ক্যানসার কী, রেডিওথেরাপি কেন

Looks like you've blocked notifications!

ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির ভূমিকা অনেক। ক্যানসার ভেদে প্রাথমিক পর্যায়ে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়া যায়। আবার অন্য চিকিৎসার পাশাপাশিও এটি নেওয়া যায়।

এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২২৮৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সৌমেন বসু। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : গতকাল ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ক্যানসার সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের ধারণা কী?

উত্তর : সাধারণ মানুষের কাছে ক্যানসার শব্দটি শুনলে প্রথমেই যেটি মনে হয়, সেটি হলো মৃত্যু। তবে বিষয়টি কিন্তু সত্যি নয়। মানুষকে আমাদের এই জিনিসটি বোঝানো দরকার যে অন্যান্য রোগের মতোই এটি একটি রোগ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলে একে সারানো সম্ভব। 

হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ যখন শেষ পর্যায়ে চলে যায় কোনো চিকিৎসকই সেগুলো সারাতে পারেন না। তেমনি ক্যানসারও শেষ পর্যায়ে চলে গেলে সারানো সম্ভব হয় না। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এর চিকিৎসা সম্ভব। এবং রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের এখানে এখনো একটি ভীতি আছে। আসলে মানুষকে বোঝাতে হবে, এটি একটি রোগ, এর চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসা করে মানুষটিকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
 

প্রশ্ন : ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির কী ভূমিকা রয়েছে? রেডিয়েশন অনকোলজি বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : মূলত রেডিয়েশন অনকোলজি হলো, রেডিয়েশন থেরাপি, যার সাহায্যে ক্যানসারের কোষকে মারা হয়। ক্যানসার রোগের চিকিৎসা করা হয়। দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো না কোনো সময়ে রেডিওথেরাপি লাগে। 

কিছু কিছু জায়গার চিকিৎসা রেডিওথেরাপি দিয়ে করা হয়। যেমন : মুখ এবং গলার ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা হলো রেডিওথেরাপি। তেমনি স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও রেডিয়েশনের একটি ভূমিকা রয়েছে। তেমনি এরকমভাবে প্রায় প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি অঙ্গের ক্ষেত্রেই রেডিয়েশনের ভূমিকা রয়েছে। কোথাও প্রাথমিক চিকিৎসার বেলায় এটি দেওয়া হচ্ছে। কোথাও অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি এটি করা হচ্ছে।

প্রশ্ন : বর্তমানে রেডিওথেরাপি চিকিৎসার কতটুকু উন্নতি হয়েছে?

উত্তর : প্রথমে যখন ডিপ এক্সরে থেরাপি দিয়ে শুরু হয়েছিল, তখনকার চিকিৎসা আর এখনকার আধুনিক লিনিয়ার এক্সেলেটর-ভিত্তিক চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। তখন ওই চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা রোগীর টিউমার সারানোর চেষ্টা করতাম। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক কোষগুলোও ধ্বংস হয়ে যেত। এটা কিন্তু কাম্য নয়। আমাদের কাম্য টিউমারের চিকিৎসা করা। স্বাভাবিক কোষকে নষ্ট করে দেওয়া নয়। এখন নতুন যে পদ্ধতিগুলো এসেছে, তার মাধ্যমে আমরা টিউমারের চিকিৎসা করি এবং সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক কোষকে সুরক্ষা দিই।

এই রোগটি ছোট ছোটভাবে আসে এবং পাশের জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসার সময় স্বাভাবিক কোষকেও কিছুটা নিতে হয়। তবে আমাদের পুরোনো যে পদ্ধতিগুলো ছিল, সেখানে সম্পূর্ণ জায়গাকেই চিকিৎসা করতে হতো। তখন স্বাভাবিক কোষকে আমরা আলাদাভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারতাম না। 

এখানে আমরা স্বাভাবিক কোষকে কিছুটা নিচ্ছি। এসব জায়গায় মাইক্রোস্কোপিকভাবে ক্যানসার কোষ থাকার আশঙ্কা থাকে। তাই সেই জায়গাটা নিচ্ছি। তবে অন্যান্য দূরবর্তী জায়গাগুলো সুরক্ষিত রাখতে পারছি। 

প্রশ্ন : দেশে বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। আসলে এখানে কতখানি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে আপনি মনে করেন? সেসব জায়গায় গেলে আমাদের রোগীরা কি সত্যিকার অর্থেই ওই সুবিধাটি পাবে?

