তরুণদের কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা হয় কেন?

Looks like you've blocked notifications!
একটানা বসে ফেইসবুকিং নয়। ছবি : সংগৃহীত

আজকাল প্রায়ই তরুণ-তরুণীরা চিকিৎসকের কাছে যান ঘাড় ও কোমর ব্যথা নিয়ে। তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এদের উপসর্গ হলো ঘাড়ে ব্যথা। ব্যথার কারণে ঘাড় ঘোরাতে পারেন না অনেকে। এমনকি ব্যথা পিঠের উপরের অংশ বা কারো কারো হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে হাত ঝিনঝিন বা অবশ অবশ অনুভূত হয় এবং বেশিক্ষণ ধরে কোনো কিছু ধরে রাখতে পারেন না। অর্থাৎ হাতে শক্তি কম পান। আর যাঁরা কোমরে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসেন তাঁদের বেশির ভাগই অভিযোগ করেন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর উঠতে গেলে সহজে উঠতে পারেন না, কোমরে মাংসপেশি টেনে ধরেন। তারপর খানিকক্ষণ বাঁকা হয়ে থেকে তারপর ধীরে ধীরে সোজা হতে পারেন।

তা ছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু রোগীর বক্তব্য এমন যে, দীর্ঘক্ষণ ওপর হয়ে শুয়ে ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনে ফেসবুকিং বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করছিলেন তবে উঠার সময় আর বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তখন- এই সমস্যাগুলো তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

এই সমস্যাগুলোর কারণ কী?

এই সমস্যাগুলোর কারণ শুধুই একটু অসচেতনতা, অসতর্কতা বা অসাবধানতা। যেমন- রবিন এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে। এই সময় তার নির্দিষ্ট কোনো লেখাপড়া নেই। তাই দিনের বেশির ভাগ সময়ই কম্পিউটারের সামনে কখনো ফেইসবুকিং কখনো ইন্টারনেট ব্রাউজিং কখনো কম্পিউটার গেম একটানা সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত। ফাঁকে ফাঁকে নাস্তা তাও কম্পিউটারের সামনে বসেই।

তেমনি ভাবে জেরিন এবার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ কমপ্লিট করেছেন। এখন ক্লাসে যেতে হয় না। হাতে অফুরন্ত সময় অন্যান্য বন্ধুরা যার যার কাজে ব্যস্ত, তেমন বাইরে যাওয়া হয় না। তাই ইন্টারনেটই তাঁর সঙ্গী, সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ল্যাপটপ নিয়ে বিছানাতেই শুয়ে থাকেন তিনি। ছাত্রীজীবনের শুরু থেকেই তাঁর বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে বই রেখে পড়ার অভ্যাস। তাই রুমে পড়ার টেবিল শুধু বই রাখার সেলফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তারই সূত্র ধরে এখন বইয়ের পরিবর্তে ল্যাপটপ।

ওপরে আলোচিত দুজনের একজন ঘাড় ও অন্যজন কোমর ব্যথায় আক্রান্ত। তবে তাদের এই ব্যথার জন্য কোনো প্যাথলজিক্যাল কোনো কারণ নেই। কারণ শুধু একটু অসচেতনতা। যার ফলে রবিনের ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত ও দুর্বল হয়ে গেছে। আর জেরিনের কোমরের মাংসপেশিগুলোরও একই অবস্থা। যার ফলে উভয়েই এই তরুণ বয়সে ঘাড় ও কোমর ব্যথায় আক্রান্ত। কোনো ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা শুয়ে ফেসবুকিং বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করলে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।

তবে একটু সচেতনতা ও সাবধানতাই এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।

১। একটানা এক ঘণ্টার বেশ সময় বসে কিংবা শুয়ে কম্পিউটিং বা ব্রাউজিং করবেন না। প্রয়োজন হলে এক ঘণ্টার পর পর ১০-১৫ মিনিট বিশ্রাম নিন বা হাঁটাহাটি করুন। তারপর আবার বসুন।

২। দীর্ঘক্ষণ উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়বেন না কিংবা ল্যাপটপ চালাবেন না।

৩। কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেল রাখুন,যাতে আপনাকে সামনের দিকে ঝুঁকতে না হয়।

৪। বসার চেয়ার ও টেবিলের উচ্চতা এমন হতে হবে যেন আপনি সোজা হয়ে কোমরের পিছনে সাপোর্ট দিয়ে বসে কম্পিউটার চালাতে পারেন।

৫। নিয়মিত ঘাড় ও কোমরের মাংসপেশির শক্তি বজায় রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। সর্বোপরি একটু নিয়ম মেনে চলুন সুস্থ ও ব্যথামুক্ত জীবনযাপন করুন।

লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট - ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল