ক্যানসার আছে কি না, জানবেন কীভাবে

Looks like you've blocked notifications!

ক্যানসার প্রতিরোধে শরীর পরীক্ষা করা বা স্ক্রিনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আগে থেকেই স্ক্রিনিং করা হলে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার ১০ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ক্যানসারর বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডিওমেলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

প্রশ্ন : প্রথমিক পর্যায়ে ক্যানসার নির্ণয়ে স্ক্রিনিং কী ভূমিকা রাখে? এবং স্ক্রিনিং কী?

উত্তর : প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার দুই ভাবে শনাক্ত করা যায়। আপনারা জানেন, কোষের মধ্যে ক্যানসার বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে এবং একটা সময় গিয়ে এর লক্ষণ ধরা পড়ে। কোষের মধ্যে পরিবর্তনটি অনেক আগে শুরু  হয়। লক্ষণ ধরা পড়ে অনেক শেষে। যখন ক্যানসারের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তখনো ক্যানসার নির্ণয় করা যায়; এটিকে আমরা বলি সূচনায় নির্ণয়। তখনো চিকিৎসা করে ভালো ফল পাওয়া  সম্ভব।

সাধারণত সাতটি বিষয়কে ক্যানসারের বিপদ সংকেত বলা হয়। যেমন : খুসখুস কাশি, ভাঙ্গা কণ্ঠস্বর, সহজে যদি ঘা না শুকায়, স্তনে বা শরীরে কোথাও কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি, মল ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, ঢোক গিলতে অসুবিধা বা হজম  অসুবিধা, তিল কিংবা আচিলের কোনো সূক্ষ পরিবর্তন। এই সাতটি বিপদ সংকেতের কথা সাধারণ মানুষের কাছে যদি আমরা ব্যাপকভাবে প্রচার করি তাহলে অনেক আগে থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

একজন সুস্থ ব্যক্তি যার মধ্যে ক্যানসারের লক্ষণ এখনো প্রকাশ পায়নি কিন্তু ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি আছে তখন ক্যানসার আছে কি না বা হতে পারে কি না এই  বিষয়ে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি তাকে স্ক্রিনিং বলা হয়।

প্রশ্ন : কোন ক্যানসারগুলোর ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে?

উত্তর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নয়নশীল দেশে সাধারণত তিন ধরনের ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি থাকে। একটি স্তন ক্যানসার, দ্বিতীয়টি জরায়ু মুখের ক্যানসার, তৃতীয়টি মুখ গহ্বভরের ক্যানসার। তাই এইগুলোর ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং করা উচিত। আবার যদি কেউ এমনিতেই হাসপাতালে গিয়ে ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং করে তবে ক্যানসার ধরা পড়তে পারে।

প্রশ্ন : ওরাল ক্যানসার বা মুখ গহ্বরের ক্যানসারের ক্ষেত্রে কী ধরনের স্ক্রিনিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়?

উত্তর : যেসব দেশে ওরাল স্ক্রিনিংয়ের বিষয় রয়েছে তারা নিদির্ষ্ট বয়সের পরে যত নারী পুরুষ আছে তাদের চেকআপ করে। চিকিৎসক যদি নাও পাওয়া যায় এমকি স্বাস্থ্যকর্মী  দিয়েও এই রোগ নির্ণয় করা যায়। তিনটি বিষয় শিখলেই মুখ গহ্বরের ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। মুখ গহ্বরের মধ্যে যে ঝিল্লি থাকে সেই মিউকাস ম্যামব্রেনে যদি লাল লাল ছোপ ছোপ দেখা যায়, সাদা খসখসে আস্তরের মতো পড়ে, মিউকাস মেমব্রেনের নিচের থেকে একটি ছোট্ট ঘা যদি হয়ে যায় তাহলে ভাবতে হবে ব্যক্তির মুখ গহ্বরের ক্যানসার হয়েছে। এই বিষয়গুলো স্বাস্থ্যকর্মী নির্ণয় করতে পারলে পরবর্তী পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছে পাঠাবে।

যেসব লক্ষণ দেখা যায় এগুলোর দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক চিকিৎসা নেওয়ার পরও যদি পরিবর্তন না হয় তখন অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন : জরায়ু মুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে কীভাবে স্ক্রিনিং করতে হবে?

উত্তর : এই সমস্যা নির্ণয়ে পেপটেস্ট পরীক্ষা করা হয়। রোগীকে শুইয়ে স্পেকুলাম দিয়ে জরায়ুর মুখটি একটু দেখা হয়।একটি স্পেচুলা (আইসক্রিমের চামচের মতো এক ধরনের জিনিস) দিয়ে জরায়ুতে ঘুরিয়ে কস নিয়ে আসা হয়। এই কস মাইক্রোস্কোপের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা হয় ক্যানসার কোষ আছে কি না। এটি আদর্শ পদ্ধতি হলেও কিছুটা ব্যয়বহুল।

তাই দরিদ্র দেশের জন্য আরেকটি পদ্ধতি বেশ প্রচলিত হয়ে গেছে- তার নাম ভায়া ( ভিজুয়াল ইন্সপেকশন বাই এসিডিক এসিড)। সপস্টিক (কাঠির মাথায় তুলা লাগানো এক ধরনের পরীক্ষণ যন্ত্র) দিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। এসিডিক এসিডে সপস্টিক ভেজানো হয়। জরায়ুর মুখ খুলে সপস্টিক স্পর্শ করা হয়। যদি রঙের পরিবর্তন হয় তাহলে ভায়া পজিটিভ এবং পরিবর্তন না হলে ভায়া নেগেটিভ। তবে ভায়া পজিটিভ মানেই ক্যারনসার রয়েছে তা নিশ্চিত  হওয়া যায় না। আর ভায়া নেগেটিভ মানেই ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে মুক্ত সেটিও নয়।

প্রশ্ন : স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কীভাবে করতে হয়?

উত্তর : এটি  নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। তবে একটি বিষয়ের ওপর আমরা খুব জোর দিই। নিজেই নিজের  স্তন ক্যানসার পরীক্ষা করবেন। কোনো রকম অস্বাভাবিক কিছু টের পেলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

আরেকটি হলো স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করানো। যখন নারীটি নিজে সন্দেহ করবেন  সমস্যা হচ্ছে তখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেমোগ্রাম করা যায়। মেমোগ্রামের বিকল্প রয়েছে আল্ট্রাসোনোগ্রাম। এখন আমরা বুকেরও আল্ট্রাসোনোগ্রাম করি। যেসব এলাকায় মেমোগ্রামের ব্যবস্থা নেই সেখানে এটি করা যায়। তাতেও  ক্যানসার হয়েছে ধারণা করলে এফএন এসি করা যেতে পারে। এফএন এসি মানে, ফাইন নিডেল এসপিরেশন সাইটোলজি। চিকন একটি সুই টিউমারের ভেতর ঢুকিয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে কস নিয়ে আসি। এরপর স্লাইড বানিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করে দেখা হয় ক্যানসার হয়েছে কি না।

ক্যান্সারের শুরুর পর্যায়ে স্ক্রিনিং করে যদি বিষয়টি ধরা পড়ে তাহলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়।