মাছ খাওয়া কেন ভালো, কেন খারাপ

Looks like you've blocked notifications!

মাছ খেতে কার না ভালো লাগে। বিভিন্ন কারণে পুষ্টিবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বলেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কোনো না কোনো মাছ রাখা দরকার। কেননা নানা রকমের মাছে রয়েছে হাজারো খাদ্যগুণ। নিয়মিত মাছ খেলে মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কমে যায় মস্তিষ্কের বয়স। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই মাছ খেলে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ভালো হয় বলে প্রচলিত আছে। 

তবে এই মাছ খাওয়ার যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, তেমনি এই মাছেই আছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। অতিরিক্ত মাছ খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সামুদ্রিক মাছের কিছু উপাদানের কারণে গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অবস্থায় মাঝের উপকারী উপাদানগুলোই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

মাছ খাওয়া কেন ভালো

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধে : গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খাওয়া হৃদরোগ ও মস্তিষ্কের জটিলতা প্রতিরোধ করে। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার হার মাছ না খাওয়াদের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। হার্টের যে কোনো সমস্যার একটি বড় ওষুধ মাছ খাওয়া। সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে সপ্তাহে দুবার মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন। 
রোগজীবাণুর সঙ্গে লড়তে : মাছে থাকা ভিটামিন ডি, ওমেগা-৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো উপাদানগুলো শরীরের হাজারো সমস্যায় প্রতিষেধকের কাজ করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড জিনতাত্ত্বিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবসাদ কমাতেও সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ক্যানসারের প্রবণতাকে ৩০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম করতে পারে। কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার ও মুখের ক্যানসারের প্রবণতা মাছ খেলে অনেক কমে যায়। প্রতিনিয়ত মাছ খেলে রক্তচাপ ও তাতে শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমে যায়। এ ছাড়া নিয়মিত মাছ খেলে ত্বক ও চুল ভালো থাকে। এ ছাড়া নানা ধরনের প্রোটিন ও আয়োডিন থাকে মাছের মধ্যে।

মাছ খাওয়া কেন খারাপ

গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর : মাছে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, টুনাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে অতিরিক্ত মাত্রায় পারদসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই প্রক্রিয়াজাত মাছ বিক্রি করা হয়। এই প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ক্রুটির কারণে মাছ খাওয়া দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

অতিরিক্ত মাছ খেলে : নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন স্বাদুপানির মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে গবেষক নরম্যান হর্ড জানান, এই বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহবিরোধী ধর্ম রয়েছে। আর এ কারণে হার্টের স্বাস্থ্য ও প্রদাহজনিত সমস্যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উপকারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থা পাল্টে যেতে পারে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে শরীর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, হতে পারে রোগ সংক্রমণ। ওই গবেষক বলেন, অতিরিক্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা পাল্টে যায়, যা জীবাণুর সঙ্গে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই পরিমিত পরিমাণে মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।