টনসিল ও এডিনয়েডের সমস্যা
সাধারণত শিশু এবং তরুণ বয়সে টনসিল ও এডিনয়েডের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা প্রয়োজন।
আজ শুক্রবার (১৩ মার্চ-২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৭৩ পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ হিল কাফি।
প্রশ্ন : টনসিল ও এডিনয়েড কী? দেহের কোথায় এদের অবস্থান?
উত্তর : টনসিল একটি লিমফোয়েড টিস্যু। আমাদের মুখগহ্বরের অরফেরিংসের দুই পাশে টনসিল দুটো থাকে। এডিনয়েড থাকে নেজোফেরিংসে, যেটা খালি চোখে দেখা যায় না। এক্স-রে করলে দেখা যায়। তবে গলা হাঁ করলেই টনসিল দেখা যায়।
প্রশ্ন : টনসিলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : টনসিল আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় জিনিস। অনেকে বলেন, এর দরকার নেই। তবে আমি মনে করি, এটার দরকার আছে। কিন্তু টনসিলের সমস্যা হলে যদি সেটার সমাধান না করা হয়, তবে রোগীর ক্ষতি হবে। যদি একজন রোগীর টনসিলে ঘন ঘন ইনফেকশন হয়, তখন চিকিৎসা নিতে হবে।
সব বয়সের মানুষেরই টনসিল হয়। তবে শিশু এবং তরুণদের মধ্যে টনসিলাইটিস হওয়ার প্রবণতা বেশি। এ সময় রোগীর গলা ব্যথা হয়, সঙ্গে জ্বর থাকে। শিশুর এ ধরনের সমস্যা হলে সে হয়তো বলতে পারে না। তখন বাবা-মাকে শিশুটির সমস্যা বুঝতে হবে। অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি এ সময় শিশুরা খেতে চায় না। আর যদি এডিনয়েড বড় থাকে তবে দেখা যাবে, বাচ্চা হাঁ করে ঘুমাচ্ছে। এডিনয়ডেও একটি লিমফোয়েড অরগান।
প্রশ্ন : যদি এডিনয়েড বড় থাকে, তাহলেও কি একই উপসর্গ প্রকাশ পাবে?
উত্তর : এডিনয়েডের সমস্যায় শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়; মাঝেমধ্যে কান বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যথা হয়। সাধারণত শিশুদের ৩ থেকে ১১ বছর বয়সে এডিনয়েডের সমস্যা হয়। তবে এডিনয়েড ১১ বছর পড়ে ছোট হয়ে যায়। টনসিল ছোট হয় না। একে একিউট টনসিলাইটিস বলে। আর উপসর্গ যদি তিন মাসের বেশি হয়, তাকে ক্রনিক টনসিলাইটিস বলে। তবে টনসিল হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ থেকে বিভিন্ন জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর থেকে ক্রনিক ফ্যারেনজাইটিস হতে পারে, সাইনাসে ইনফেকশন হতে পারে।
এডিনয়েড থেকে শিশুদের কানে ব্যথা হতে পারে। কানে পুঁজও পড়তে পারে, কানে কম শোনার সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : টনসিল সার্জারির বিষয়টি আপনারা কখন নির্ধারণ করেন?
উত্তর : ওষুধ খাওয়ার পরও যদি রোগীর ঘন ঘন সমস্যা দেখা দেয়, বছরে দুই থেকে তিনবার তার গলা ব্যথা হয় এবং এভাবে দুই থেকে তিন বছর চলে, তখন আমরা টনসিল অপারেশন করতে বলি। আবার কখনো যদি রোগীর টনসিল অনেক বড় হয়ে যায় যে তার খেতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তখন আমরা বলি টনসিলের অপারেশনের প্রয়োজন আছে। আবার যদি অনেক সময় টনসিল প্রদাহ হয়, ঘা, পুঁজ হয় এবং খেতে অসুবিধা হয়, তখন আমরা টনসিল ফেলে দিতে বলি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর টনসিল অপারেশন করতে বলা হয়। অনেক সময় এ সমস্যা থেকে ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসাকে ভয় না পেয়ে রোগটাকে ভয় পাওয়া উচিত।
টনসিলকে আমরা বলি পুলিশ ফোর্স। ভালো পুলিশ যেমন ভালো কাজ করে, তেমনি টনসিলও কিছু ভালো কাজ করে। তেমন পুলিশ যদি খারাপ হয়ে যায়, তখন খারাপ ধরনের কাজ করতে পারে। তাই টনসিল যদি নিজেই নষ্ট হয়ে যায়, এর আর রোগ প্রতিরোধ করা বা কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। তখন সে দেহের ক্ষতি করতে থাকে। রোগীর নিজের ভালোর জন্যই টনসিল ফেলে দেওয়া উচিত।
এ ছাড়া বহুদিন ধরে টনসিলের চিকিৎসা করা না হলে ব্যক্তির কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। তার হার্টের ভাল্বে সমস্যা হতে পারে, রিউমেটিক ফিভার হতে পারে। তাই টনসিল ফেলে দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। নয়তো তার একটা সময় হয়তো অনেক রোগের চিকিৎসা করতে হয়। তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
প্রশ্ন : এডিনয়েড যদি বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে কি একই ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : এডিনয়েড ১১ বছর বয়সে যেকোনো সময়ে হতে পারে। এডিনয়েডও ফেলে দিতে হয়। এটা যদি সময়মতো অপারেশন করা না হয়, তাহলে রোগী কানে কম শুনবে। দেখা যায় এডিনয়েড না ফেলার পরে একই সঙ্গে তার টনসিল সমস্যা হয় এবং কানেও কম শুনতে পারে।
যদি এডিনয়েডের জন্য শিশুরা কানে কম শোনে, তবে এটি ফেলে দেওয়ার পরও কিন্তু অনেক সময় সমস্যাটি থেকে যায়। আমরা যখনই দেখব শিশুর এডিনয়েড আছে এবং তার কানে সমস্যা হচ্ছে, তখন বুঝতে হবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি পুষে রাখলে শিশুটিরই ক্ষতি হবে। তাই এ অপারেশন সঠিক সময়ে করতে হবে।