কী কারণে রক্তস্বল্পতা হয়?
আসলে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা মানে হলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়া। কী কারণে রক্তস্বল্পতা হয়?
রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ডা. গুলজার হোসেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের হেমাটলজি বিভাগে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৫৯তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের রক্তস্বল্পতা রয়েছে? এর কারণগুলো সম্পর্কেও জানতে চাই।
উত্তর : রক্তস্বল্পতা মূলত আলাদা কোনো রোগ নয়। এটি অন্যান্য রোগের উপসর্গ হিসেবে আসে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনিমিয়াটাই মূল উপস্থাপন হিসেবে আসতে পারে।
রক্তস্বল্পতার একটি বিষয় হলো, নীরবে কিছু রক্তক্ষরণ হয়। যেমন ধরুন, কারো পেটে কৃমি রয়েছে, সেখান থেকে কৃমি অন্ত্র থেকে ছোট ছোট ছিদ্র করে রক্ত নিয়ে থাকে। ছোট ছোট ছিদ্র থেকে তখন রক্তক্ষরণ হতে পারে। কারো হয়তো পেপটিক আলসার রয়েছে, এখান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এরকম ক্ষুদ্রান্ত্রের বিভিন্ন জায়গাতে ক্ষত হতে পারে।
আবার ধরুন, নারীদের ঋতুস্রাবের সময় অনেক রক্তক্ষরণ হয়। সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। পাইলস থেকেও কিন্তু রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তস্বল্পতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আমাদের দেশে এ ধরনের রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তস্বল্পতার সংখ্যা অনেক। কারণ, মানুষ এগুলোকে চেপে যায়। বিশেষ করে নারীদের যখন পাইলস হয়, তারা সহজে চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না।
আবার ধরুন, অপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতা রয়েছে। যেমন ধরুন, আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা। দুধরনের মানুষ আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতায় ভোগে। একটি হলো, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা পর্যাপ্ত খাবার পায় না, তারা। আবার সচ্ছল সমাজেও দেখা যায়, অনেকে ডায়েট করে ওজন কমানোর জন্য, তাদের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি যে আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন। আয়রনের ঘাটতির কারণে তারা রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন।
এরপর আরেক ধরনের রক্তস্বল্পতা রয়েছে, এনিমিয়া অব ক্রনিক ডিজিস। অন্য কোনো ক্রনিক ডিজিজ রয়েছে তার এ জন্য কমে যাচ্ছে। যেমন ধরুন, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউরের রোগীগুলো। এ রকম যে দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক ডিজিজ রয়েছে, সেগুলোতেও অনেক সময়, আমরা দেখি যে রক্ত কমে যাচ্ছে। বিশেষ কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলো রক্তেরই রোগ, এর মানে অনেক ধরনের রক্তস্বল্পতা রয়েছে। ক্যানসার হলে সমস্যা হতে পারে। আমাদের শরীরে কিছু কিছু অসুখ রয়েছে, যেগুলোতে লোহিত কণিকাগুলো সময়ের আগে ভেঙে যায়। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ হলো, থ্যালাসেমিয়া। সেখানেও কিন্তু রক্তস্বল্পতা হয়। বাংলাদেশে এখন প্রায় এক লাখের মতো রেজিস্টার্ড রোগী রয়েছে। এরকম রক্ত ভেঙে যায়, সে রকম কিছু রোগেও কিন্তু রক্তস্বল্পতা হতে পারে।