যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ কী?

যক্ষ্মা একটি প্রাচীন রোগ। এক কালে এই রোগটি বেশ আতঙ্কের বিষয় ছিল। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৪২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রফিক আহমেদ। তিনি বর্তমানে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বক্ষব্যাধি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একটি কথাই আছে, ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা’। এই তথাকথিত ভয়ঙ্কর রোগটি কিন্তু এখন আর অতটা ভয়ঙ্কর নেই। একটু জানতে চাইব যক্ষ্মা রোগটি আসলে কী? কেন এটিকে এত ভয়ঙ্কর বলা হতো এক সময়?
উত্তর : যক্ষ্মা অতি প্রাচীন রোগ। যিশু খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার সাতশ বছর আগে প্রথম ইজিপ্টের এক মমির ভেতর যক্ষ্মা রোগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। এর ওপরে গবেষণা করতে করতে, ১৮৮০ সালে জন পক্স পালমোনারি টিউবার কোলোসিসের ভ্যাকসিন ভিসিজি আবিষ্কার করেন। তার দুই বছর পর ৮২ সালে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করা হয়।
এরপর যক্ষ্মা রোগের যে জীবাণু মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবার কোলোসিস, এটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া নয়। এটি সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন ধর্মী ব্যাকটেরিয়া।
টিউবার কোলোসিসের ব্যাকটেরিয়া নির্ণয়ের জন্য সময় লাগে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। অথচ অন্য ব্যাকটেরিয়া তিন দিনের ভেতর কালচার করা যায়। টিউবার কোলোসিসের জীবাণু আমাদের দেশে খুবই ভয়াভহ অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর ২২টি দেশে, টিউবার কোলোসিসের রোগী খুব বেশি পাওয়া যায়। এর ভেতরে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় চিন অথবা ভারতে। আমাদের অবস্থান এর আগেও ছিল ষষ্ঠ। বর্তমানে সপ্তম।
প্রশ্ন : রোগটি কেন এত বাড়ছে? আমাদের দেশে তো বিশ্বমানের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।
উত্তর : আসলে একে বায়ুবাহিত রোগ বলি আমরা। বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। একজনের হয় তো টিবির জীবাণু রয়েছে, পালমোনারি টিউবার কোলোসিস যাকে বলি, প্রতিবার তার হাঁচি কাশির সাথে, সাড়ে তিন হাজার ড্রপলেট বের হয়। এটা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। বাতাসের সাথে ভেসে বেড়ায়। সেটি যার নাক দিয়ে ফুসফুসে যাবে, তারই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। যক্ষ্মা রোগ ও সংক্রমণ দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। যেমন পরিসংখ্যানে বলে, ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী সবার শরীরের ভেতরেই যক্ষ্মার জীবাণু আছে। কিন্তু তারা ভোগে না। urgentPhoto
কিন্তু জীবনের কোনো এক সময় দেখা যাচ্ছে তারা, ভুগছে বিষয়টিতে।
প্রশ্ন : ঝুঁকির মধ্যে কারা পড়ছেন? কারা এই্ রোগে বেশি ভুগে থাকেন?
উত্তর : যক্ষ্মার হাসপাতাল আছে, সেখানে যক্ষ্মা রোগীদের সাথে কাজ করছে, ওদের যক্ষ্মা রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার যারা বস্তিতে থাকে, যারা গরিব, অপুষ্টির শিকার, ডায়াবেটিসের রোগী, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ক্যানসারের ওষুধ পাচ্ছে একজন, তারপর যেকোনো কারণে হয়তো সাইট্রোটক্সিন ওষুধ দেওয়া লাগছে- তাহলে শরীরের যে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটা হ্রাস পেলে, এই সমস্যা হতে পারে। যেমন গর্ভবতী নারীদের টিবি রোগ হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু গর্ভধারণের পর টিবি রোগ হয়ে গেছে। যেহেতু তাদের তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
প্রশ্ন : যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ কী?
উত্তর : ১০০ জন টিবি রোগী যদি আমরা শনাক্ত করি, এর মধ্যে ৮০ জনই পাবো ফুসফুস টিবি।
প্রশ্ন : একটি জিনিস বলা হয়, শরীরের আসলে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে টিবি রোগ হয় না। এটি আসলে কতটা সঠিক?
উত্তর : ঠিক। চারটি জায়গায় যক্ষ্মা হয় না। চারটি জায়গা ছাড়া শরীরের প্রতিটি অংশে এটি হয়। এমনকি ত্বকেও যক্ষ্মা রোগ হতে পারে।
প্রশ্ন : আবার একটু লক্ষণে ফিরে যাই। লক্ষণ কী?
উত্তর : ফুসফুসের টিবির লক্ষণ দুই রকম। একটি হলো, জেনারেল। আরেকটি হলো সিস্টেমিক। জেনারেলের ভেতর হলো, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, দুর্বল লাগা, শরীর খুব ঘামা।
আর বিশেষ যেগুলো হয়, সেগুলো হলো : কাশি হওয়া, কফ বের হওয়া, কফের সাথে রক্ত যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ও বুক ব্যথা।
প্রশ্ন : কখন রোগীদের আপনাদের কাছে আসা উচিত?
উত্তর : দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহের কাশি হলো, অ্যান্টিবায়োটিকে যাচ্ছে না, তখনই রোগীর টিউবার কোলোসিস হয়েছে কি না এটি দেখার জন্য আসা উচিত।
প্রশ্ন : কী কী ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়?
উত্তর : কিছু সাধারণ পরীক্ষা আছে, যেমন : সিবিসি ও টিএসআর। এখানে টিএসআর ‘ট্রিপল ফিগার’ হয়ে যায়।১০০ বা একশর বেশি হয়ে যায়। মানটক্স টেস্ট করা হয়। আরো কিছু পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি বুকের পরীক্ষা তো রয়েছে।স্পুটাম ফর এএফবি এটি করে একদম সঠিকভাবে শনাক্ত করা হয়।