কী কারণে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ হয়?

Looks like you've blocked notifications!
নারীদের শারীরিক গঠনের কারণে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ বেশি হয়। ছবি : সংগৃহীত

মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণের সমস্যায় অনেকেই ভোগে। জটিল এই সমস্যা হওয়ার কারণও অনেক। মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণের কারণের বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এম এ সামাদ। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালে কিডনি বিভাগের চিফ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৭১তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

প্রশ্ন : কী কারণে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ হয়?

উত্তর : নারীদের এটি বেশি হয়। এটি সঠিক। সাধারণত নারীরা পুরুষের তুলনায় প্রায় নয়গুণ বেশি আক্রান্ত হয়। আর আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো, জন্মগত এনাটমি বা গঠন। গঠন এই জন্য যে মূত্রতন্ত্রের যে জীবাণু দেখা যায়, এর প্রায় ৯৫ ভাগ আমাদের খাদ্যনালিতে বসবাস করে বা পায়ুপথের আশপাশে থাকে। তো নারীদের পায়ুপথ ও মূত্রনালির যে বহিরাংশ এটি কাছকাছি থাকে। কাজেই কখনো যদি জীবাণু মল দিয়ে মূত্রনালির কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে এটি খুব সহজে মূত্রনালিতে প্রবেশ করে। মূত্রনালি খুব ছোট। চার সেন্টিমিটার। সেখানে পুরুষদের থাকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার।

নারীদের ক্ষেত্রে জীবাণু মাত্র চার সেন্টিমিটার পার করলে প্রস্রাবের থলিতে চলে যায়। তো সেখানে চলে গেলে, একটি জীবাণু থেকে দুটো, দুটো থেকে চারটি হতে হতে যতক্ষণ প্রস্রাব না করে এটি বাড়তেই থাকে। কিন্তু আমার প্রাকৃতিক সুরক্ষা হলো, যখন প্রস্রাব করা হয়, তখন যে জীবাণুগুলো প্রবেশ করেছিল, সেগুলো বেরিয়ে যায়। আর যদি প্রস্রাব করতে দেরি হয় বা নালিতে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে কিছু প্রস্রাব হয়তো ভেতরে থেকে যায়। এমন যদি  ঘটে তাহলে ওই জীবাণুগুলো বাড়তে বাড়তে সংখ্যায় অনেক হয়ে যায়। তখন ওই প্রস্রাবের নালি ও মূত্রথলি যেটি রয়েছে, একে আক্রমণ করে বসে। তখন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন শুরু হয়।

যদি প্রস্রাবের নালি আর মূত্রথলি পর্যন্ত থাকে, একে আমাদের ভাষায় বলি, লোয়ার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। কিন্তু যদি সেটি চিকিৎসাহীন অবস্থায় থাকে, মূত্রতন্ত্রের যে গঠন সেখানে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেটি কিডনি পর্যন্ত চলে আসে।

গঠনের সমস্যা মানে হলো, জন্মগত কিছু ত্রুটি রয়েছে। যেমন দেখা যায়, কিডনি থেকে প্রস্রাব আসছে, প্রস্রাবের থলিতে। কিন্তু যখন চাপ দিয়ে প্রস্রাব করছে, তখন তো উল্টো কিডনিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিছু সামনে আসবে, কিছু উল্টো দিকে চলে যাবে। কিন্তু সেখানে এমন একটি ভাল্ভ সিস্টেম রয়েছে যে ওপরের দিকে যেতে পারে না। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্ভাগ্যবশত  ভাল্ভটাই ত্রুটিপূর্ণ। তখন দেখা যায়, বাচ্চারা জন্মের পর প্রস্রাব করার সময় যতটুকু করার দরকার, ততটুকু করে না। ঘণ্টাখানেক পরই হয়তো আবার প্রস্রাব করতে চায়।

আবার, প্রস্রাব প্রবাহে যদি কোনো বাধা থাকে, তাহলে সমস্যা। যেমন যদি বয়স্ক পুরুষ হয়, তাহলে তাদের প্রোস্টেট বড় হলে এদের কিন্তু আক্রমণের হার বেড়ে যায়।

আবার নারীদের ক্ষেত্রে বার বার যাদের বাচ্চা হয়, জরায়ুটা নিচে নেমে আসে। প্রস্রাবের থলে নিচে নেমে আসে। এখানে তাদের বারে বারে সংক্রমণ হয়। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরও কিন্তু বার বার ইনফেকশন হয়। তরুণ বয়সে দেখা যায়, সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কারণে আক্রমণের হার অনেক বেশি থাকে। মেলামেশার আগেই তারা পানি পান করে নিবে, মেলামেশার পরে যদি তারা প্রস্রাব করে ফেলে, তাহলে যে জীবাণুগুলো ওপরে চলে গেছে, সেগুলো বেরিয়ে যেতে পারে।

আবার মেয়েরা যদি খুব আঁটশাঁট পোশাক ব্যবহার করে, অথবা সিনথেটিক ব্যবহার করে, ডিওডোরেন্ট বা পাওডার ব্যবহার করে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। অনেক সময় বিব্রত করে।

এ ছাড়া অনেক কারণ রয়েছে সংক্রমণ হওয়ার। নারীরা যখন গর্ভবতী থাকে, তাদের কিন্তু সংক্রমণের হার বেশি থাকে। আর গর্ভাবস্থায় যদি হার বেড়ে যায়, তাহলে শিশু ও মা মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়।