গর্ভকালীন সেবা

Looks like you've blocked notifications!

গর্ভকালীন সেবা প্রত্যেক সন্তানসম্ভবা মায়ের জন্য একটি জরুরি বিষয়। এর ওপর নির্ভর করে শিশু ও মায়ের সুস্থতা। আজ ১৩ মার্চ এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে ২০০৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের অধ্যাপক ডা. শারমিন আব্বাসী।

প্রশ্ন : গর্ভকালীন সেবা বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : একজন নারী যখন গর্ভধারণ করবেন, তখন তো তিনি গর্ভকালীন সেবা নেবেনই। যখন থেকে তিনি পরিকল্পনা করা শুরু করবেন যে সন্তান নিতে চান, তখন থেকেই সেবা নিতে হবে। আসলে টার্মটা এ রকম যে গর্ভকালীন সেবা, কিন্তু সেবাটা নিতে হয় সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় থেকে। 

প্রশ্ন : এই সেবার আওতায় কোন কোন বিষয়গুলো পড়ে?

উত্তর : প্রথমে জানতে হবে রোগীটির সম্পর্কে। শুরুতে আমরা তার একটি সর্ম্পূণ ইতিহাস নিই। সে ক্ষেত্রে আমরা জানি রোগীটির বয়স কেমন। যদি তাঁর বয়স কম হয়, তখন তিনি পড়বেন একটি দলে। তখন জানতে চাই তাঁর আর কোনো সমস্যা আছে কিনা। তাঁর পুরোনো ইতিহাস কী ছিল। কোনো মায়ের যদি এমন হয় আগের বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বিত প্রসব হয়েছে বা তাঁর বাচ্চা আগে মারা গিয়েছে বা সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় কোনো অসুবিধা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আমরা মাকে দেখব উচ্চ ঝুঁকির গর্ভধারণ হিসেবে। পাশাপাশি তাঁর আর কোনো অসুখ আছে কি না। যেমন, আমরা জানতে চাই তাঁর ডায়াবেটিস আছে কিনা বা হার্টে কোনো সমস্যা আছে কিনা, তাঁর হরমোনে কোনো সমস্যা আছে কিনা, আগের গর্ভাবস্থায় প্রি একলামসিয়া, একলামসিয়া যদি থাকে, জ্বর থাকে, অন্য কোনো ধরনের মিস ক্যারেজের ইতিহাস আছে কি না, এগুলো দেখি। সবগুলো ইতিহাস যখন আমরা জেনে নিই তারপর সে অনুযায়ী সেবা দিই।
এরপর সন্তানসম্ভবা নারীরা চিকিৎসকের কাছে এলে আমরা দেখি তাঁর ওজনটা কেমন বাড়ছে, চাপের কী অবস্থা। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা করি। 

প্রশ্ন : কতদিন পরপর আপনারা চিকিৎসকের কাছে চেকআপের পরামর্শ দেন?

উত্তর : পুরো গর্ভাবস্থা জুড়ে মায়েরা ১৪ বার চেকআপ নিতে আসবেন। কিন্তু আমাদের উন্নয়নশীল দেশে তাঁদের জন্য বলা হয় অন্তত চারটা সেবা নেবেন। এটা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন একেবারে ঠিক করে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলা হয়, গর্ভাবস্থার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত পারা যায় আসা দরকার। আমরা বলি ১২ সপ্তাহ, যদি কেউ না পারে ১৮ সপ্তাহ, মাঝামাঝি সময় আরেকবার আসতে হবে। ৩২ থেকে ৩৪ সপ্তাহে। আরেকবার গর্ভাবস্থার শেষ সময়।

যে বিষয়টি বলার মতো, কেন একেবারে মাকে গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে আসতে হবে? বাচ্চাটার জন্ম পরিকল্পনা (বার্থ প্ল্যানিং), প্রসবটা কীভাবে হবে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়।
 
যে বিষয়গুলো আসে জন্ম পরিকল্পনার সময় বাচ্চাটা কোথায় প্রসব হবে। কার হাতে প্রসব হবে। তাঁকে সেই জায়গাটিতে কীভাবে যেতে হবে। তাঁর যদি রক্ত লাগে কোন জায়গা থেকে পাবেন।

খরচ যা লাগবে কীভাবে মেটাবেন। এসব বিষয়গুলো সাক্ষাতে বলে দিই। তবে সর্বশেষ সাক্ষাৎটা ৩৬ সপ্তাহে যখন আপনাদের কাছে আসবে বা প্রসব ব্যথাটা শুরু হবে, তখন অবস্থাটা বোঝা যাবে।

সঠিক জন্ম পরিকল্পনা না থাকার ফলে অনেক মা মারা যাচ্ছেন। পেটে থাকা অবস্থায় বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে। প্রসবের একটু পরপরও কেউ মারা যাচ্ছে।

প্রশ্ন : এত সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কৌশল থাকার পরও বাসায় যে প্রসবগুলো হয়, সেখানে বাচ্চারা মারা যাচ্ছে। আপনার কী মনে হয় এর কারণ কী?

উত্তর : এখনো তো আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ ডেলিভারি হয় গ্রামে। তবে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রত্যেককে জানাতে হবে। তার কেন সেবাটা দরকার। সেবা নিলে তার লাভ কী হবে। 

এ রকমও ইতিহাস আমরা জানি, চরে একজন নারী যাঁর হয়তো প্রসব ব্যথা উঠল, তিনি হয়তো সারা রাত প্রসব ব্যথায় কাতরাচ্ছেন, যানবাহন নেই সেই মুহূর্তে। তাঁর হয়তো নদী পার করতে হবে কিন্তু একটা সময় তার বাচ্চা মারা গেল সেই মা মারা গেলেন। আসলে আমরা শহরে থেকে এই বিষয়গুলো অনুভব করি না। এ রকম ইতিহাস এখনো আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। আমরা কেবল ৪৮ ভাগ কাভার করতে পেরেছি। এই বিষয়টি যদি আমরা ঠিক না করতে পারি তাহলে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারব না। এটা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

গর্ভকালীন সেবা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি সব সময় যে একজন চিকিৎসক প্রসব করাবেন তা না। আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন একটি শব্দ আছে যেখানে বলা হয়, স্কিল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট। একজন নারীকে যদি আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ধাত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারি, তাহলে ভালো হয়। কেননা দেশের ৮০ শতাংশ প্রসব হচ্ছে ঘরে। তাই প্রশিক্ষিত ধাত্রী তৈরি করতে পারলে তিনি ঘরে ঘরে যাবেন এবং কাজ করবেন। আমাদের সরকার এটি নিয়ে কাজ করছে। 

যদি আমরা বলি, আমাদের মায়ের মৃত্যুর হারের কারণগুলো কী কী? তার মধ্যে একটি হলো প্রসবের পর রক্তক্ষরণ। সেটা কীভাবে কমবে? দুই ধরনের ওষুধ রয়েছে, এটা খেয়ে ফেললে অনেকাংশে রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।

প্রশ্ন : গর্ভকালীন যত্নের মধ্যে আসলে কোন কোন বিষয়গুলো আপনারা বুঝিয়ে থাকেন। যাতে গর্ভাবস্থায় প্রসবের বিভিন্ন ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব?

উত্তর : আমরা ওজন মেপে দেখি, ওজন যদি বেশি বাড়ে, তখন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন পরীক্ষা করি। প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখছি কোনো প্রোটিন আছে কি না। রক্ত পরীক্ষা করে দেখব এনিমিয়ায় ভুগছেন কিনা। প্রত্যেকবার যখন ভিজিটে আসবে তখনই আমরা বলে দিচ্ছি মায়ের ঝুঁকির চিহ্নগুলো কী। বলা হয়, যদি আপনি ঝাপসা দেখেন, তখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন। যখন ওপরের পেটে ব্যথা অনুভব করেন, তখন চলে আসবেন। যদি হঠাৎ করে মনে হয় রক্তক্ষরণ হচ্ছে, পানি যাচ্ছে বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে, তখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন। সব সময় রোগীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বোঝাতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরবর্তী সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন আছে।