ব্লাড ক্যানসার কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
রক্ত ক্যানসার বা ব্লাড ক্যানসার জটিল একটি রোগ। তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। আজ ২৭ মার্চ এনটিভির ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ১৯৮৭তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিটি হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগের পরামর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক মোস্তফা আবেদীন।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারা বা এর ঝুঁকির কারণগুলো (রিস্ক ফ্যাক্টর) কী?
উত্তর : ক্যানসারের মূল কারণ আমরা এখনো জানি না। কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যার জন্য ক্যানসার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। যেমন : পরিবেশগত কারণ, অতিবেগুনি রশ্মি (আল্ট্রাভায়োলেট রে), আমরা যে খাবারদাবার খাই, এতে কেমিক্যাল থাকে। এসবও ক্যানসারের জন্য ঝুঁকির কারণ।
প্রশ্ন : একজন মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায়?
উত্তর : ব্লাড ক্যানসারে এনিমিয়া হবে। রক্তশূন্যতা হয়, রক্তক্ষরণ হয়, নাক থেকে রক্ত ঝরে, দাঁত থেকে রক্ত, চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধে, জ্বর থাকে, লিমগ্লান্ড (গ্রন্থি )ফুলে যায়।
প্রশ্ন : এসব লক্ষণ অনেক সময় অন্য রোগেও দেখা যায়, তাহলে কী করে নির্ণয় করেন এগুলো ব্লাড ক্যানসারের লক্ষণ?
উত্তর : আমাদের কাছে এ ধরনের রোগী এলেই আমরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করা হয়। আগের লক্ষণগুলো, যেগুলো বললাম সেগুলো থাকে। লিভার বড় হয়ে যায়। এরপর কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় রোগীর রক্তে ক্যানসার হয়েছে। যেমন : রক্ত সিবিসি পরীক্ষা করি। যদি ক্যানসার থাকে তবে সিবিসি করলে দেখা যায় রক্ত কমে গেছে। এর মানে হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। পেরিফেরা ব্লাড টেস্ট করি, এখানে দেখা হয় ক্যানসার কোষ আছে। এর পরে বোনম্যারো পরীক্ষা করতে পারি। সেখানে দেখা যাবে যে ক্যানসার সেল অনেক বেশি।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসার হলে আমরা অনেক আতঙ্ক বোধ করি। ভাবি, সব শেষ হয়ে গেল। আসলে ব্লাড ক্যানসার মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া কি না? আমাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কতখানি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে? ক্যানসারেরও ধরন রয়েছে। কোন ধরনের ক্যানসারের ভালো হওয়ার সুযোগ বেশি?
উত্তর : একিউট মাইলো ব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার ভালো হওয়ার হার কম। কেমোথেরাপি দিতে পারি। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি। তাহলে অনেক রোগী ভালো হয়ে যায়। আবার একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, সেটা কেমোথেরাপিতেই অনেক সময় ভালো হয়ে যায়। এদেরও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করা যায়। আর যেগুলো ক্রনিক লিউকেমিয়া, ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া এগুলো ভালো করা যায় ওষুধ ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে।
প্রশ্ন : কেমোথেরাপি ছাড়া আর কি কোনো বিষয় রয়েছে ক্যানসার রোধ করার জন্য?
উত্তর : রয়েছে। সেটি হলো বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন। এটি আবার অনেক রকমের হয়। অটোলোগাস, রোগীর বোনম্যারো নিয়ে সেটাকে হারভেস্টিং করে ওটাই আবার শরীরের দিয়ে দিই। আরেকটি আছে এলোজিনিক ট্রান্সপ্লান্টেশন। হয়তো রোগীর ভাই বা বোন তাঁর সঙ্গে বোনম্যারো মিলে গেল তার বোনম্যারো যদি আমরা নিয়ে রোগীর শরীরে দিই সেটা এলোজিনিক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : অনেকেই ক্যানসার নিয়ে বেশ আতঙ্কের মধ্যে থাকে, এটা একটি আতঙ্কের বিষয়ও। কেমোথেরাপির বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন এগুলোর মাধ্যমে রোগীর ভালো হওয়ার হার কেমন?
উত্তর : যদি এলোজেনিক করি তাহলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভালো হয়ে যায়। আর যদি অটোলোগাস করি, তাহলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন : একজন রোগী হয়তো ক্যানসারের চিকিৎসায় ভালো হলেন। ভালো হওয়ার পরই কি তিনি দুশ্চিন্তা মুক্ত? নাকি এর পরেও তাঁকে ফলোআপে আসতে হয়, ঝুঁকি কি থাকে। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : একদম ঝুঁকিমুক্ত সেটি বলা যাবে না। তবে তাঁকে সব সময় ফলোআপে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসার আমরা শিশুদের মধ্যেও হতে দেখি। বড়দের এবং শিশুদের মধ্যে ক্যানসারের ধরনের কোনো তারতম্য আছে কি?
উত্তর : অবশ্যই। শিশুদের সাধারণত একিউট লিম্ফোব্লাস্টি লিউকেমিয়া বেশি হয়। বড়দের বেলায় এমএল একিউট মাইলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, লিমকোমাও হয়। ক্রনিক সিজিএল, সিএলএল ইত্যাদি বড়দের বেশি হয়।
প্রশ্ন: চিকিৎসায় ভালো হওয়ার যেই হার, সেই ক্ষেত্রে কি বড়দের ক্যানসারে বা ছোটদের ক্যানসারে কোনো তারতম্য আছে?
উত্তর : অবশ্যই। ছোটদের ক্যানসার বেশি ভালো হয়।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের পথ আছে কি না?
উত্তর : অবশ্যই পথ আছে। নিজেরা সুস্থ থাকার চেষ্টা করবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, পরিমিত খাবেন এগুলোই।