হার্ট ফেল মানেই কি মৃত্যু?

হৃদপিণ্ড অকার্যকর বা হার্ট ফেইলিওর বেশ জটিল একটি সমস্যা। হার্ট যখন তার কাজ ঠিকঠাকমতো করতে পারে না,তখন হার্ট ফেইলিওর হয়।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৩৬১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. ফরহাদ উদ্দীন। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হার্ট ফেইলিওর মানে হলো হার্ট অকার্যকর হয়ে যাওয়া। একজন মানুষের যখন হার্ট ফেল করে তখন হার্ট কাজ করতে পারে না। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা কাজ করে হার্ট ফেল করা মানে মৃত্যু। আপনি কী বলেন?
উত্তর : আসলেই তাই। মানুষের মাঝে হার্ট ফেল করার বিষয়ে ধারণা হলো এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। এই বোধ হয় মৃত্যু ঘনিয়ে এলো। বিষয়টি অতটা মারাত্মক না হলেও, রোগটি কিন্তু মারাত্মক বা পরিস্থিতিটা একটু জটিল। হার্ট ফেল করা মানে, হার্ট সেই মুহূর্তে তার কাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারছে না। এখন হার্টের কাঙ্ক্ষিত কাজ কী?
এর কাজ হচ্ছে, হার্ট পাম্প করবে, পাম্প করার মাধ্যমে রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে দেবে এবং সারা শরীর থেকে দূষিত রক্ত হার্টের মধ্যে চলে আসবে। হার্ট প্রসারিত হবে—এই তো? যখন এই সংকোচন প্রসারণটা কাঙ্ক্ষিতভাবে হার্ট করতে পারছে না, তখন সেই পরিস্থিতিকে আমরা সাধারণ ভাষায় বলি, হার্ট ফেইলিওর। এর মধ্যে আরো ভাগ রয়েছে।
প্রশ্ন : হার্ট ফেল করলে করণীয় কী?
উত্তর : হার্ট ফেইলিওরের তো বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে। একিউট লেফট ভেন্টিকুলার ফেইলিওর। এটি একটি মারাত্মক, জটিল, তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি। আরেকটি রয়েছে কনজেসটিভ কার্ডিয়াক ফেইলিওর, এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। দুটোতেই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে। আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখি যে, হার্ট কতখানি দুর্বল। তার মধ্যে এক্স-রে আছে। ইসিজি আছে। আমরা ইকোও পরীক্ষা করি। যার মাধ্যমে আমরা দেখি হার্ট কতখানি দুর্বল। সেই মতো করে আমরা রোগ নির্ণয় করি এবং সেভাবে আমরা নির্ণিত রোগ অনুসারে চিকিৎসা করি। প্রয়োজনে আমরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
প্রশ্ন : হার্ট ফেলে কি সার্জিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়?
উত্তর : প্রথম কথা হলো হার্ট ফেল করলে আমরা রোগীকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করি। পাশাপাশি তাকে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্রয়োজনে বিশ্রাম দিয়ে থাকি। প্রয়োজনে আমরা পানি পান করার বিষয়ে পরামর্শ দেই। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বলি, ওজন কমানো এবং অসুখ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পরামর্শ দেই। তার পর যদি দেখি এটি হার্ট অ্যাটাকের জন্য হয়েছে, তখন আমরা এখানে প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি, রিং লাগানো—এসব চিকিৎসা করে থাকি। আজকাল একেবারে আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে যাকে আমরা বলি আইসিডি। সিআরটি বলে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র রয়েছে, যেটি দুর্বল হার্টকে অনেকখানি শক্তিশালী করে, সেটির ব্যবহার করে থাকি। সেটাতেও যদি সম্ভব হয় কখনো বাইপাস সার্জারির, এটি করার মাধ্যমে হার্টকে আমরা রক্ষা করার চেষ্টা করি। আরো অস্ত্রোপচার রয়েছে।
প্রশ্ন : একজন মানুষ যাতে হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত না হয় সেজন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : যেসব অসুখের কারণে হার্ট ফেলের মতো জটিল একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়, সেসব অসুখকে এড়িয়ে যেতে হবে। দূরে থাকতে হবে। যেমন হার্ট অ্যাটাককে প্রতিরোধ করতে হবে। পাশাপাশি কারো যদি ভালভুলার হার্ট থাকে প্রতিরোধ করতে হবে। বাতজ্বরকে প্রতিরোধ করতে হবে।
পাশাপাশি যদি হার্ট অ্যাটাক হয়েই থাকে, তারপরও আমরা বলি, আপনি হার্টের যত্ন নিন। হয়তো কার্ডিওমায়োপ্যাথি হয়ে গেছে, এর যত্ন নিন যাতে আরো বাড়তে না পারে। ওষুধ খাওয়া, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে আপনি অবশ্যই হার্ট ফেইলিওরের মতো পরিস্থিতি এড়াতে পারেন।
প্রশ্ন : যাদের হার্ট ফেইলিওর হয়ে গেছে, তাদের জীবন যাপন পরিবর্তনের জন্য পরমর্শ কী?
উত্তর : তাদের জন্য পরামর্শ হলো যাদের হার্ট ফেল হয়ে গেছে, তারা কিন্তু মুষড়ে পড়ে। জীবনটাই বুঝি শেষ হয়ে গেল, হার্টের বোধ হয় আর ভালো কিছু অবশিষ্ট নেই। এটা ভাবাটা ঠিক নয়। বরং তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অসুখটা যদি ভালোমতো নিয়ন্ত্রণ করেন আপনি, ঠিকমতো ওষুধ খান, ওজন কমান, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করেন, নিয়মিত ব্যায়াম করেন, নিয়মিত চেকআপে থাকেন, তাহলে পরে হার্ট ফেইলিওর জাতীয় জটিলতাগুলো এড়াতে পারবেন এবং অবশ্যই সুস্থ দীর্ঘমেয়াদি জীবন যাপন করতে পারবেন। কাজেই মুষড়ে না পড়ে, নিজেকে অসুস্থ না ভেবে, চিকিৎসকের কাছে যান এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।