কালিজিরা মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সহায়ক

একটি শিশু জন্মের পর বিভিন্ন ধরনের শরীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ ব্যাপারে মা এবং পরিবারের লোকজনের সচেতন থাকা জরুরি।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মেজবাহ উদ্দিন। বর্তমানে তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : নবজাতকের সাধারণ সমস্যাগুলো কী কী?
উত্তর : সেগুলো বলার আগে আমাকে বলতে হবে নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি? নবজাতক বলতে আমরা বুঝি জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত। সেটাই নবজাতক। সাধারণ সমস্যার মধ্যে আমি যা দেখি এ দেশে সেটি হলো, বাচ্চা প্রথমে হলে কয়েক দিন তো একটু কম দুধ পায়, এই জন্য বাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে। এর জন্য আমি দেখতে পাই বহু চিকিৎসক একটি চিরকুট লিখে দেয় যে ওই দুধ কিনে এনে খাওয়ান। এটা একটা বাজে অভ্যাস। বাচ্চা হওয়ার পর পর মায়ের স্তনে একটু কম দুধ আসবে এটাই স্বাভাবিক। একে মেনে নিতে হবে। বাচ্চার কান্না মায়ের দুগ্ধ উৎপন্নে সাহায্য করে। বাচ্চাকে পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। তাতে বাচ্চা পক্ষান্তরে দুধ পাবে কয়েক দিন পর। এই অভ্যাসটা না করাতে হয়েছে কী, প্রচুর বাচ্চা বোতলের দুধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিছুদিন আগেও আমরা স্তন পানের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগেরও ওপরে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এটা দিন দিন আবার কমের দিকে চলে আসছে। এটা একটি বড় সমস্যা। স্তন পানটা আমরা সঠিকভাবে করাতে পারছি না। এই ক্ষেত্রে বাবা-মাকে সচেতন হওয়া উচিত।
শুধু শিশু চিকিৎসক নয়, জেনারেল প্র্যাকটিশনার যাঁরা আছেন, তাঁদেরও বলা উচিত একটু ধৈর্য ধরুন, মায়ের দুধ আসবে।
মাকেও নিশ্চিত করা যায়, এটাই স্বাভাবিক। আপনি একটু ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেন, একটু দুধ খান, দরকার হলে একটু কালিজিরা খান। কালিজিরা দুগ্ধ উৎপাদনে সহায়তা করে। এগুলো হলো একটি বিষয়।
দ্বিতীয় হলো, একটি প্রচলিত অসুখ। তিন-চার দিন পর বাচ্চা একটু জন্ডিস ভাব দেখা দেয়। হলদে হয়ে যায়। এটা কিন্তু স্বাভাবিক একটি সমস্যা। আমাদের যে শিশুগুলো ফুল টার্ম হয়, তাদের ৬০ ভাগ বাচ্চাদের একটু হলেও জন্ডিস হবেই। অপরিপক্ব যে শিশুগুলো হয়, তার ৮০ ভাগের কিছু না কিছু জন্ডিস হয়। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। যদি আমরা মায়ের রক্তের গ্রুপ জানি এবং নবজাতকের রক্তের গ্রুপটা জানি। যদি মায়ের কোনো কারণে নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ হয়, আর শিশুর যদি পজিটিভ রক্তের গ্রুপ হয়, এই সব ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু চিন্তার কারণ। এই সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। যেখানে জটিলতা নেই, সে ক্ষেত্রে অস্থির হওয়ার কারণ নেই। যেই ক্ষেত্রে বাচ্চা ও মায়ের রক্তের গ্রুপের তেমন হেরফের নেই, সেই ক্ষেত্রে অস্থির হওয়ার কারণ নেই।
এসব ক্ষেত্রে দেখতে হবে বাচ্চা ঠিকমতো দুধ খায় কি না। বাচ্চা ঠিকমতো ঘুমায় কি না। বাচ্চা ঠিকমতো প্রস্রাব-পায়খানা করে কি না। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরেকটি বিষয় বলি, অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা গেল ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে বাচ্চা প্রস্রাব করল না, মা-বাবা হয়তো অস্থির হয়ে পড়ে। এতে অস্থির হতে হবে না। কারণ, অনেক শিশুরা জন্মকালীন মায়ের পেটে থাকতেই প্রস্রাব করে দিয়ে আসে। সেই বাচ্চাগুলো পৃথিবীতে এসে প্রস্রাব করতে ২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা, এমনকি ৭২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এখানে অস্থির হওয়ার কারণ নেই। দেখতে হবে তার অন্যান্য বিষয় কেমন। বাচ্চা ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, বাচ্চা ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না, বাচ্চার ওজন ঠিক আছে কি না, সবকিছু ঠিক আছে কি না। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু দেখা যায় ২৪ ঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা প্রস্রাব করল না, দেখা গেল এমন হাসপাতালে নিয়ে গেছে, হাসপাতাল ব্যবসা করার জন্য বসে আছে, তারা তাকে ভয় দেখিয়ে ভর্তি করিয়ে দিল। একটা স্যালাইন দিয়ে দিল। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দিল, কিছু টাকা খসিয়ে নিল। তাই মা-বাবার জানতে হবে প্রস্রাব না হলে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আমরা একেবারে চিন্তিত নই, ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। পাশাপাশি নবজাতককে ঘন ঘন বুকের দুধ চোষাতে হবে। চুষলেই তার বুকের দুধ আসবে। না চুষলে বুকের দুধ আসবে না।
আপনারা নিশ্চয় জানেন দুধ হওয়ার জন্য দুটি হরমোনের খুব প্রয়োজন। একটি অক্সিটোসিন। আরেকটি প্রলেকটিন। চোষার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে গিয়ে সেটা ওখান থেকে নিঃসৃত হয়। পক্ষান্তরে এসে প্রোল্যাকটিন দুধ তৈরিতে সাহায্য করে। অক্সিটোসিস কনট্রাকচার হতে সাহায্য করে।
পক্ষান্তরে মায়ের জরায়ু সুরক্ষায় সাহায্য করে। এতে পোস্ট পার্টম হেমোরেজ কমে আসে।