দাঁত ব্রাশের সঠিক সময় কোনটি?
কী কারণে মাড়ির রক্তক্ষরণ হয়?
উত্তর : কারণের মধ্যে একটি হলো লোকাল কারণ। মানে মুখের ভেতরের কোনো কারণ। আরেকটি হলো সিস্টেমিক কারণ। বা শরীরের রক্তের জন্য যেটা হতে পারে। বা মুখের বাইরের কোনো কারণেও হতে পারে। মুখের ভেতরে যে কারণ একে সাধারণত জিনজিভাইটিস বলে থাকি। আবার হতে পারে প্লাক, হলুদ হলুদ একটি আবরণ পড়ে। অথবা অনেক সময় মেডিকেলের ভাষায় ক্যালকুলাস বলে থাকি।
হলুদ প্লাক তো পড়ে দাঁতের ওপর। এর সাথে মাড়ির সম্পর্ক কী?
দাঁত যেহেতু মাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, মাড়ির সাথে যে জিনজিভাটা সেখানে সংযুক্ত থাকে, সেখানে প্রদাহ হয়। তখন মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। আবার কিছু কিছু রয়েছে যেমন পেরিডোনটাইটিস, যখন অনেক গভীর হয়ে যায়, এটি হলেও অনেক সময় মাড়ি থেকে রক্ত বের হতে পারে। আবার আঘাত হলে তো হতেও পারে। আবার যেটা সিস্টেমিক কারণ যেমন একিউট লিউকেমিয়া বা যদি হিমোফিলিয়া হয়ে থাকে, তখন হয়। অনেক সময় ক্রনিক লিভার রোগে হয়, এপ্লাসটিক এনিমিয়ায় হয়- এগুলোর কারণে সমস্যা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রেও মাড়িতে রক্তপাত হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় অল্প সময়ের জন্য যেমন ডেঙ্গু হলেও মাড়িতে রক্তপাত হতে পারে। এসব বিভিন্ন কারণে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
অনেক কারণের কথাই আপনি বললেন। তবে কী কারণে হচ্ছে সেটি বোঝার কোনো উপায় রয়েছে?
যখন প্রাথমিকভাবে একটি রোগী আমাদের কাছে আসে তখন মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। ব্রাশ করলে রক্ত বের হয়। অনেক সময় ঘুম থেকে উঠার পর মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। তখন আমরা আসলে মুখকে পরীক্ষা করে বা ক্লিনিক্যালি দেখে, যদি দেখি মুখের কারণে হচ্ছে, তখন আমরা মুখের চিকিৎসা করে থাকি। আবার যদি তার সিস্টেমিক কিছু রোগ সন্দেহ হয় বা সে যদি কোনো ইতিহাস দেয়, যেমন অনেকের যদি হিমোফিলিয়া থাকে, সে বারবার রক্ত প্রবাহের ইতিহাস দিয়ে থাকে। আবার যদি কারো লিভারের রোগ বা সমস্যা থাকে তখন আমাদের বলে থাকে। তখন আমরা দুটোর মধ্যে সম্পর্ক বের করে চিকিৎসা করি।
মুখের কারণে রক্তক্ষরণ হলে কী কী ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
প্রথমে একটু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি। এরপর স্কেলিং করা হয়। অনেক সময় স্কেলিং করার পর, যখন পাথরটা বা প্লাকটা চলে যায়, সাথে সাথে তার মাড়ির রক্তপাতটা বন্ধ হয়ে যায়।
এই যে বললেন পাথরের কথা। মুখের মধ্যে কিসের পাথর হয়? এই পাথরগুলো কীভাবে আসছে মুখের মধ্যে, কী ধরনের ক্ষতি করছে?
এই পাথরগুলো সাধারণত তাদের হয় যারা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করে, তাদের খাবারের অংশ , মুখের লাল এবং বিভিন্ন ধরনের জীবাণু মিশে এক ধরনের শক্ত একটা পাথরের মতো আস্তরণ দাঁতের ওপর পড়ে। এতটাই শক্ত হয়ে যায় যেটা পাথরের মতো হয়ে যায়, যেটা ব্রাশ করলে কখনোই ঠিক করা যায় না।
এই পাথরগুলো সরানোর জন্য আপনাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কী থাকে?
