শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে কখন বোঝা যাবে?
অনেক শিশুই অপুষ্টির সমস্যায় ভোগে। কখন বোঝা যাবে শিশু অপুষ্টিতে রয়েছে এবং অপুষ্টির কারণগুলো কী, এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
বর্তমানে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুপুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৬৬তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : শিশুর অপুষ্টি বলতে আসলে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : একটি বাচ্চার যতটুকু ওজন থাকার কথা অথবা যতটুকু উচ্চতা থাকার কথা, সেটা যদি সে অর্জন না করে, তখনই আমরা বাচ্চাটিকে অপুষ্টিতে ভুগছে বলে থাকি। এটার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। যখন একটি বাচ্চার বিষয়টি অতিরিক্ত থাকে, তখন একে বলা হয় মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি। যখন মধ্যম মানের থাকে, তখন বলা হয়, মাঝারি তীব্র অপুষ্টি। একটি ভালো খবর জানাতে চাই, আগে যেভাবে অপুষ্টির মাত্রা বাড়ছিল, বর্তমানে এটি কমে এসেছে।
শিশু অপুষ্টির মূল কারণের মধ্যে রয়েছে মা সম্পর্কিত কিছু সমস্যা, পরিবার সম্পর্কিত কিছু সমস্যা। আর কিছু রয়েছে সন্তান সম্পর্কিত সমস্যা।
সকালের দিকে যদি দেখেন, ভোরবেলা মায়েরা হয়তো সারিবদ্ধভাবে গার্মেন্টসের দিকে যাচ্ছে, সবাই কিন্তু খুব অল্প বয়সের নারী। এরা খুব অল্প বয়সে কর্মজীবী হয়ে যায়, এরপর দেখা যায়, তাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, খুব অল্প বয়সে বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে। একজন অপুষ্ট মা থেকেই কিন্তু অপুষ্ট বাচ্চার জন্ম হয়।
আবার দেখা গেল, একটি বাচ্চা হলো, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবার বাচ্চা হলো। এ ক্ষেত্রে যে বাচ্চাটা হচ্ছে, সে কিন্তু অপুষ্ট বাচ্চাই হচ্ছে।
আবার পারিবারিক বিষয়ের দিকে যদি যান, দুটো/তিনটি বাচ্চা হওয়াতে যে সমস্যা, অর্থনৈতিকভাবে সে শক্তিশালী থাকছে না। বাচ্চা যখন অপুষ্ট মা থেকে হচ্ছে বাচ্চাও, কিন্তু অপুষ্ট হচ্ছে। ৩৭ সপ্তাহ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা বাচ্চাকে টার্ম বেবি বলি। তবে দেখা যায়, বাচ্চাটি হয়ে যাচ্ছে ৩৭ সপ্তাহের আগে। জন্মের পর আড়াই কেজি ওজনের বেশি হলে আমরা বলি বাচ্চাটি স্বাভাবিক। তবে তারা হয়ে যাচ্ছে দুই দশমিক পাঁচ কেজির নিচে।
অনেক সময় পরিবারের বড়রা ভাবে, বুকের দুধে কাজ হচ্ছে না। তখন হয়তো মা-বাবা তাদের কথায় চলতে বাধ্য হয়। আসলে সমস্যাটা সেখানেই। আপনি যখন বুকের দুধ বাদ দিয়ে বাইরের দুধের প্রতি মনোযোগী হবেন, সেই দুধ বানানো একদমই ঠিক হচ্ছে না। ছয় মাস বয়সে বুকের দুধ ছাড়া সবকিছু নিষেধ। সে ক্ষেত্রে আবার চিনি মিশিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আসে। আর বাচ্চার শুরু হয় ডায়রিয়া। সেখান থেকেই বাচ্চার অপুষ্টি শুরু হয়ে যায়।
ছয় মাস পর্যন্ত, ১৮০ দিন পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ। সম্পূর্ণ পৃথিবীব্যাপী এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে গরুর দুধ নিষেধ। ছয় মাস পূরণ হওয়ার পরই বাড়তি খাবার দেওয়ার নিয়ম। যখন পাঁচ মাস বয়সে বাচ্চার পেট ভরছে না, তখন মুরব্বিদের নির্দেশেই দেখা যায়, একটু সুজি জাতীয় খাবার বা অন্য কিছু দিয়ে দেওয়া হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। দেখা যায়, এ সময় বাচ্চাগুলোর রক্তস্বল্পতাও হয়ে যায়।
একটি বাচ্চা যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার বা তার বেশি বিশ্রাম করে, তাহলে কিন্তু সে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে। এটি যদি পরিবারের সবাই জানত, তাহলে কখনোই বাইরের খাবারের প্রতি ঝুঁকত না।
আসলে তিন মাসের আগে বাচ্চাদের একটু পেটে ব্যথা হয়। একটু মোড়ামুড়ি করে। মা-বাবা বা মুরব্বিরা দেখে একটু বিচলিত হন, বাচ্চা বোধ হয় বারবার কাঁদছে, তাহলে বোধ হয় বুকের দুধে তার ক্ষুধা মিটছে না। এটা একদমই স্বাভাবিক, তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর্যন্ত। একে আমরা ইনফেনটাল কলিক বলে থাকি। এটা কোনো সমস্যাই নয়।