ঘামাচি হলে কী করবেন?

গরমে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। তাই এই সময়ে কিছু বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৯১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আহম্মেদ আলী। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং বর্তমান মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এই সময়ে সাধারণত কী কী রোগব্যাধি নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসছে?
উত্তর : এবারের গরমটি কিন্তু একটু ব্যতিক্রম। কারণ, আমরা সাধারণত দেখি শীত গিয়ে মার্চ এপ্রিলের দিকে আস্তে আস্তে গরমের প্রবণতাটা শুরু হয়। কিন্তু এ বছর খেয়াল করে দেখবেন এপ্রিলেই গরম একেবারে তুঙ্গে চলে গেছে। একেবারে ৪২ হয়ে গেছে। এটা অন্যান্য বছর সাধারণত আগস্টে গিয়ে হয়। এবার একটু অস্বাভাবিক গরম, খুব ভাপসা ও অস্বস্তিকর। আমরা তো পরিবেশের মধ্যে থাকি। পরিবেশের বাইরে যেতে পারি না। মাছ যেমন পানির মধ্যে থাকে আমরা একটি পরিবেশের মধ্যে অবস্থান করি। পরিবেশের প্রভাব সবচেয়ে প্রথমে, শুরুতে ত্বকেই পড়ে। তাই ত্বকে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। আমি যদি খুব সাধারণভাবে বলি, তাহলে বলা যায় যে শুরুতেই আমাদের খুব গরম অনুভব হবে। তেলটা বেশি বের হবে। ঘামটা বেশি হবে। ঘাম, তেল যদি বেশি বের হয় তার কারণে কিছু সমস্যা হবে। যেমন ঘামাচি। যারা খুব বেশি ঘামের বা গরম পরিবেশে কাজ করেন, তাদের ঘামাচি হতে পারে। ঘামাচি একটি সাধারণ ছোট রোগ, কিন্তু কষ্টটা অনেক বেশি যখন হয়; অনেক সময় প্রচণ্ড চুলকায়, অস্বস্তি লাগে। একটা পর্যায় গিয়ে অনেক বেশি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। আবার কিছু ফোড়াজাতীয় রোগও এই সময় হয়। গরমের থেকে এটি হয়। শিশুদের বেলায় বেশি হয়। এর কারণ হলো, ত্বক স্যাঁতসেঁতে থাকে। তার থেকে তেল, ঘাম, মরা চামড়া ময়লা এগুলো সব একসঙ্গে হয়ে সংক্রমণ হয়ে যায়। এ থেকেই এই ফোড়াটি তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এটি কোথায় হয়? কোনো নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে কি না?
উত্তর : শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয়। প্রচণ্ড ব্যথা হয়, পেকে যায়। সাদা পুঁজ হয় ভেতরে। দেখা যায়। একে সামার বয়েল বলে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্রীষ্মকালীন ফোড়া বলা যেতে পারে। শরীরে এই সময় বেশি ঘাম ও তেল বের হওয়ার কারণে এ রকম কিছু জিনিস হয়। এই জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা উচিত।
প্রশ্ন : ঘামাচি যাতে তীব্র আকার ধারণ না করে, এ জন্য কোন কোন বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে?
উত্তর : জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন, শীতের সময় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়, গরমের সময় ঠিক এর উল্টোটা করতে হয়। সাধারণত একটি উদাহরণ দিচ্ছি, আমরা অনেক সময় শীতের সময় রোদ পোহাতে আরাম বোধ করি। রোদে ইচ্ছা করে যাই, খামোখা যাই। এটি গরমের সময় করলে তো হবে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া, কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। যতটুকু পারা যায়। ধরুন, যার এসি আছে সে সেই রুমে থাকবে। যার সেটি নেই, ইলেকট্রিক পাখা আছে, সেটি ব্যবহার করবে। যার সেটিও নেই হাতপাখা ব্যবহার করুন। যার সেটিও নেই ঘরটি বা পরিবেশটি একটু ভালো রাখুন যাতে খোলা বাতাস আসে। যার যার সঙ্গতি অনুযায়ী সে যতটুকু আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে পারবে, সেটির চেষ্টা করুন।
তারপর ধরুন গোসলের বিষয়ে, যেহেতু আমাদের শরীর আঠা আঠা হয়ে যায়, স্যাঁতসেঁতে রয়ে যায়, ঘামেন বেশি তার কষ্ট এই সময় আরো বেড়ে যায়। ইচ্ছে করলে সে একবার সকালে গোসল করে বাইরে গেল, যদি সারা দিন ঘামের ভেতরে থাকে ইচ্ছে করলে বাইরে থেকে ফিরে আবার গোসল করতে পারে।
প্রশ্ন : শরীর ঠান্ডা রাখার কথা বলছিলেন?
উত্তর : পোশাকের বিষয়টি বলতে চাই। ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পড়তে হবে। আটসাট কাপড় পরলে কিন্তু ঘাম শুকাবে না। আরো স্যাঁতসেঁতে থাকবে, অস্বস্তি বাড়বে। এই জন্য যত ঢিলেঢালা কাপড় পরা যায়, তত ভালো। এতে আলো-বাতাস যাবে। আর কাপড়টি সুতির হতে হবে। সিনথেটিক কাপড়ে ঘাম শুকায় না। অনেক পার্শ্ববর্তী দেশে কিন্তু আমাদের চেয়ে তাপমাত্রা অনেক বেশি। খুব গরম লাগে। কিন্তু ঘামে না। এর কারণ হলো আমাদের আবহাওয়া। আমাদের দেশে আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণে আমরা ঘামি। কিন্তু ওই সব দেশে আর্দ্রতা কম। তবে তাপমাত্রা বেশি। অনেক দেশে গরম লাগে, তবে ঘামে না। এই জন্য অস্বস্তি লাগে। আমাদের দেশে ঘাম বেশি হওয়ার কারণে ত্বকের এই সমস্যাগুলো হয়। ত্বকের অনেক সমস্যার উৎস এই ঘাম ও ঘামাচি।
প্রশ্ন : ঘামাচি থেকে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : প্রথম কথাই হলো তার শরীরে একটি অস্বস্তিভাব থাকবে। কারো কারো প্রচণ্ড রকম চুলকানি হতে পারে। এটি খুব অল্প মাত্রার হতে পারে এবং তীব্র মাত্রার হতে পারে। অনেক সময় আবার চুলকাতে চুলকাতে ওতে সংক্রমণ হয়। পেকে ফোড়ার মতো পাকা পাকা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এদের উচিত হবে বেশি মাত্রায় হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চুলকানির বিরুদ্ধে কিছু ওষুধ আছে সেগুলো খাওয়া ও লাগানোর সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
আর নিজের যেটি করণীয় সেটি হলো গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলা। ঠান্ডার ভেতর থাকা। আরামদায়ক কাপড় পরা। তাহলে আস্তে আস্তে অল্প মাত্রার হলে এমনি এমনিই কমে যেতে পারে।