বিয়ের আগে কীভাবে ত্বক উজ্জ্বল করবেন? জেনে নিন
নিজের বিয়ে হোক বা যেকোনো উৎসব হোক, সবাই চায় নিজেকে একটু সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে। আর নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর ক্ষেত্রে সবার আগে যা চাই তা হলো সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক। আর এটি কীভাবে সম্ভব?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৪৮তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারিয়াল হক। বর্তমানে তিনি বনানী প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, বনানীতে চর্ম ও যৌন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বিয়ের সময় বা উৎসবের দিনে যেন ত্বক দেখতে ভালো লাগে, সে ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর : আসলে সামনে তো বিয়ের মৌসুম। আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, নিজের বিয়েই হোক বা আত্মীয়স্বজনের বিয়ে, খুব শপিংয়ে ব্যস্ত থাকি। বাসার বাইরেই বেশি থাকা হয়। দেখা যায়, ত্বকের ওপর আমরা এতটা গুরুত্ব দিই না। বাইরে ঘুরছি, ফিরছি সূর্যের আলোতে। ক্লান্ত থাকছি অনেক। বিশ্রাম ঠিকমতো হয় না। সাধারণত আমরা বলি যে এই অনুষ্ঠানের দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে আসবে। এতে সম্পূর্ণ একটি জীবনযাপন আমরা তৈরি করে দিতে পারি, যাতে যতই দৌড়াদৌড়ি, শপিং থাকুক না কেন, বিশেষ ওই দিনটিতে ত্বকটা উজ্জ্বল দেখায়।
এই ক্ষেত্রে কেউ আমাদের কাছে এলে তিনটি পথে আমরা পরামর্শ দিই। এর মধ্যে প্রথম যে পথ, সেটি হলো, তার জীবনযাপনের ধরন। এর মধ্যে অবশ্যই থাকছে ডায়েট, এরপর ব্যায়াম, এর মধ্যেই থাকছে নিয়মিত ত্বকের যত্ন। সাধারণত তিন মাস আগে থেকে হলে আমাদের সেই পরামর্শগুলো দিতে সুবিধা হয়।
যদি কেউ ১৫ দিন আগে এসে বলে, আমার ত্বকের এই অবস্থা, বড় বড় ব্রণ হয়েছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে, এটি কোনোভাবেই সরানো সম্ভব নয়। বিয়ের দিন হয়তো মেকআপ করে ঢেকে ফেলা যায়। তবে মুখ ধোয়ার পরে ত্বক ম্লান দেখাবে। এই জন্য অবশ্যই দুই থেকে তিন মাস আগে আসতে হবে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে।
নিজের সচেতনতা থেকেই এটি করতে হবে।
প্রথমত, আমরা তিনটি পথে তাকে ব্যবস্থাপনা করি। প্রথম যেই পথটা আমরা তাকে দিই, সেটি হলো জীবনযাপনের ধরন। জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে। যেহেতু আমরা দৌড়াদৌড়ি করব, অনেক ঘাম হবে। ডায়েট করতে হবে। ডায়েটের মধ্যে ফলমূল, সবজি থাকবে। ফাস্ট ফুডটা কমিয়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট কোনো খাবার কি রয়েছে, এই তিন মাসে আপনারা বেশি দেন?
উত্তর : গাজর আর কমলা আমরা খেতে দিই। এ দুটো খুব দ্রুত ত্বকের উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে। এরপর হলো কাঠবাদাম। এ দুটো খুব দ্রুত ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে।
এই ধরনের খাবারগুলো আমরা খেতে বলি। আর ক্যাফেইন কমাতে বলি। যদিও আমরা বলি আমার ঘুম পাচ্ছে, কফি না পান করলে হয় না, চা না পান করলে হয় না। একদম এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও অল্প পান করতে হবে। এই ধরনের পরিবর্তনগুলো আমরা ডায়েটে আনতে বলি।
ব্যায়ামের কথা তো আমি সবাইকে বলি, সব সময়। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা ব্যায়াম খুব জরুরি। আর ঘুম খুব জরুরি। রাতে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
এগুলো গেল জীবনযাপনের ধরনের মধ্যে। আর একটা সম্পূর্ণ রুটিন করে দিই আমরা। বলে দিই, এটি কীভাবে নেবে? ক্লিনজিং তো অবশ্যই দরকার। যদি কারো শুষ্ক ত্বক হয়, এ ক্ষেত্রে আমরা বলি খুব হালকা একটি সাবান ব্যবহার করতে। সোপ ফ্রি ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। এটা আমরা ব্যবহার করতে বলি। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের আমরা বলি জেলসমৃদ্ধ ক্লিনজার ব্যবহার করতে। ময়েশ্চারাইজার যেটা ব্যবহার করবে, সেটিও আমরা ত্বক অনুযায়ী পরামর্শ দিই। টোন অবশ্যই করতে হবে। দ্বিতীয়ত আমরা যেটি করি, কিছু ওষুধ দিই।
প্রশ্ন : ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, টোনিং কখন করতে হবে, সেটিও কি বলে দেন?
উত্তর : এগুলোর সব পরামর্শ আমরা দিয়ে দিই। ক্লিনজিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা বলি দিনে দুই থেকে তিনবার করতে হবে। যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে হবে। আর তৈলাক্ত ত্বক হলে রাতে একবার করে অন্তত লাগাতে হবে। আর টোনিংটা রাতেই করতে বলা হয়, একটা ভালো টোনার দিয়ে। ত্বক অনুযায়ী টোনার কী হবে, সেটিও বলে দিই।
এরপর আসছে ওষুধ। এ ক্ষেত্রে ভয়ংকর কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। এখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুরু করে দেওয়া হয়। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। সাপ্লিমেন্ট শুরু করার এক মাসের মধ্যে কিন্তু কোনো ফলই পাওয়া যায় না। তাই আমরা বলি দুই থেকে তিন মাস আগে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে আসো। যখন সাপ্লিমেন্ট শুরু করা হয়, দুই থেকে তিন মাস লাগে এর কাজ করতে। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কিছু সাপ্লিমেন্ট রয়েছে। ফর্সা ত্বকের জন্য, ব্রণ প্রতিকারের জন্য। শেষ পর্যন্ত কিছু জাদুকরি পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : এসব পদ্ধতি কী?
উত্তর : এর মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো, মেকানিক্যাল ডার্মাব্রেশন। একটি মেশিন থাকে, সেখানে ডায়মন্ড প্রোপ থাকে। এর মাধ্যমে আমরা কোলাজেনকে উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করি। কোলাজেন যখন উৎপাদন হওয়া শুরু হয়, তখন এমনিতেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকে। ৫ থেকে ১০ মিনিটের একটি পদ্ধতি।
তবে যাদের ব্রণ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আমরা এটি করতে পারি না। ত্বক যাদের অনেক শুষ্ক, তাদের ক্ষেত্রে করতে পারি না। আর এর থেকেও ভালো একটি চিকিৎসা হলো কেমিক্যাল পিলিং। কেমিক্যাল পিলটা ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব পছন্দের একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে থাকি। বিভিন্ন ধরনের এসিড রয়েছে এর মধ্যে। এই জন্য চিকিৎসকরা আমরা ঠিক করি কার জন্য কোনটি ভালো হবে। ১৪ দিন পর পর এই পদ্ধতিটা ব্যবহার করা হয়। এর জন্যও তিন মাস হাতে ধরে রাখতে হয়।
প্রশ্ন : বিয়ের পর বা অনুষ্ঠানের পরেও কি আপনারা এই উজ্জ্বলতাটা ধরে রাখতে পরামর্শ দেন?
উত্তর : কিছুই কিন্তু স্থায়ী নয়। আমি যেটি যত্ন করছি, সেই যত্নটা যখন ছেড়ে দেব, আবার যা সেটাই হয়ে যাবে। কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। ত্বকের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আমি করছি এবং এটাই ব্যবস্থাপনা করে চলতে হবে।
প্রশ্ন : সেই ব্যবস্থাপনা করার জন্য বাকি সময়গুলোতে ভালো থাকার জন্য কী পরামর্শ আপনারা দেন?
উত্তর : উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তখন হয়তো দুই সপ্তাহে বা প্রতি সপ্তাহে আপনার নাও আসা লাগতে পারে। হয়তো বা মাসে একবার করে আপনি এলেন। পরামর্শ নিয়ে গেলেন, কী খাবার খাবেন, কী ধরনের জীবনযাপন করবেন।
আমি চিকিৎসক, শুধু ত্বকের কিছু বিষয় দিয়ে দিলাম তা নয়। একটা মানুষ আমার কাছে যখন আসবে, আমার সবকিছু দেখতে হবে। হরমোনের কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, মানসিক কোনো দুশ্চিন্তা রয়েছে কি না। কিছু কিছু উৎস তো সেগুলোই।
যেমন ধরুন, কারো ব্রণ হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের ব্রণ এখন খুবই প্রচলিত। ব্রণের পেছনে কারণ কী? দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ। এবং বিভিন্ন ধরনের মেকআপ করার পণ্য ব্যবহার করা। আমাদের কারণটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। আমার উজ্জ্বলতা এলো, তবে কেন থাকছে না, এর জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সমস্যাগুলো যদি আমরা খুঁজে বের করতে পারি এবং কারণ অনুযায়ী সমাধান করতে পারি, তাহলে আপনার ত্বক কেন ভালো থাকবে না।
প্রশ্ন : চুল পড়ার সমস্যাও কিন্তু থাকে। বিয়ে আগে এ সমস্যাটা সমাধান করতে অনেকে চাইবে। সে বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : চুলের জন্য আমাদের অনেক চিকিৎসা থাকে। যেমন ধরুন, মিনোক্সিডিলের পরামর্শ দিতে পারি আমরা। সাপ্লিমেন্ট খেতে দিতে পারি। এরপরও যদি কাজ না হয়, আমরা পিআরপি করি।
পিআরপি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। রোগী আসবে। কেবল আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে আসতে হবে। রক্ত নেওয়া হবে রোগীর। রক্ত থেকে প্লাজমাকে, প্লাটিলেটকে আলাদা করি। কেবল ইনসুলিন সিরিঞ্জের মাধ্যমে আমরা স্ক্যাল্পে দিই। এটি খুব ছোট সুই দিয়ে করা হয়। শুধু স্ক্যাল্পের ত্বক পর্যন্ত যায়। এতে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। তবে পিআরপির জন্য আমি বলব, অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস হাতে নিয়ে আসতে। দু-তিন মাসের মধ্যে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আসে না।
প্রশ্ন : যে বয়সই হোক না কেন, শরীরচর্চা খুব উপকারী। সে বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর : অবশ্যই প্রয়োজনীয়। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্যায়াম। আমি মনে করি, অন্তত এক ঘণ্টা নিজের ব্যায়ামের জন্য সময় রাখা উচিত।
প্রশ্ন : বিয়ের আগে শরীর ফিট রাখার জন্য কী কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত?
উত্তর : কার্ডিয়াক এক্সারসাইজ হতে পারে, ওয়েট লিফট হতে পারে। যোগব্যায়াম হতে পারে, অ্যারোবিক্স হতে পারে। যেকোনো ভাবে শরীরের শক্তিকে ঝরাতে হবে। মূল উদ্দেশ্য হলো শরীরে মেটাবলিজম বাড়ানো।