শিশুর চশমা কখন লাগে?

অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের চোখে চশমা ব্যবহার করতে হয়। এ নিয়ে মা-বাবার মনে নানা প্রশ্ন থাকে। বিষয়টি নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৪৪৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. বজলুল বারী ভূঁইয়া। বর্তমানে তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেলের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : একটি শিশুর কখন চশমা লাগে? কেন লাগে? আপনারা কীভাবে নির্ধারণ করেন যে তার চশমা লাগবে?
উত্তর : একটি শিশু যখন স্কুলে যায় অথবা তারও আগে, তার প্রাত্যহিক কাজকর্ম দেখে বোঝা যায়, যে তার চশমা লাগবে কি না। যেমন—এই অনুষ্ঠানে আসার আগে আমার কাছে এক দম্পতি তার শিশুকে নিয়ে এসেছেন। শিশুটির বয়স সাড়ে তিন বছর। সে টেলিভিশনের কাছে চলে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে টেলিভিশন দেখে। বারবার চোখ কচলায়। তো, মা-বাবার মনে হয়েছে, শিশুটির চোখে সমস্যা হয়েছে। আমার কাছে নিয়ে আসার পর আমি দেখলাম, তার চশমা লাগে। তাদের বুঝিয়ে চশমা দিলাম। অর্থাৎ একটি শিশু স্কুলে যাওয়ার আগেও কিন্তু তার আচরণ দেখে বোঝা সম্ভব, বিশেষ করে মা-বাবা যাঁরা সবচেয়ে বেশি কাছে থেকে খেয়াল করেন, তাঁরা বুঝতে পারেন।
আরেকটি হলো যখন সে স্কুলে যায়, তখন দেখা গেল, যেসব ছেলেমেয়ে, তার সহপাঠীরা শিক্ষকের বোর্ডের লেখা বুঝতে পারে, তবে সে দেখতে পারছে না, সে পাশের জনের কাছ থেকে দেখে লিখছে। সে হয়তো সামনের বেঞ্চে বসার জন্য সহপাঠীদের সঙ্গে মারামারি করে বসে। কারণ, পেছনে বসলে তো সে দেখতে পায় না।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষক যাঁরা থাকেন, তাঁরা খেয়াল করবেন যে বাচ্চাটা পেছনের বেঞ্চে বসলে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। সে ক্ষেত্রে তার মা-বাবাকে যেন বিষয়টি বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা বলছেনও। এবং আমরা সত্যি সত্যি দেখি যে তার চোখে চশমা লাগছে। আরেকটু যখন বড় হয় সে বুঝতে পারে, বলতেও পারে যে আমি পেছনে বসলে দেখতে পারি না। কাজেই বিভিন্ন ধাপে বাচ্চাদের নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। যখন সে বলতে পারে, তখন সবচেয়ে সহজ হয়। তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে তার দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কি না। আমরা সে অনুসারে তাকে প্রয়োজনীয় চশমা দিয়ে থাকি।
প্রশ্ন : এটা আমাদের দেশে লক্ষণ দেখে করা হয়। তবে আপনি জানেন যে অন্যান্য দেশে প্রি-স্কুল গোয়িং (স্কুলে যাওয়ার আগে) বাচ্চার চোখের পরীক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে করা হয়। এ বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর : আপনি একটি সুন্দর প্রসঙ্গ এনেছেন। আমি এটা নিয়ে প্রায় ১০ বছর আগে কাজ শুরু করেছিলাম। আমার জেলায় এটি শুরু করা হয়েছিল এবং চলছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় একটি স্বাভাবিক পরীক্ষা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি আশপাশের দেশগুলোতেও প্রি-স্কুল আই চেকআপ বাধ্যতামূলক। না হলে স্কুলের পড়াশোনার বিষয়গুলোর সঙ্গে বাচ্চাটা পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে পারবে না, পিছিয়ে পড়বে। অনেক জায়গায় প্রি-স্কুল চেকআপ ছাড়া তারা ছাত্র ভর্তি করে না। অথবা তারা ভর্তির পর নিজেদের আঙ্গিকে করে নেয়। কিন্তু কেন যেন বাংলাদেশের কোনো স্কুলে এ বিষয়টি নেই।
প্রশ্ন : বাচ্চাদের চশমার বিষয়ে অভিভাবকদের মাথায় আসে আমার সন্তানের সারা জীবন এটি পড়তে হবে কি না। আবার কারো কারো বেলায় এ রকম বলা হয়, কিছুদিন পর চোখ ভালো হয়ে যাবে। বিষয়টি কী?
উত্তর : বিষয়টি হলো বাচ্চা ভালো দেখতে পায় না। আর যে বাচ্চা ভালো দেখতে পায়, সে চশমা অবশ্যই পরে। বাচ্চাটা বড় হচ্ছে, আস্তে আস্তে তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বড় হচ্ছে। চোখও তো বড় হচ্ছে। চোখ যখন বড় হচ্ছে, তখন চোখের পাওয়ার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে। সাধারণত যেটি দেখা যায় যে মাইনাস পাওয়ার যে বাচ্চাদের লাগে, তাদের পাওয়ারটি বয়সের সঙ্গে একটু একটু করে বাড়ে। বাড়তে বাড়তে এটা ১৮ বছরে গিয়ে স্থির হয়। আর প্লাস পাওয়ার যাদের থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে যায়।
চশমা পরলে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে—এ কথা প্লাস পাওয়ারের ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি। তবে মাইনাস পাওয়ার যাদের থাকে, তাদের দেখা যায় এই পাওয়ার আস্তে আস্তে বাড়ে। অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এ ব্যাপারে যেটা বলার আমার, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইনাস পাওয়ারটা বাড়ে এবং এটি মেনে নিতে হবে। না দিলে বাচ্চাটি তার স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে পিছিয়ে পড়বে। আর যদি এক চোখে চশমা লাগে, আরেক চোখে না লাগে, তখন একটি চোখ তার অলস হয়ে যাবে। আট বছরের পর সারা জীবনের জন্য চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয়ে থাকবে। কাজেই অনুরোধ থাকবে, যে বাচ্চাদের চশমা লাগে, যেটা ডাক্তার দিয়েছেন, সেই চশমাটি তাকে পরতে হবে।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে যদি কারো কারো মনে হয় সে চশমা পরতে চায় না, তার জন্য ১৮ বছরের পরে গিয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে?
উত্তর : সাধারণত ১৮ বছরের পরে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চোখের বৃদ্ধি স্থির হয়ে যায়। তখন পাওয়ারও স্থির হয়। তখন যদি চশমা ছাড়তে চায় কেউ, অনেক ধরনের ব্যবস্থা আছে। লেসিক এসেছে। লেসিক করে নিলে দেখা গেল তার পরবর্তী ৪০ বছর পর্যন্ত আর কোনো পাওয়ারের সমস্যা হচ্ছে না। চশমা ছাড়াই সে সবকিছু করতে পারছে। কেউ কেউ কনটাক্ট লেন্স পরেন। যদিও আমরা এ বিষয়ে উৎসাহিত করি না। কারণ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি হয়। সামান্য কিছু সময়ের জন্য কেউ কেউ কনটাক্ট লেন্স পরেন। তবে আরো যাঁদের অনেক পাওয়ার, পনেরোর বেশি, তখন তাঁদের আমরা বলি যে আপনি অস্ত্রোপচার করে নেন। ছানি অস্ত্রোপচারের মতো একটি অস্ত্রোপচার আছে, লেন্স প্রতিস্থাপন করে নিলে সে আবার নতুন করে দৃষ্টি পায়।