খেলাধুলায় চোট ও প্রতিকার

Looks like you've blocked notifications!
ডা. মোহসিন কবীর।

খেলার সময় বিভিন্নভাবে খেলোয়াড়রা চোট পেয়ে থাকেন। চোট পাওয়ার পর সেটা সারাতে একটি বড় ভূমিকা রাখে ফিজিওথেরাপি। আজ ১১ নভেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২০২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড ঢাকার কনসালট্যান্ট অ্যান্ড মেডিকেল ইনচার্জ ফিজিওথেরাপি ডা. মোহসিন কবীর।

প্রশ্ন : আমরা প্রায়ই খেলার সময় খেলোয়াড়দের আহত হওয়ার কথা শুনি। তার পর এঁদের খেলা থেকে বিরতি দিতে হয়। এর পর মাঠে ফিরে যান। এই সুস্থ হওয়ার সময় ফিজিওথেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। স্পোর্টস ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা কী?

উত্তর : স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি ফিজিওথেরাপির একটি বড় অংশ। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফিজিওথেরাপি। আরেকজন খেলোয়াড় যখন আহত হয়ে যায়, একজন খেলোয়াড়ের প্রধান সম্পদ তার পেশির শক্তি। একজন খেলোয়াড় এবং একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাৎ হলো পেশির শক্তিতে। পেশির শক্তি যার যত বেশি থাকবে, সে তত মাঠে বেশি শ্রম দিতে পারবে। শক্তি দেখাতে পারবে। কারণ খেলা একটি শক্তিরও বিষয়।

খেলোয়াড়রা যখন মাঠে খেলে, তখন পেশিতে ব্যথা হবেই। পেশির আহতের চিকিৎসার মূল চিকিৎসাই হলো ফিজিওথেরাপি। কারণ, এখানে রোগীদের ব্যথার ওষুধ সেভাবে ব্যবহার করা যায় না। যেহেতু ব্যথার ওষুধ খাওয়ানো যাচ্ছে না, তাই তার পেশি বা গাঁটগুলো আবার নড়াচড়া করার জন্য ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন পড়ে।urgentPhoto

প্রশ্ন : একজন খেলোয়াড় সাধারণত কীভাবে আহত হয়?

উত্তর : ফুটবল খেলাতে একটি প্রচলিত চোট হলো হাঁটুতে ব্যথা পাওয়া। হাঁটুতে অ্যান্টেরিয়র ক্রসিয়াল লিগামেন্ট ইনজুরি হয়। আর মেনিস্কাস ইনজুরি হয়। এ দুই ধরনের আহত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে ফুটবল খেলোয়াড়দের। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশিতে আঘাত পায়। এটা না বললেই নয়, যেকোনো খেলা, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টন যেটাই বলেন না কেন, খেলার আগে অবশ্যই একজন খেলোয়াড়কে ওয়ার্মআপ করতে হয়। খেলা শেষে তাঁকে আবার পেশিকে শিথিল করতে হয়। যে খেলোয়াড়রা ওয়ার্মআপ এবং কুলডাউন বিষয়টি ঠিকমতো না করে, তারা সাধারণত আহত হয়। কারণ প্রতিটি গাঁটেরই একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেচ আছে। স্ট্রেচগুলো প্রতিদিনই ঠিক রাখতে হয় ওয়ার্মআপ করে, খেলার আগে। আমি ওয়ার্মআপ করলাম না, মাঠে খেলতে নেমে গেলাম। হঠাৎ করে পেশিতে টান লেগে যেতে পারে। গাঁটের লিগামেন্টে সমস্যা হতে পারে। এর সঙ্গেও পেশিযুক্ত। আমার পায়ের পেশি যদি শক্ত না হয়, তখন যখন দৌড়াব বা বলে জোরে একটি লাথি মারব, সেই চাপ গিয়ে পড়ে সরাসরি গাঁটের ওপর। তখন পুরোপুরি গাঁটের গঠনের ওপর চাপ পড়ছে। এই গঠনে যা যা রয়েছে, সেখান থেকে যেকোনো কিছুই আহত হতে পারে। যেমন : মেনিস্কাস বা লিগামেন্ট যেকোনো কিছুকে আক্রান্ত করতে পারে।

