স্তন ক্যানসার বাড়ছে কেন?

Looks like you've blocked notifications!

বর্তমানে বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের হার সর্বোচ্চ। স্তন ক্যানসার নিরাময়ে সচেতনতা খুব জরুরি। নারীরা একটু সচেতন হলে স্তন ক্যানসার অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজ ২১ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৮১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান  এবং আহসানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন।

প্রশ্ন : স্তন ক্যানসারের প্রকোপ বাংলাদেশে কতটুকু?

উত্তর : বাংলাদেশে এখন মেয়েদের মধ্যে স্তন বা ব্রেস্ট ক্যানসারের হার সর্বোচ্চ। এটি বেশ চিন্তার কারণ। গত এক দশকেও এই পরিমাণ ছিল না। তিন-চার বছর ধরে বিষয়টি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটা আরো বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রশ্ন : এই বাড়ার কারণগুলো কী?

উত্তর : কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের মিল না থাকলেও আমাদের দেশে স্তন ক্যানসারের হার বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয় খাদ্যের অভ্যাস। তবে স্তন ক্যানসারের আরো অনেক কারণ রয়েছে। আগে বলা হতো, যাঁরা জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে খাচ্ছেন, যাঁরা সন্তানদের বুকের দুধ কম খাওয়াচ্ছেন তাদের মধ্যে এই রোগ বৃদ্ধির হার বেশি।

প্রশ্ন :  স্তন ক্যানসারের উপসর্গগুলো কীভাবে প্রকাশ পায়?

উত্তর : স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে, আমরা ১৮ বছরের মেয়ের মধ্যেও স্তন ক্যানসারের লক্ষণ দেখেছি। আবার ৭০ বছরের একজন বৃদ্ধার মধ্যেও দেখেছি। সাধারণত প্রজনন বয়সের পর থেকে এই সমস্যা হয়। উপসর্গের ক্ষেত্রে হয়তো স্তনে একটা ব্যথাহীন চাকা থাকে। অথবা বগলের নিচে গোটা বা চাকা বা পিণ্ড থাকে সেটা থেকেও ক্যানসার হতে পারে। তবে একেবারেই যে স্তন ক্যানসারের রোগীদের ব্যথা থাকে না তা নয়। কখনো কখনো থাকতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা হীন হয়ে নিশব্দে বড় হতে দেখা যায়। এ ছাড়া তেমন আলাদা কোনো উপসর্গ নেই।

প্রশ্ন : আগে থেকে ক্যানসার স্ক্রিনিং করা বা বোঝার কী কোনো উপায় রয়েছে? সেটি কখন করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর :  এটার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি  যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেই সেটা হলো, নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা। এটা করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে গোসলের সময়। গোসলের সময় যখন সাবান লাগানো হয় তখন সাধারণত এটা হাতে বেশি অনুভব করা হয়। তবে এটা করতে হয় মাসিক শেষ হওয়ার সাত দিন পরে। এর আগের সময়গুলোতে করলে স্তন একটু শক্ত হয়ে থাকে। তখন এটা ভালো মতো বোঝা যায় না।

যদি সন্দেহ হয় তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারবেন আসলে বিষয়টি কী। আর যাদের বয়স ৫০-এর বেশি তাদের আমরা প্রতিবছরে একবার করে মেমোগ্রাম করতে বলি। আর যাদের সন্দেহ হচ্ছে বা মা- ফুফু –খালা- বোনদের মধ্যে কারো স্তন ক্যানসার হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলি পরীক্ষাটি নিয়মিতভাবে করতে হবে। ৪০ বছরের নিচে হলে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে বলি। আরেকটি বিষয়কে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটা হলো এমআরআই করা।

প্রশ্ন : এই জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আপনারা কী দেখেন?

উত্তর : এরপর আমরা সাধারণত ফাইন নিডেল এসপিরেশন সাইটোলোজি করি। অথবা বেশি গুরুত্ব দেই কোর বায়োপসির উপর। কেননা এখন রিসিপটর স্টেটাসটা জানা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। হরমোনাল রিসিপটর ইতিবাচক (পজিটিভ) কি না দেখে থাকি। যদি গোটা ছোট থাকে তবে অস্ত্রপচার করে ফেলার সুযোগ রয়েছে। আর যদি বড় থাকে, তবে রিসিপটর ইতিবাচক (পজিটিভ) হলে এক রকম চিকিৎসা এবং রিসিপটর নেতিবাচক ( নেগেটিভ) হলে আরেক রকম চিকিৎসা করতে হয়। যেকোনো পর্যায়েই রোগী আসুক না কেন ক্যামোথেরাপি দিয়ে ছোট করে অস্ত্রপচার করে ফেলতে হবে।

পদ্ধতিগতভাবে সারা পৃথিবীতে এখন স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও আমরা বিদেশের মতো করে চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছি।

প্রশ্ন : রোগীর তুলনায় বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক আছেন কি না?

উত্তর : স্তন ক্যানসারের রোগীরা প্রধাণত আসে সার্জনদের কাছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার্জনরা অনকোলজিস্টদের কাছে রোগী পাঠিয়ে দেন। অথবা মতমত দেন কী করা যায় এ বিষয়ে। তবে যাঁরা মতামত দেবেন, এই অনকোলোজিস্টদের সংখ্যা অনেক কম।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান অ্যান্ড সার্জন এফসিপিএস ডিগ্রি দিচ্ছে তবে এটাও পর্যাপ্ত পরিমাণে নয়। সেজন্য আমরা বলছি , এটাকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার দেওয়া হতো এবং বিভাগগুলোকে যদি কলেজ করে দেওয়া হতো তাহলে ভালো হতো। তাহলে হয়তো অনেক বেশি মানবসম্পদ তৈরি করা যেত। এদের যদি আমরা ছয় মাস বা এক বছরে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তাহলে একেবারে বিশ্বমানের সেবা বাংলাদেশেও দেওয়া সম্ভব হতো।

প্রশ্ন : স্ক্রিনিংয়ের বিষয়টি যে রয়েছে সে ব্যাপারে কী প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো কর্মসূচি রয়েছে?

উত্তর :  সরকারিভাবে কিছু কর্মসূচি আছে। যেমন সার্ভাইক্যাল ক্যানসার এবং স্তন ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং করা হয়। দেশের প্রায় ২৬টি স্থানে এদের সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া আমি বেশি গুরুত্ব দেই আর তা হলো মেয়েদের মধ্যে এসব বিষয়ে সচতেনতা বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন : অনেকে হয়তো বুঝেও লজ্জা পেয়ে বলতে চান না। তাদের ক্ষেত্রে আপনাদের কী পরামর্শ?

উত্তর : এসব ক্ষেত্রে আসলে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নারীর জন্য যে সংগঠনগুলো আছে তারা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এ সম্বন্ধে সচেতন হওয়া সম্ভব। কেননা স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় তাহলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমিকভাবে নিরাময় করা সম্ভব।