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা পদ্ধতি হলো, স্কেলিং করি। রোগীদের পরামর্শ দেই অন্তত এক বছর দেড় বছর পর পর স্কেলিং করতে। সাধারণত যাদের দাঁত আঁকাবাঁকা তাদের ছয় মাস- এক বছর পর পর স্কেলিং করতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদেরও বলি আপনারা এক বছর বা দেড় বছর পর পর স্কেলিং করবেন।
অনেকেই মনে করেন স্কেলিং করা মানে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া। তাদের পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছি আসলে কী তাই?
না, এতে আসলে দাঁতের ক্ষয় হয় না। কারণ আমরা যে জিনিসটি দিয়ে স্কেলিং করে থাকি, সেটা আল্ট্রাস্কেলার, যেটা ভাইব্রেশনের মাধ্যমে শুধু পাথরকে ভেঙে ফেলে। এতে দাঁতের কোনো ক্ষতি হয় না। এমনকি মাড়িরও কোনো ক্ষতি হয় না। অতএব এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
বরং পাথরটি যখন অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে, তখন স্কেলিং করা হলে, দাঁতের সাথে মাড়ির যে সংযোগটি একটু ক্ষয় মনে হয়। এটা আসলে কী পাথরটি সরিয়ে ফেলার জন্য?
এটি আসলে এই পাথর সরার জন্য। কারণ ওটা একদম সম্পূর্ণ দাঁতের সাথে মিলে থাকে। মাড়ির সাথে মিলে থাকে। যখন সেটা সরে যায় তখন প্রতিটি দাঁত আলাদাভাবে বোঝা যায়। যেটা পাথর থাকলে বোঝা যায় না।
এই খালি জায়গাটি কী আবার পূর্ণ হয়?
প্রাথমিকভাবে কিছু পূর্ণ হয়। যে মাড়িটি নিচে ক্ষয় হয়ে গেছে সেটি দিয়ে পূর্ণ হয়। পরবর্তীকালে রোগীর যে শিরশির করা- এটি প্রতিরোধ করার জন্য আমরা কিছু ফিলিংয়ের পরামর্শ দেই। কারণ দাঁতের মাড়ির ভেতরে অংশটি সাধারণত শির শির করে।
আপনি বললেন ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। স্কেলিং কি আপনারা সবার ক্ষেত্রে করার পরামর্শ দেন?
সবার ক্ষেত্রে আমরা এটি দেই না। যখন আমরা মুখে পরীক্ষা করে দেখি যে তার একটি প্লাক বা ক্যালকুলাস আছে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের পরামর্শ দেই। পাথরটি ধীরে ধীরে প্রথম মাড়িকে ক্ষয় করে। পরে হাড় থেকে দাঁত ঢিলা হয়ে যায়। রোগীরা মনে করে আমি যদি পাথরটি সরাই তবে দাঁত সরে যাবে। তবে এটা হচ্ছে ভুল ধারণা।
সমস্যা হলে তো দন্ত বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন। তবে এই যে আমরা প্রতিদিন ব্রাশ করছি, সেগুলো কতখানি ঠিক হয়, সেটা সত্যিকার অর্থেই আমরা পারছি কি না?
আমাদের প্রতিদিন অন্তত দুই বার ব্রাশ করা উচিত। এক হচ্ছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং আরেকটি হলো, সকালে নাস্তার পর। এই দুইবার যদি কেউ ব্রাশ করে তাদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সমস্যা কমে যাবে।
ব্রাশ করার আদর্শ পদ্ধতি কী?
সাধাণত আমরা রোগীদের পরামর্শ দেই নিচের দাঁতের জন্য ব্রাশটার মুভমেন্ট হবে উপরের দিকে। আর উপরের দাঁতের ক্ষেত্রে ব্রাশের মুভমেন্ট হবে নিচের দিকে। আর পেছনের দাঁতগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ করবে।
অনেকে সারা বছর মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করে থাকেন। মাউথওয়াশের কতটুকু ভূমিকা রয়েছে?
মাউথওয়াশ যেহেতু বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিসেপটিক, সেক্ষেত্রে জীবাণু ধ্বংস করে। তবে নিয়মিত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ সে ক্ষেত্রে মুখের স্বাদ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। অতএব এটি নিয়মিত ব্যবহার করা ঠিক নয়।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিত?
প্রতিদিন দুই বেলা ব্রাশ করা। মাঝেমধ্যে ফ্লসিং করা উচিত।
ফ্লসিং জিনিসটি কী?
এটি অনেকটা সুতার মতো। এই সুতাটা দুই দাঁতের ভেতরে ঢুকিয়ে খাদ্যাংশটা বের করা হয়। এখন বাজারে ফ্লস পাওয়া যায়।