উত্তর : দেখুন, আমরা তো মূলত উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের বিভিন্ন যে বিভাগগুলো আছে, সেখানে এখনো পর্যন্ত যে মেশিনগুলো আছে, সেগুলো তেমন উন্নত নয়। এটি কাউকে দোষ দেওয়ার বিষয় নয়। 
এর কারণ, আমাদের জনসংখ্যাটাও বিশাল। আপনি যদি ভারত বা বাংলাশের কথা ভাবেন, দুটো দেশেরই জনসংখ্যা বিশাল। তাদের সে রকমভাবে যত্ন করা সম্ভব নয়। তবে, আপনি যখন চিকিৎসা করছেন, কিসের জন্য চিকিৎসা করছেন? মানুষকে সুস্থ করার জন্য তো? এখানে হয়তো আপনি তাকে সুস্থ করতে পারবেন, অথবা পারবেন না। 

আপনি যদি সঠিক ডোজ প্রয়োগ করতে না পারেন, তাহলে মানুষটিকে সুস্থ করতে পারবেন না। সেই ক্ষেত্রে দিয়ে লাভ নেই। আমি হয়তো কথাটা সরাসরি বলছি না। আসলে মানুষ এসব যন্ত্র দিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন, চিকিৎসকরাও দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যেহেতু তাদের হাতে সেই মেশিনগুলো নেই। তবে এগুলো আমাদের দরকার। নয়তো আমরা কোনোদিনই রোগীকে সঠিকভাবে সুস্থ করতে পারব না। শুধু রোগ থেকে সুস্থ করাই কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আসলে রোগকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে যদি আমরা ফিরিয়ে দিতে না পারি, তাহলে আমরা ব্যর্থ হব।  
প্রশ্ন : এই চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে ভয় কাজ করে। এ কারণে রোগীরা চিকিৎসা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। আপনার কী মনে হয় এই ক্ষেত্রে?

উত্তর : আমরা সব সময় এই বিষয়টির মুখোমুখি হই। ভারত, বাংলাদেশ দুটো জায়গাতেই আমাকে বিষয়টির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে ধারণাটা এমন যে কোনো একটি আলো দিয়ে জায়গাটিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

আমাদের পুরোনো যে মেশিনগুলো রয়েছে, সেগুলো ত্বককে রক্ষা করতে পারত না। এতে ত্বককে দেখলে মনে হতো জ্বলে গেছে। তবে নতুন যে উন্নত টেকনোলজির রয়েছে সেগুলো ভালো। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা ত্বকের ক্ষতি না করে চিকিৎসা করতে পারি। 

আমরা মানুষকে বলি, আমরা মানুষ মারার জন্য এখানে আসিনি। মানুষকে বাঁচানোর জন্য এসেছি। এবং বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা রেডিওথেরাপি নিয়ে সুস্থ আছেন।

প্রশ্ন : একটু জানতে চাই, কোথায় গেলে উন্নত প্রযুক্তিটি সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব? 

উত্তর : বর্তমানে আমি ইউনাইটেট হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত আছি। আমাদের এখানে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে। এই মেশিনের মাধ্যমে একদম আধুনিক যে পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে পারি। 

আমরা আশা করব, সব পর্যায়ে সবাই যেন এই সুবিধাটা পায়। আর আরেকটি জিনিস বলতে চাই, কেবল মেশিন থাকলেই হয় না, মেশিনটিকে কীভাবে চালাতে হয় সেটিও জানতে হয়।