আর ক্রিকেটে বলার যাঁরা, তাঁদের দ্রুতগতিতে হাতকে নাড়াতে হয়। তাঁদের হাতে পেশিগুলোকে শক্তিশালী করতে হয়। পেশির গঠনগুলোতে প্রায় কাছাকাছি। সব লিগামেন্ট দিয়ে জোড়া লাগানো। ফুটবল বা ক্রিকেট খেলোয়াড় সবারই আলাদা আলাদা পেশির কাজ করতে হয়। পেশি এবং লিগামেন্টকে মাঠের জন্য প্রস্তুত রাখতে হয়। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট গাইডলাইন দেবেন। তাঁরা বলবেন, কীভাবে পেশিগুলোকে শক্ত রাখতে পারে। আর খেলোয়াড়রা সে অনুযায়ী তাদের কাজগুলো করবে। এমনকি যখন বাড়িতে থাকবে, তখনো তাকে পেশি ও গাঁটের ব্যায়ামগুলো করতে হবে। নয়তো যখন সে ফিরবে, তখন ঠিক করতে অনেক সময় লাগবে। নয়তো সমস্যা হয় তখন।

প্রশ্ন : যদি আহত হয় তখন তো কখনো কখনো তার সার্জিক্যাল ইন্টারভেনশন বা লিগামেন্ট পুনর্গঠন এসবের দরকার হয়। আপনারা কোন অবস্থায় কী কী দেখে ঠিক করেন এখানে সার্জারি লাগবে, নাকি শুধু ফিজিওথেরাপি দিলেও হবে? এবং কী ধরনের ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করেন?

উত্তর : যখন হাঁটুর গাঁট আহত হলো, তখন কিছু নড়াচড়ার পরীক্ষা আছে যেটা প্রাথমিক পর্যায়ে করা হয়। সেটা করলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় তার কোন অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিগামেন্ট, মেনিস্কাস, নাকি পেশি। এর পর তাকে এমআরআই করতে দেওয়া হয়। এমআরআইতে যদি দেখা যায়, লিগামেন্ট ছিঁড়েই গেছে বা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে, যদি ২০ থেকে ৩০ ভাগও ছিঁড়ে যায়, তখন সেখানে অবশ্যই সার্জারি করতে হবে। তখন আমরা সার্জারি বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফার করি। সেখান থেকে তারা সার্জারি করে আমাদের কাছেই আসে। কারণ সার্জারির পর আবার ফিজিওথেরাপি দিয়ে তাকে আবার প্রস্তুত করতে হয় মাঠে নামানোর জন্য। যদি একজন খেলোয়াড় ফিজিওথেরাপি সঠিক সময়ে না নেয়, সার্জারির পর আবার আহত হবে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বিশাল অংশ। এখনো আমাদের দেশের মানুষ এর সম্বন্ধে নানা ধরনের ধারণা পোষণ করে। ফিজিওথেরাপি একটি বিশাল অংশ, ইলেকট্রোথেরাপি হলো ফিজিওথেরাপির একটি অংশ। আধুনিক ফিজিওথেরাপিতে ইলেকট্রোথেরাপি আমি ব্যবহারই করব না। খেলার ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন হয় আলট্রাসাউন্ড থেরাপি। আর আধুনিক ফিজিওথেরাপিতে সবই হয়ে যাচ্ছে ম্যানুয়াল। আমাদের কিছু ম্যানুয়াল পদ্ধতি রয়েছে এগুলো দিয়ে করি।

প্রশ্ন : ম্যানুয়াল পদ্ধতি মানে কী? তাকে কি কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয়, করিয়ে দেওয়া হয়?

উত্তর : ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, একজন ফিজিওথেরাপিস্টের হাতগুলোই প্রধান হাতিয়ার। এর ওপর আর কিছু নেই। মানুষ ভাবে, ফিজিওথেরাপি মানে আলট্রাসাউন্ড দিতে হবে। লাল আলো দিতে হবে। তবে এগুলো মানেই ফিজিওথেরাপি নয়। আধুনিক ফিজিওথেরাপি মানেই ম্যানুয়াল। এর নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। ফিজিওথেরাপিস্ট তার হাত দিয়ে নড়াচড়ার আছে, সেগুলো ঠিক করে দিতে হবে। আধুনিক ফিজিওথেরাপিতে ড্রাই নিডেলিং বলে একটি বিষয় রয়েছে, আকুপাংচারের মতো অনেকটা। পেশিতে স্পাজম থাকলে সেগুলো ভেঙে দিতে হয়। ফিজিওথেরাপি এখন অনেক আধুনিক হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে এখন আমারা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরাও এখন সর্বাধুনিক ফিজিওথেরাপি দিতে সক্ষম।