লিভার ক্যানসারের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?

Looks like you've blocked notifications!
লিভার ক্যানসারের চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা. সেলিমুর রহমান ও ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

ক্ষুধামান্দ্য, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, রক্তবমি ইত্যাদি লিভার ক্যানসারের লক্ষণ। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস, সিরোসিস ইত্যাদি লিভারের ক্যানসারের কারণ।

লিভার ক্যানসারের অনেক আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে এসেছে। লিভার ক্যানসারের চিকিৎসায় করণীয় কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫২৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সেলিমুর রহমান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : লিভার ক্যানসারের চিকিৎসা কী?

উত্তর : আমরা যদি আগেভাগে রোগ নির্ণয় করতে পারি, আমি বলেছিলাম এটি নিরাময়যোগ্য। যেমন, রুটিন চেকআপে আপনি ছোট্ট একটি লিশন পেলেন, রক্তের মাধ্যমে। রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে আলফাপেটো প্রোটিন আমরা পরীক্ষা করে থাকি। এ ছাড়া বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষাগুলো করি এবং প্রয়োজনে কোনো কোনো সময় এফএনএসি করি। যে টিউমারটা সন্দেহজনক ক্যানসার, এখান থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়। এভাবে যদি আমরা ক্যানসার শনাক্ত করতে পারি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিন্তু এফএনএসি করার প্রয়োজন পড়ে না। আগেই আমরা বলতে পারি। আমরা যদি শনাক্ত করি, এটি যদি ছোট থাকে, এটা পাঁচ সেন্টিমিটারের নিচে যদি থাকে, তাহলে আপনি একে রিসেকশন করতে পারেন। যেটা হয়েছে সেটি পুরোপুরি ফেলে দিলেন। লিভারের পুনরায় তৈরি হওয়ার ক্ষমতা খুবই বেশি। আপনি কেটে দেওয়ার পরও আবার ভরাট হয়ে যাবে। এটি স্বাভাবিকভাবে রয়ে যাবে।

যদি দেখা যায়, সার্জারি করা যাচ্ছে না বা রোগী সার্জারি করতে চাচ্ছে না, তাহলে আমাদের আরো কিছু চিকিৎসা রয়েছে। আমরা আগে কিছু কিছু রোগীকে অ্যালকোহল ইনজেকশন দিতাম। অ্যালকোহল ইনজেকশন দিয়ে টিউমারকে ধ্বংস করা যায়। এটাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা করে থাকি। তবে এর চেয়ে আরো উন্নত যে চিকিৎসা রয়েছে, আমরা আরএফএ বলি, রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি অ্যাবুলেশন, মানে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি দিয়ে টিউমারকে ধ্বংস করা- মাইক্রোওয়েবের মাধ্যমে টিউমারকে ধ্বংস করা-এগুলো করি। এগুলো কিন্তু এখন আমাদের দেশে করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা টিউমারকে ধ্বংস করতে পারি। যদি দেখা যায় টিউমারটা আরেকটু বড় হয়ে গেছে, এটা করা যাবে না, তাহলে, ট্রেইস একটি পদ্ধতি রয়েছে, সেটি করি। আপনি জানেন যে আমরা যদি সিস্টেমিক পদ্ধতিতে ক্যামো দেই, সারা শরীরেই ক্যামোটা যায়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হয়, কার্যকারিতাও ভালো হয়। যেই আর্টারি দিয়ে টিউমারটা যায়, সেখানে ক্যাথেডারের মাধ্যমে গিয়ে আমরা ক্যামো দিতে পারি। নির্দিষ্ট অংশগুলোতে আমরা ক্যামো দিতে পারি। ওখানে ট্রান্স আর্টারিয়াল ক্যামো অ্যাম্বুলাইজেশন হয়। অ্যাম্বুলাইজ করলে দুটো লাভ হবে। একটি হলো রাসায়নিকটা, ক্যামোথেরাপিটা সেখানে থাকবে। কার্যকরিতা ভালো হবে। এর মানে টিউমারটা পুষ্টি কমে যাবে। টিউমার ছোট হয়ে যাবে। এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। এটা সারা দুনিয়াতে করা হয়। আমরাও কিন্তু আমাদের দেশে এ পদ্ধতিতে টিউমারের চিকিৎসা করে থাকি।

প্রশ্ন : লিভার থেকে ক্যানসার অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে করণীয় কী?

উত্তর : যদি অন্যান্য অঙ্গে না ছড়িয়ে থাকে, তাহলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে আমরা এর চিকিৎসা করতে পারি। এটি একটি স্বীকৃত পদ্ধতি, এটি সফলভাবে করা হয়। তবে খুব ভালোভাবে আপনাকে দেখে নিতে হবে যে টিউমারটা অন্য কোনো জায়গায় ছড়িয়েছে কি না উন্নত পরীক্ষার মাধ্যমে। যদি ছড়িয়ে থাকে, তাহলে রোগীর চিকিৎসা করা খুবই কঠিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা তখন লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকি। উপসর্গগুলোকে কিছুটা কমানোর জন্য চিকিৎসা করি। এই ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য চিকিৎসা খুব কঠিন। অনেকে কিছু সিস্টেমিক ক্যামো ব্যবহার করে। তবে খুব বেশি কার্যকর হয় না।