মধ্য বয়সে চোখে সাধারণত কী ধরনের সমস্যা হয়

Looks like you've blocked notifications!

মধ্য বা প্রবীণ বয়সে চোখে সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি কিছু বিশেষ সমস্যা হয়। এ নিয়ে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩৪৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নাফিস আহমেদ চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। 

প্রশ্ন : মধ্যবয়সী বা তার বেশি বয়সের লোকদের সাধারণত চোখে কী ধরনের সমস্যা হয়?

উত্তর : আমরা আসলে বিষয়টিকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি  হলো ইনফেকটিভ। মানে ইনফেকশন; জীবাণুঘটিত কারণে। আরেকটি নন-ইনফেকটিভ বা জীবাণুঘটিত নয়। এখন জীবাণুঘটিত যেসব রোগ তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হলো কর্নিয়াল আলসার। আরেকটি হলো ড্যাকরায়োসিসটাইটিস; নেত্রনালির প্রদাহ বা সংক্রমণ। এই দুটো খুব প্রচলিত। এ ছাড়া চোখ ওঠাও হয়। আবার আঘাত লাগার কারণে সমস্যা হতে পারে। এগুলো হলো রোগ জীবাণুর কারণে যেটা হয়ে থাকে সেই সমস্যা। 

আর জীবাণু ছাড়া যেসব রোগ হয় তাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো, রিভারসেবল ব্লাইন্ডনেস। এই অন্ধত্বকে আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারব বা দৃষ্টি দিতে পারব।

আবার যেমন ছানি বা ক্যাটার‍্যাক্ট। এটা অন্ধ করবে, তবে আমরা তার দৃষ্টিটা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারব। আবার আরো কিছু রোগ রয়ে গেছে। যেমন : গ্লুকোমা। এটি আবার এমন একটি রোগ তার যদি দৃষ্টি চলে যায় আর ভালো করা যাবে না। তাই প্রচলিত রোগগুলো হলো গ্লুকোমা, ক্যাটার‍্যাক্ট, কর্নিয়াল আলসার, ড্যাকরায়োসিসটাইটিস, আইরাইটিস, আর আঘাতের কারণে সমস্যা। 
আমাদের গ্রামে লোকেরা ক্ষেতে খামারে কাজ করে, কঞ্চির আঘাত বলেন, ধানের আঘাত বলেন- এগুলো আমরা অনেক পাই। 

প্রশ্ন : এ ছাড়া চোখের পাওয়ারের কারণেও তো একটি সমস্যা হয়?

উত্তর : চোখের পাওয়ার কমার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। রোগের কারণেও হতে পারে। চশমার কারণেও হতে পারে। চল্লিশ বছরের কাছে গেলে পাওয়ারে একটু সমস্যা হয়। এটি বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণত আমরা রিডিং গ্লাস নেওয়ার কথা বলে থাকি। এটি পঞ্চান্ন বছর পর্যন্ত আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। 

প্রশ্ন : চোখের আরেকটি গুরুতর সমস্যা ইরিভারসেবল ডেমেজ। ক্ষতি হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। এটাকে এও বলে থাকেন, তুষের আগুন। এটি হলো গ্লুকোমা। এটা কী? এটা কী ও কাদের বেশি হয়?

উত্তর : আমাদের চোখের ভেতর এক প্রকার পানি তৈরি হতে থাকে। চোখের ভেতরের কিছু রাস্তা রয়েছে যেটি দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। যেকোনো কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে চোখের ভেতর এই পানি যেতে পারে না। পানি যখন চোখের বাইরে না যেতে পারবে তখন চোখের ভেতর একটি চাপ তৈরি করবে। এই চাপ গিয়ে পড়বে আমরা যে অপটিক নার্ভ দিয়ে দেখি, তার ওপর। এটি হলো এমন একটি নার্ভ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আর ফিরে আসবে না বা ফিরিয়ে আনা যাবে না। এটা যদি সঠিকভাবে নির্ণয় না হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এর শেষ ফলাফল হলো অন্ধত্ব। যদি আগে আগে ধরা পড়ে চিকিৎসা করে এই ঝুঁকিটা অতো বেশি থাকবে না। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু সব জায়গায় সেই রকম যন্ত্রপাতি নেই, সুবিধা নেই, অনেক সময় ঢাকার বাইরে এগুলো নির্ণয় হতে অনেক সময় লাগে। তখন দেখা যায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। 

আর একটি হলো মোটিভেশন (প্রেরণা)। আমি হয়তো বুঝিয়ে বলে দিলাম ওষুধটি ব্যবহার করবে। তবে দেখা গেল ছয় মাস বা এক বছর পরে রোগী এসেছে। কোনো ওষুধ ব্যবহার করেনি। এসে হয়তো বলছে ‘কম দেখি’। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করে। এটি আমরা অনেক সময় করি না। করলেও রোগীরা গ্রহণ করে না। 

গ্লুকোমার কারণে একবার কম দেখা শুরু করলে, আগের অবস্থায় আর চোখ ফিরিয়ে আনা যায় না। হয়তো চিকিৎসা দিয়ে ওই পর্যায় পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখা যায়। দেখা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে তার দৃষ্টি বেশি নষ্ট হবে না। পরে ধরা পড়লে তার জন্য অনেক ক্ষতি।

প্রশ্ন : চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইব। রিডিং গ্লাস যেটা সাধারণত দিয়ে থাকেন, সেটা দিয়ে কিছু দিন হয়তো সে ভালো দেখছিল। কিছুদিন পর আবার হয়তো দেখা গেল সে ভালো দেখছে না। এই যে সময় সময় পরিবর্তন করতে হয়- এটি কেন?

উত্তর : আমাদের লেন্সটির এমন একটি গঠন, সারা জীবন ধরে যত দিন বাঁচবেন, বাড়তেই থাকবে। যত ঘনত্ব বাড়বে, লেন্সের মোডিফিকেশন পাওয়ারটা কমে যায়। যত বয়স বাড়তে থাকে এর বদলানোর ক্ষমতাটা কমে যায়। কমে গেলে তার দৃষ্টিটা কমতে থাকে। এতে যদি আমরা ৪০ বছর বয়সে প্লাস এক দিয়ে শুরু করি, দেখা যায় যখন ৪৫ বছর বয়স হয়, তখন এক দশমিক পাঁচ হয়। মানে লেন্সের ঘনত্বটা বেড়ে গেছে। তাই প্রতি এক থেকে দুই বছর পর তারা আসবে এবং পাল্টে নিয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে একবার যার চশমা লাগে তার নিয়মিত করা উচিত। নয় তো সে চোখে দেখবে না। সবাই তো কাজ করে খায়, যেহেতু রিডিং গ্লাসে সমস্যা, কাছে দেখতে সমস্যা, তাই কাজ করতে পারবে না।