শিশুর মাম্পস হলে কী করবেন?
মাম্পস বা প্যারটাইটিস এক প্রকারের ভাইরাস জনিত ছোঁয়াচে রোগ। এটি ভাইরাস দিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে বলে সংক্রমণের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির কানের কাছের প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায়।
পৃথিবীজুড়ে শিশুদের মধ্যে এই রোগ হয়ে থাকে। তবে যেকোনো বয়সে মাম্পস হতে পারে। সাধারণত মাম্পস নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের প্রদাহ , এনকেফালাইটিস, শ্রবণশক্তিতে সমস্যা, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভবতী নারীর মাম্পস হলে এ থেকে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কারণ
সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংক্রামক উপাদান মুখের লালার মাধ্যমে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি দিলে কিংবা সর্দি ঝাড়লে এর সূক্ষ্ম কণাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য ব্যক্তির নাক, চোখ কিংবা মুখ দিয়ে ভিতরে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়। এ ছাড়া খাবার ও পানীয় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভাগাভাগি করার মাধ্যমেও মাম্পস ছড়ায়।
লক্ষণ
মাম্পসের প্রধান লক্ষণ হলো, জ্বর ও দুই গালে (কানের একটু সামনের অংশে) বা একদিকের পেরোটিড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও তাতে ব্যথা অনুভূত হওয়া, বিশেষ করে কিছু চিবানোর সময়। এটা একপাশে হতে পারে, কিন্তু সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রায় ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে দুপাশই ফুলে থাকে। জ্বর, মাথাব্যথার সঙ্গে গলা ব্যথা, ভালো করে মুখ খুলতে না পারা, ঢোক গিলতে ও খেতে ভীষণ কষ্ট হওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ।
চিকিৎসা
মাম্পস ভাইরাস ঘটিত রোগ হওয়াতে নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। টিকার মাধ্যমে মাম্পস প্রতিরোধ করা যায়। তবে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা, যেমন : জ্বর ও ব্যথার জন্য ওষুধ দিতে হবে এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া প্রয়োজন। মাম্পসে আক্রান্ত শিশুর যত্ন নিতে হবে।
ব্যথার কারণে এ সময় শিশুরা খেতে চায় না। তাই বেশি করে তরল, সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। পানিস্বল্পতা যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাম্পস হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। ব্যথা ও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল সেবন করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিভাইরাল দেওয়া যেতে পারে।
আক্রান্ত শিশুকে এ সময় ঘরে রাখাই ভালো। হালকা গরম লবণপানি দিয়ে গরগরা করতে হবে। শিশুসহ পরিবারের সবার ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানতে হবে। মাম্পসে জটিলতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে ভুলবেন না।
লেখক: সভাপতি ,বিশুদ্ধ খাদ্য চাই এবং সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।