার করে, সেই ধোঁয়া থেকে যে বায়োগ্যাস, সেটা যখন শ্বাসের মাধ্যমে যায় তখন শ্বাসনালিটা সংকুচিত হয়ে যায়। তখন শ্বাসকষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যায় করণীয় কী? প্রাথমিক অবস্থায় কি জানা সম্ভব রোগী সিওপিডিতে আক্রান্ত?
উত্তর : যেকোনো রোগেরই প্রথম শুরুটা যখন হয়, যদি একটি ধারণা থাকে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমি হাঁটতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছি এবং সেই রোগী যদি ধূমপান করে। এ জাতীয় সমস্যা হলে তখন যদি উনি চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসক পরীক্ষা নীরিক্ষা করলে রোগের জটিলতা থেকে অনেক রেহাই পাওয়া যাবে। আরেকটি হলো যেসব কারণে এই রোগ হয়, সেটি বন্ধ করলে রোগ কমে যাবে। যেমন ধূমপানের কারণে এই রোগ হয়। এটি যেদিন থেকে ছেড়ে দেবে সেদিন থেকেই উপকার হবে। যে শ্বাসনালিগুলো সংকুচিত হয়ে সিওপিডি বাড়ে সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই এটা একটা বিরাট উপকার। এটি মাথায় রাখা হলে রোগটি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন : যেহেতু ধূমপানের কারণে এই রোগ হচ্ছে তাহলে এটি কী প্রতিরোধযোগ্য?
উত্তর : অবশ্যই এটি প্রতিরোধ যোগ্য। চিকিৎসা থেকেও এটি উপকারী। যেহেতু ধূমপানের কারণে এই রোগ হচ্ছে, তখনই যদি ধূমপান ছেড়ে দেয় তাহলে ভালো হয়। তবে ধূমপানের ক্ষেত্রে আমি আরেকটি জিনিস বলে রাখব, যিনি করছেন শুধু সমস্যাটি তার জন্য নয়, তার আশপাশে যে ছোট বাচ্চা তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি একটি বিরাট ব্যাপার। ব্যক্তি নিজে নিজের ক্ষতি করছে এবং আশপাশে যারা আছে, যারা নিরীহ তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রশ্ন : এই রোগে চিকিৎসা আপনারা কী দিয়ে থাকেন? এবং সত্যিকার অর্থেই পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব কি না?
উত্তর : যেহেতু এর কোনো কারণ জানা যায়নি, তাই এটা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে আমরা এটা বলব না। এটি যথেষ্ট জটিল একটি রোগ। তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সিওপিডি আমাদের শরীরের অনেক অঙ্গপ্রতঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। শ্বাসতন্ত্র থেকে দেখা যায় এটি হার্টকে আক্রান্ত করেছে। তখন রোগীর নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। পা ফুলে যায়, বুক ধরফর করে, লিভার বেড়ে যায়। এ রকম করে রোগ ক্রমাগত বাড়তে থাছে। রোগটি যেকোনো অঙ্গপ্রতঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে।
প্রশ্ন : আমরা যতটুকু জানি, এই রোগ কবরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এতটাই জটিল। এর জন্য ধূমপান যেহেতু প্রধান কারণ, তাই তাদের জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন, যাতে এই রোগে আক্রান্ত না হয়?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে আমি বলব, একার পক্ষে বিষয়টি সম্ভব নয়। সবাই মিলে যদি এই বিষয়ে সচেতন থাকি তাহলে এটা নিরাময়যোগ্য। আর ধূমপানের কারণে কেবল সিওপিডি নয়, সিওপিডি থেকে একটা সময় দেখা যায় ফুসুফুসের ক্যানসার হয়ে গেছে। ধূমপানে আমি কেবল নিজের ক্ষতি করছি না। অন্যেরও ক্ষতি করছি। এই জন্য সামাজিক একটি সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করব। সচেতন হবো। মৃত্যুর ঝুঁকি তো এই রোগে আছেই, বেঁচে থাকা অবস্থায়ও যে কী কষ্ট হয়, সেটা হলেই বুঝতে পারবে। তখন তো আর কিছু করার থাকে না। কাজেই সময় থাকতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশ্ন : যাদের এই রোগ হয়ে গেছে তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনারা কী পরামর্শ দিয়ে থাকেন?
উত্তর : যখন হয়ে যায় ওই অবস্থায় আমরা ধারণা করি ফুসফুসটা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তার ফুসফুসের কার্যক্রম কতটুকু আছে। আমাদের চেষ্টা থাকে তার উপসর্গগুলোর উপশম করার। তাকে আরাম দেওয়ার জন্য কিছু ওষুধ দেই। যেমন ইনহেলার। আর যখন তার প্রকোপ বেড়ে যায়, তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং নির্দেশিত নিয়মে ওষুধ খেতে হবে। তার মধ্যে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে। এটি দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা। অত্যন্ত ধৈর্য নিয়ে যারা মেনে ওষুধ খাবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলবে, তারা কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারবে।