উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী?
বর্তমান জীবনে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাটি সচরাচর। শুধু বয়স্কদের নয়, অনেক তরুণের ক্ষেত্রেও এখন উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা দেয়। এই সমস্যার কারণে দেহে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। আজ ৫ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৯৬তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নূর আলম।
প্রশ্ন : হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ শব্দটির সঙ্গে সবাই কম-বেশি পরিচিত। তবু জানতে চাচ্ছি উচ্চ রক্তচাপ বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : সবার শরীরেই রক্তে নির্দিষ্ট একটি চাপ থাকে। সিস্টোলিক যেটা সেটা যদি ১৪০ বা তার বেশি হয়, আর ডায়াস্টোলিক বা তার নিচেরটা যদি ৯০ বা তার বেশি হয়, তাহলেও তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।
প্রশ্ন : এই উচ্চ রক্তচাপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে এবং মানুষের জীবনে এর কারণে কী কী জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : উচ্চ রক্তচাপ তো অনেক জটিলতা তৈরি করে। তার আগে আমরা একটু জেনে নিই উচ্চ রক্তচাপের কী লক্ষণ রয়েছে বা এটা হলে মানুষ কী বোধ করে।
অনেক সময়েই দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপের কোনো উপসর্গ নেই। জ্বর বা অন্য কোনো কারণে রোগী চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন, চিকিৎসক হয়তো প্রেসার মেপে দেখলেন উচ্চ রক্তচাপ। আবার কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন : মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, বমি ইত্যাদি। রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকের মধ্যে উপসর্গ থাকে না। আবার অনেকের উপসর্গ থাকে।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো কী কী?
উত্তর : শতকরা ১০০ ভাগ রোগীর ৯৫ ভাগের মধ্যে সাধারণত কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকি পাঁচ ভাগের মধ্যে কারণ থাকে। এর মধ্যে রয়েছে কিডনিজনিত রোগ, কিছু হরমোনাল রোগ, কিছু রক্তনালির রোগ ইত্যাদি।
প্রশ্ন : লক্ষণগুলা প্রকাশ পেলে তার আসলে কী করণীয়?
উত্তর : যেই উপসর্গগুলোর কথা বললাম সেগুলো উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও অন্য কোনো কারণে হতে পারে। আর এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এখন তো ঘরেই অনেকে রক্তচাপ মাপার মেশিন কিনে রাখেন। অনেকেই অনেক শিক্ষিত, রক্তচাপ মাপতে পারেন। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে রক্তচাপটা একটু দেখে নিলে এ সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারেন।
প্রশ্ন : যখন রোগী আপনাদের কাছে আসছে এবং আপনারা সমস্যাটি নির্ণয় করছেন, তখন চিকিৎসা কী হয়?
উত্তর : লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে, লবণ খাওয়া নিষেধ করি। তাঁর জীবনযাত্রায় একটু পরিবর্তন আনতে বলি। যদি তাঁর ওজন বেশি থাকে, সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে বলি। এরপর আমরা তাঁকে ওষুধ দিই।
প্রশ্ন : এই ওষুধগুলো কি সারা জীবন খেতে হয়? এই ভয়ে হয়তো ব্যক্তিটি আর চিকিৎসা করতে যান না। এ সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর : ওষুধ তো আসলে খেতেই হবে। রোগীরা যখন জিজ্ঞেস করেন ওষুধ খেলে কোনো ক্ষতি হবে না তো? আমরা তখন বলি, ওষুধ না খেলেই ক্ষতি হবে। কারণ ওষুধ খেলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অনেকে মনে করেন, ওষুধ খেয়েছি রক্তচাপ কম আছে, এখন আর ওষুধ খাওয়া দরকার নেই। কিন্তু সেটি ঠিক নয়। ওষুধ থাওয়ার ফলেই রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। সুতরাং ওষুধটি তাঁকে খেয়ে যেতে হবে। আর চিকিৎসকরা যে ওষুধ দেন, সেটি দীর্ঘদিন খেলে অসুবিধা তো হওয়ার কথাই না বরং সুবিধা হবে। রক্তচাপজনিত কোনো সমস্যা বা জটিলতা তাঁর হবে না।
প্রশ্ন : রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কী কী জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : শরীরের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা হয়। যেমন ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, চোখে সমস্যা, কিডনির সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মূলত চারটি অঙ্গেরই ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন : একটা সময় আমরা দেখতাম যে বয়স বাড়লে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপার টেনশন হতো। এখন কিন্তু তরুণদের ক্ষেত্রেও এটি হতে দেখি। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : সেটাই। এখন অনেক তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। একটা বিষয় বললাম যে, ৫ শতাংশ যাদের বিভিন্ন কারণে রক্তচাপ হয়। অথবা এমন হতে পারে আমাদের জীবনযাত্রার ধরন যে রকম, শারীরিক পরিশ্রম কম হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা হচ্ছে, শাকসবজি খাই না এসব কারণে হতে পারে। এ ছাড়া স্থূলতা বা পরিবেশগত কারণেও অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়।
প্রশ্ন : এমনকি শিশুদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়...
উত্তর : বিশেষ করে কিডনি এবং হরমোনজনিত কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
প্রশ্ন : আপনি বললেন দৈনন্দিন জীবন-যাপনের কিছু পরিবর্তন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি। পুরোপুরি কী করলে আসলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে?
উত্তর : আসলে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। উচ্চ রক্তচাপ সম্বন্ধে সবার ধারণা থাকতে হবে। যদি কোনো উপসর্গ থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপ করা বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া যদি কারো পরিবারে বাবা-মায়ের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে আরো সচেতন হতে হবে। সতর্ক থাকলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : চিকিৎসকের কাছে ফলোআপের জন্য কি কোনো নির্দিষ্ট সময় রয়েছে?
উত্তর : এটি মূলত চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেবেন যে কতদিন পরে রোগীর ফলোআপে আসা উচিত। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি ওষুধ খেতে হবে।