কীভাবে বুঝবেন শিশুর হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে?

Looks like you've blocked notifications!

শিশুদের অনেক সময় জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৬৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. খলিফা মাহমুদ তারিক। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : শিশুদের জন্মগত হৃদযন্ত্রের ত্রুটি কী কী ধরনের হতে পারে?

উত্তর : আমরা জানি যে, মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অবস্থাতেই হৃদযন্ত্রটি তৈরি হচ্ছে। জন্মের সময় থেকেই কিছু সূক্ষ্ম ও জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে এই হৃদযন্ত্র বা হার্টটি পরিপূর্ণতা অর্জন করে। এমনকি জন্মের পরও কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের সাথে সম্পূর্ণভাবে আমরা যে বড় হচ্ছি তার সাথে সংযোজিত হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার যেকোনো অংশে ত্রুটিগুলো ঘটতে পারে। ত্রুটির ওপর নির্ভর করে এর ব্যাপ্তিটা হয়।

প্রশ্ন : শিশু জন্ম নেওয়ার পর কী ধরনের লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে সে ত্রুটি নিয়ে জন্মেছে?

উত্তর : হৃদযন্ত্রের জটিলতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সেই ত্রুটির ওপর নির্ভর করে তার লক্ষণগুলো। যেসব শিশু মারাত্মক ধরনের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং যেখানে ফুসফুসে রক্তের পরিমাণ কমে যায়, সেসব ক্ষেত্রে দেখা যায় বাচ্চা জন্মের পর নীল হয়ে যাচ্ছে। এসব রোগীর তখনই শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। খুব বেশি মারাত্মক হলে জীবন ধারণই প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। আবার হৃদযন্ত্রের কিছু কিছু  ত্রুটি আছে যদি সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। যে হৃদযন্ত্রের ত্রুটিগুলো অপেক্ষাকৃত কম, অর্থাৎ যাদের অল্প হৃদযন্ত্রের ত্রুটি আছে, অনেক সময় জন্মের পর শ্বাসকষ্ট ছাড়া কোনো সমস্যাই চোখে পড়ে না। এমনকি বাচ্চারা বড় হওয়া পর্যন্ত এই ত্রুটিগুলো ধরা পড়ে না। সুতরাং বলা যেতে পারে যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অথবা বাচ্চা নীলাভ হয়ে যেতে পারে। অথবা বাচ্চা পরিশ্রম করলে, বাচ্চা যদি একটু বড় হয়, কান্নাকাটি করলে, তার শ্বাসকষ্ট হয়। এ রকম বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়।  

আরেকটু বলতে চাই, মাতৃগর্ভে যখন বাচ্চা বড় হতে থাকে, সে সময় কিছু কিছু কারণের জন্য হৃদযন্ত্রের ত্রুটি হয়। এগুলোকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি অথবা এড়িয়ে যেতে পারি। এই ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের কিছু করণীয় থাকে। তাহলে আমরা নবজাতকের বা শিশুদের হৃদযন্ত্রের কিছু ত্রুটি এড়িয়ে যেতে পারি।

যেমন আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকি বা অন্য কোনো অসুখের জন্য ওষুধ খাই, এই ওষুধ কিন্তু বাচ্চার বিকলঙ্গতা বাড়ানোর কারণ হতে পারে। এ ছাড়া অনেক সময় রুবেলা সংক্রমণ যদি হয়, সেই ক্ষেত্রে বাচ্চার হৃদযন্ত্রের ত্রুটি হয়। এ ছাড়া কোনো পরামর্শ ছাড়া যদি পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় এক্স-রে করা হয় বা রেডিয়েশন নেওয়া হয় তাহলে এগুলোর এক্সপোজারের জন্য কিন্তু বাচ্চা এ ধরনের ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।

এ ছাড়া কিছু ক্রোমোজোমাল রোগ আছে, কিছু কনজেনিটাল রোগ আছে, সেগুলোর সাথে হার্টের অসুখ জড়িত। সেগুলোর ক্ষেত্রে চেক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি।

প্রশ্ন : শিশুদের হৃদযন্ত্রের ত্রুটি দেখা দিলে করণীয় কী? আপনাদের কাছে যখন এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে আসে তখন আপনারা কী করেন?

উত্তর : শিশুর যখন হৃদযন্ত্রের ত্রুটি হয়, তার কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন : শরীর নীলাভ হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া অসুখের প্রকারভেদে শ্বাসকষ্ট হয়, ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগে, কাশি হয়, বাচ্চা খেতে চায় না, একটু বড় হলে বাচ্চা খেলাধুলা করতে চায় না। বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় পারে না। তাদের বুক ধরফর করে অথবা বাচ্চার বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না। অনেক সময় জ্বর থাকে। দেখা যায় যে পরিশ্রমের কাজ সে মোটেও করতে চায় না। এসব লক্ষণ যখন দেখা দেয় বা ঘন ঘন ঠান্ডা-কাশি লাগে, তখনই কিন্তু চিন্তা করা উচিত এর হৃদযন্ত্রের ত্রুটি আছে কি না। মনে রাখতে হবে যে, লক্ষণগুলোর কথা বললাম এর প্রত্যেকটি শ্বাসযন্ত্রের সাথে জড়িত। সুতরাং সবাই প্রথমে শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসা করে কিন্তু হৃদযন্ত্রের বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়। সুতরাং আমি বলব, আমাদের যাঁরা চিকিৎসক আছেন, যাঁরা এ ধরনের লক্ষণ নিয়ে আসে, তারাও যেন একই সঙ্গে চিন্তা করেন যে ফুসফুসে সংক্রমণ শুধু নয়, এর সঙ্গে হার্টের কোনো সম্পর্ক আছে কি না? সেগুলো যেন তাঁরা চিন্তা করেন।