জলবসন্ত থেকে রক্ষা পেতে

Looks like you've blocked notifications!
জলবসন্ত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। ছবি : সংগৃহীত

এ সময়টায় জলবসন্তে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। সাধারণত শিশুরাই এই রোগের প্রকোপে পড়ছে বেশি। ভাইরাসবাহিত এই রোগ সংক্রামক, খুবই ছোঁয়াচে। একজন থেকে খুব দ্রুত অন্যজনে ছড়ায়। তবে কেউ একবার আক্রান্ত হলে বাকি জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।

ভেরিসেলা জোস্টার নামে ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটি দেহে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণ দেখা যায় না। সাধারণত ভাইরাস দেহে প্রবেশের ১১ থেকে ২২ দিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এ সময় ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। হঠাৎ করেই জ্বর দিয়ে জলবসন্ত প্রকাশ প্রায়। জ্বরের সঙ্গে শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ ভাব থাকে। জ্বরের দ্বিতীয় দিন শরীরে, বিশেষ করে বুকে ও পিঠে বিশেষ ধরনের গুটি গুটি দেখা যায়। পরে তা বড় হতে থাকে এবং কেন্দ্রে পানি জমতে থাকে। এ থেকেই এর নাম জলবসন্ত। আবরণ খুব পাতলা হওয়ায় অল্পতেই ফেটে যায়। এর পর শরীরের বাইরের দিকের অঙ্গ, যেমন—হাত-পায়ে গুটি দেখা দিতে থাকে। তবে হাত-পায়ের তালুতে গুটি দেখা যায় না। মুখের ভেতরে, মাথার ত্বকেও জলবসন্ত উঠতে পারে। পুরো শরীরে বিভিন্ন বয়সের গুটি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা শুকিয়ে যায়। গুটিগুলো বেশ চুলকাতে পারে। চুলকালে গুটি ফেটে গিয়ে ক্ষত হতে পারে এবং পরে স্থায়ী দাগ দেখা দিতে পারে। তাই চুলকানো থেকে সাবধান। গুটি ওঠার সময় এটি অন্যকে বেশি সংক্রমিত করে। এ সময় বাইরে বের না হওয়া ভালো বা এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। তবে গুটি শুকানো পর্যন্ত সংক্রমিত করতে পারে।

জলবসন্ত তেমন কোনো ক্ষতি করে না। সংখ্যায় খুব অল্প হলেও এর জটিলতার মধ্যে আছে গুটি থেকে রক্তক্ষরণ, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস, মস্তিষ্কে প্রদাহ, কিডনির প্রদাহ, ত্বকের প্রদাহ, অস্থিসন্ধির প্রদাহ। গর্ভবতীদের জলবসন্ত গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান হোন। এ ছাড়া এই রোগের প্রকোপ বেশি। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে বা স্টেরয়েড বা অন্য ওষুধ দিয়ে তা কমিয়ে রাখা হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

প্রতিরোধের জন্য টিকা নিতে পারেন। শিশুদের জন্য ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে প্রথম ডোজ ও চার থেকে ছয় বছর বয়সে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। ১৩ বছরের বেশি বয়সীরা চার থেকে আট সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ নিতে পারেন। তবে গর্ভবতী মায়েদের ও খুব রোগাক্রান্তদের এ টিকা নেওয়া যাবে না।

এ রোগে চিকিৎসা বলতে উপসর্গ কমানোর চিকিৎসা করা হয়। চুলকানি বন্ধে অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন—লোরাটিডিন, ফেক্সোফেনাডিন, সিট্রিজিন সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া ক্যালোমিন লোশন লাগাতে পারেন। নখ ছোট করতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় শিশুদের আঙুলগুলো একত্র করে বেঁধে রাখতে পারেন। এটি পানিশূন্য করে। তাই বেশি করে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যথা থাকলে পেইনকিলার সেবন করতে পারেন। মুখে ক্ষত হলে নরম খাবার খান; ঝাল, লবণ মসলাযুক্ত খাবার কম খান। টাইট কাপড়চোপড় না পরে সুতি ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পরিধান করুন। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যেমন—অ্যাসাইক্লোভির বিশেষ ক্ষেত্রে সেবন করা যেতে পারে। এতে রোগের প্রকোপ কমে মাত্র। গর্ভবতী, নবজাতক, গুটি ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ও কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হলে এ ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।

লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