থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কী?

থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এটি দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৪৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
বর্তমানে তিনি স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : থাইরয়েড কী, এই গ্রন্থির কাজ কী?
উত্তর : থাইরয়েড হলো থাইরয়েড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিটা আমাদের গলার সামনের দিকে প্রজাপতির মতো থাকে। এর দুটো লুপাস থাকে। এর কাজ হলো থাইরয়েড হরমোন সৃষ্টি করা। হরমোনের বিষয়ে আমরা জানি। একে বলা হয়, মাস্টার অব মেটাবলিজম। অর্থাৎ আমাদের শরীরে যত রকমের ক্রিয়া-বিক্রিয়া হচ্ছে, আমাদের খাবারের ক্রিয়া-বিক্রিয়া হচ্ছে, এটি এই মেটাবলিজমটা নিয়ন্ত্রণ করে। এই মাস্টার গ্রন্থি থাইরয়েড। এর মানে, অনেক বড় একটি ভূমিকা রয়েছে এর। এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে। পিটুটারি ও হাইপোথেলামাস থেকে। হাইপোথেলামাস থেকে পিটুইটারি, পিটুইটারি থেকে থাইরয়েড।
থাইরয়েড হরমোনের কাজ হলো শরীরের বিপাককে ব্যবস্থাপনা করা। আমরা যে আয়োডিন খাচ্ছি, এটি দিয়ে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়। আয়োডিনের ঘাটতির জন্য যেটি হয়, একে গয়েটার বলা হয়। আয়োডিন সমৃদ্ধ লবণের অভাবে দেখা যাচ্ছে, গলা ফুলে যাচ্ছে, গলগণ্ড হচ্ছে। তবে এটি এখন কমে গেছে। কারণ, এখন আয়োডিনসমৃদ্ধ লবণ বাজারে এসেছে।
থাইরয়েডের সমস্যাগুলোকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো, হরমোনের আধিক্য, আরেকটি হলো হরমোন কম বের হওয়া। আরেকটি হলো থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। ফুলে যাওয়ার গলগণ্ডের কারণে হতে পারে। অথবা একটি টিউমারের কারণে হতে পারে। একটি নডিউল হতে পারে, আবার ক্যানসারও হতে পারে। এগুলো হলো ফুলে যাওয়া। সুতরাং কারো যদি ফোলা থাকে, এটি আধিক্যর জন্য হতে পারে আবার কমের জন্য হতে পারে। আবার কখনো সিম্পল এডিনোমার জন্য হতে পারে। প্রচলিতগুলো হলো, হরমোনের আধিক্যের জন্য। অথবা হরমোন কমের জন্য। অর্থাৎ হাইপার থাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। হাইপার মানে বেশি, হাইপো মানে কম। এটি থাইরয়েডের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
হাইপার যখন হবে, যখন হরমোন বেশি বের হবে, আপনার শরীরের মেটাবলিজমটা বেড়ে যাবে। এর মানে, আপনি যে খাবার খাচ্ছেন, সেটি মেটাবলাইজ হবে খুব তাড়াতাড়ি। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হবে। এই রোগীগুলোর কী হয়? তারা শুকোতে থাকে। খায় বেশি, শুকাতে থাকে বেশি। তাদের অনেক ঘাম বের হয়। তাদের চোখগুলো খুব বড় বড় দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যাবে গলায়, ঘাড়ে একটু ফোলা ফোলা ভাব রয়েছে। এই রোগীগুলো খুব নার্ভাস থাকে। তারা ঘুমাতে পারে না। সাধারণত বাউয়েল মুভমেন্ট বেশি হয়। তারা খাচ্ছে, কিন্তু ওজন কমে যাচ্ছে, ঘুম হচ্ছে না। খুব বিরক্তিবোধ করে, শরীরে ঘাম হয়। গরম সহ্য করতে পারে না। তারা চিকন হয়ে যায়। এটি হাইপার অ্যাকটিভিটির কারণে হয়। আপনি যেই খাবার খাচ্ছেন, হরমোন একে দ্রুত শেষ করে দিচ্ছে। মানে একে মেটাবলাইজ করে দিচ্ছে। এতে শরীরে ঘাটতি হচ্ছে। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
আর হাইপো যেটি, সেটি কিন্তু এর বিপরীত। অর্থাৎ আপনার হরমোন কম বের হচ্ছে। তখন কী হবে? আপনি ঠাণ্ডায় স্পর্শকাতর হবেন। আপনি ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারবেন না। আপনি মুটিয়ে যাবেন। আপনার শরীরের চামড়াগুলো শুষ্ক হয়ে যাবে। অনেকের পায়ে পানি আসে। তবে যদি আপনি চাপেন, দেখা যাবে দাবছে না। আপনার মস্তিষ্কের মেধাশক্তি কমে যাবে। অর্থাৎ অনেকটা বোকার মতো হয়ে যাবেন। মুখের কিছু পরিবর্তন হবে। আপনার ভ্রু পড়ে যাবে, চুল পড়ে যাবে। আপনি গর্ভধারণ করতে পারবেন না।