ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুর অসাড়তা
ডায়াবেটিস বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাত ও পায়ের শেষ ভাগের স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে, বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত ও পায়ের শেষ ভাগে অনুভূতি কমে যেতে থাকে, যা রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেমন—অনেকের পায়ের অনুভূতি এত কমে যায় যে, তার পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে; কিন্তু তিনি বলতে পারেন না।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর স্নায়ুর অসাড়তার লক্ষণগুলো হলো—১. হাত-পা ঝিনঝিন করা, ২. হাত-পায়ের শক্তি কমে যাওয়া, ৩. হাত ও পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, ৪. হাত ও পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া অনুভব করা ইত্যাদি।
চিকিৎসার প্রথমে প্রয়োজন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, দ্বিতীয়ত. ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে হাত ও পায়ের মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখা ও নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে যে উপকার হয়, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো :
— ব্যায়ামে শক্তি খরচ হয়, ফলে শরীরের ওজন কম থাকে ও শরীরে চর্বি কমে।
— ব্যায়ামের মাধ্যমে পেঙ্ক্রিয়াসের বেটা সেল থেকে ইনসুলিন তৈরি বৃদ্ধি পায়।
— ব্যায়াম ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয় তাতেই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে; বাড়তি ওষুধের দরকার নাও পড়তে পারে।
— ব্যায়ামের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
— ডায়াবেটিসের জটিলতা কমানো সম্ভব হয়।
— ব্যায়াম রক্তের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায়।
— ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
— ব্যায়াম দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে।
— ঘুম ভালো হয়।
— হাড় ও হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
— হাড়ের জয়েন্টগুলো সচল রাখে।
— বৃদ্ধ বয়সে হাড়ভাঙার একটা প্রধান কারণ অস্টিওপোরসিস বা হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া, বিশেষ করে নারীদের হিপ ফ্রাকচারের ঘটনা দেখা যায়। ব্যায়াম অস্টিওপোরসিস কমায়।
— ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
— ব্যায়াম করলে শরীরে বার্ধক্য জেঁকে বসে না। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের একই বয়সের লোকদের থেকে কম বয়স্ক দেখায়।
— ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধেও উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস দেরিতে হবে অথবা নাও হতে পারে।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা।