জ্বর এলে নবজাতককে চিকিৎসকের কাছে নিন

শিশু জন্মের পর তার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এসব সমস্যা এবং এর প্রতিকার নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৭৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নাসিম জাহান জেসি। বর্তমানে তিনি আজগর আলী হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাধারণভাবে শিশুদের কী কী রোগব্যাধি হয়?
উত্তর : সাধারণত শিশুরা একেক বয়সে একেক ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে, যেমন—এক মাসের নিচে যারা নবজাতক, তাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা জন্মের পরপর হতে পারে। আবার জন্মের কিছু পরও হতে পারে। জন্মের পরপর হওয়া এবং জন্মের পরে হওয়া—এ দুটোর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যেমন : জন্মের পর যদি কোনো কারণে জ্বর আসে, জ্বর এলে নবজাতকের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ভাবলেন, ‘জ্বর এসেছে, আমি একটু পর্যবেক্ষণ করি।’ সে রকম কোনো সুযোগ নেই। এটি খুব জটিল বিষয়।
নবজাতকের জন্মের পরপর দেখা যায় নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো শিশুটির শ্বাসকষ্ট হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাবে। দেখা যায়, নবজাতক প্রতি মিনিটে ৪০ থেকে ৬০ বার শ্বাস নেয়। এর চেয়ে যদি বেশি হয়, তাহলে আমরা বুঝব, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমন দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। urgentPhoto
সংক্রমণের আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন : সে যদি নির্জীব হয়ে যায়, খেতে না চায়, যদি দুর্বল হয়ে যায়, আগে খুব ভালোভাবে মায়ের দুধ খেত, এখন সেটি কমে যায়—মায়ের এটা খেয়াল করতে হবে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
জন্মের কিছু পরে যে সমস্যা দেখা দেয়, এর মধ্যে মস্তিষ্কে সংক্রমণ বেশি হয়। একে ম্যানিংজাইটিস বলি। দেখা যায়, তাদের খিঁচুনি হয়, সঙ্গে জ্বরও থাকে। জ্বর ও সঙ্গে খিঁচুনি থাকলে অবশ্যই আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : মা কীভাবে বুঝবেন শিশুকে এখন চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে?
উত্তর : সুস্থ শিশু জন্ম নিলে সে স্বাভাবিকভাবে কান্না করবে, খাবারের যে চাহিদা সেটা খুব ভালো থাকবে। এই খাবারের চাহিদা যদি কমে যায় কোনো কারণে, সতর্ক হতে হবে। একটি শিশু আগে হয়তো খুব ভালো খেত, হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে সে তেমন খাচ্ছে না এবং খেলাধুলা করছে না। তার জ্বর এসেছে। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে পারবেন বাচ্চাটা অসুস্থ এবং তাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
অনেক সময় শিশুদের নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন দেখা যায়, শ্বাস নিতে পারছে না। খুব বিরক্ত হচ্ছে। সে দেখা যাবে খেতে চাইছে না। গলায় ঘড়ঘড় শব্দ হবে। বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হবে। তখন যদি আমি তাকে সাধারণ স্যালাইন দিই, নাকটা একটু পরিষ্কার করে দিই, তখন শিশুটি শান্ত হয়ে আসে। এর পরও যদি দেখা যায় তার অস্বস্তি আছে, তখন বুঝতে হবে তার অন্য কোনো সমস্যা আছে। তখনই তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : শিশুর এসব বিষয় থেকে প্রতিরোধের উপায় কী?
উত্তর : একটি ছোট শিশু মায়ের শরীরে সুরক্ষিত পরিবেশে থাকে। মায়ের পেটের গরম একটি পরিবেশ থেকে সে বেরিয়ে আসছে। তখন তাকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে হবে। ঠান্ডা থেকে রক্ষার জন্য দেখা যায়, আমরা বাচ্চাকে অনেক কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখি। এটা বোঝার উপায় হলো, মা যদি একটি পোশাক পরে শীত অনুভব করে, তখন বুঝতে হবে তার শিশুটির ঠান্ডা লাগছে। তখন তাকে সেই পরিমাণ কাপড় পরাতে হবে। মা যদি তিনটি কাপড় পরে স্বাভাবিক বোধ করে, তখন শিশুকে তিনটি কাপড় পরাতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বেশি কাপড় পরিয়ে রাখলে গরমের মধ্যে ঘেমে তার ঠান্ডা লাগতে পারে। সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের সর্দি-কাশি-ভাইরাল জ্বর আছে, তাঁরা যদি বাচ্চাকে কোলে নেন, জড়িয়ে ধরেন সে ক্ষেত্রে বাচ্চার শরীরে জীবাণু চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে যদি সুরক্ষা দেওয়া যায় ভালো হয়। তাঁদের হাত ধুয়ে নিলে ভালো হয়। এমনকি মায়েরও যদি সর্দি-কাশি-জ্বর হয়, তখন মা যদি মাস্ক পরে নেন, হাত ধুয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাহলে হয়তো এর থেকে রক্ষা পাবে।
আরেকটি যে সমস্যা দেখা যায়, শিশুর পেটের নাভিটা ফুলে যায়। এক বছর বয়স থাকে। অনেক চিন্তিত হয়ে যায়, এটি অস্বাভাবিক কি না? এটা আসলে খুব স্বাভাবিক ঘটনা, এক বছর পর এটা কমে যাবে। এর জন্য কোনো চিকিৎসা লাগবে না।
ছেলে শিশুর অন্ডকোষ সাধারণত দুটি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি নেই। অনেকে মনে করে, একটি নেই তো অসুবিধা নেই। এই একটি নেই, এটি কিন্তু খুব জটিল সমস্যা। একটি যদি পেটের ভেতরে থাকে, এটি অন্য সমস্যা চলে যেতে পারে। এটা অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। এবং সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : সুস্থ শিশুর ক্ষেত্রে রুটিন চেকআপের বিষয়ে কোনো পরামর্শ আছে কি?
উত্তর : নিয়মিত চেকআপ তো অবশ্যই করতে হবে। শিশু জন্মের পরপর দু-তিন দিন সে হয়তো হাসপাতালে থাকে, তখন শিশু চেকআপে থাকে। এর পর জন্মের পর শিশুর কিছু সমস্যা থাকে, যেমন আগেই বলেছি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, তার জন্ডিস হয়। সেটা সাধারণত তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। তখন সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাই আমরা বলি, যখনই হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়ে যাবে, তখন তিন থেকে চার দিন পরে চিকিৎসকের কাছে ফলোআপে নিয়ে আসতে হবে। অথবা যেকোনো শিশু যদি আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বা অন্য কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হয়, অবশ্যই তাকে ছুটির পর আরেকবার দেখিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া তো শিশুর রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু ভ্যাকসিন বা টিকা আছে। প্রত্যেক মা যেন শিশুকে ভ্যাকসিন দেন, এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।