মৃগীরোগ হয় কেন, চিকিৎসা কী

মৃগীরোগ একটি জটিল সমস্যা। এর চিকিৎসা অনেক সময় দীর্ঘদিন করে যেতে হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫০৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আর এন ভট্টাচার্য। বর্তমানে তিনি এএমআর আই হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন: মৃগীরোগ বা এপিলেপসি কী? কী ধরনের লক্ষণ এখানে প্রকাশ পায়?
উত্তর : এপিলেপসি হলে আমরা কাউকে বলতে দেই না। লজ্জা পাই। তবে সেটি নয়। এপিলেপসি এক ধরনের রোগ। এপিলেপসিকে আগের দিনে বলত শয়তানের শক্তি। ওঝাকে দিয়ে ঝাড়ানো। গ্রামেগঞ্জে হয়। সেজন্য বলছি, প্রথম বিষয় হলো সচেতনতা। এটি যে রোগ সেটিকে রোগ হিসেবেই নিতে হবে। যদি ভাগ করতে হয়, আমরা একটিকে বলি ইডিওপ্যাথি, যার কারণ আমরা জানি না। দ্বিতীয় হচ্ছে, লক্ষণ অনুযায়ী। যদি মস্তিষ্ক টিউমার হয়, তাতেও এপিলেপসি হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চার যখন জ্বর অনেক হয়, তখন ওদের খিঁচুনি আসে। একে যদি ভালো করে ব্যবস্থাপনা না করি, আস্তে আস্তে সমস্যা করতে পারে। তবে এপিলেপসি চিকিৎসা করা, যেটার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার। অনেক সময় ৩০ ভাগের দেখা যায় ওষুধে কাজ হচ্ছে না। কখন বলব রিফ্রাকটরি? এর দুটো ভূমিকা আছে। দুই বছরের চিকিৎসা, দুটির বেশি ওষুধ, প্রতি মাসে দুইবারের বেশি খিঁচুনি যদি কারো হয়, তখন আমরা তাকে বলব রিফ্রাকটোরারি। তখন পরীক্ষা নীরিক্ষা করা উচিত যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না এগুলো দেখতে হবে।
কী করতে পারি আমরা? এপিলেপসির জন্য আজকাল অস্ত্রোপচার হয়। এর জন্য যেসব পরীক্ষা আমরা করি, এমআরআই, স্ক্যান, মস্তিষ্কের জন্য ইজি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাতে যদি কোনো সমস্যা দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করলে তাতে উন্নতি হয়। একটা তো হচ্ছে যে টিউমার থাকে, টিউমারকে অস্ত্রোপচার করলে কিছু লাভ হয়। কিংবা মস্তিষ্কের কোনো অংশে জন্মগত দোষ যদি থাকে, সেটাকে কেটে বাদ দেওয়া। এপিলেপসি সার্জারি একটি বড় বিষয়। রিফ্রাকটরি এপিলেপসি অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ঠিক করতে পারি। যতবার এই আক্রমণ হচ্ছে, ততবার মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে। মস্তিষ্কের কার্যক্রমগুলো আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেইগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য, এটা করতে হবে।
সামাজিক স্টিগমা যেটা বলছিলাম, অনেক ক্ষেত্রে আমি দেখেছি লোকে এটা জানাতে ভয় পায়। বেশির ভাগ সময় মেয়েদের ক্ষেত্রে। ভাবে যে বিয়ে হবে না। অনেক শিক্ষিত পরিবারও অনেক সময় জানাতে ভয় পায়। এপিলেপসি স্টিগমা নয়, রোগ। এর চিকিৎসা দরকার। অনেকে ভাবে বিয়ের পর বাচ্চার এপিলেপসি হবে কি না। সেটি নিয়ে ভয় থাকে।
প্রশ্ন : তখন তাদের কী বোঝান?
উত্তর : যদি মা-বাবার মধ্যে একজনের এপিলেপসি হয়, তাদের বাচ্চাদের এপিলেপসি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে স্বাভাবিকদের মতোই। তবে যদি দুজনেরই এপিলেপসি হয়, তাহলে ৩০ থেকে ৩২ ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : তাদের কী ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : আমি ভারতে যে সেন্টারে কাজ করতাম সেখানে এপিলেপসির সার্জারি করা হয়। এখন নতুন অনেক ওষুধ এসেছে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এসব ওষুধ জীবন ভরও খেতে হতে পারে।
প্রশ্ন : এই যে যখন তখন অ্যাটাক হয়ে যায়, এর জন্য কী করতে হবে?
উত্তর : কিছু জিনিস এড়িয়ে যেতে হবে। স্কুলে যখন বাচ্চা যায়, অনেক সময় এর সাথে একটি কার্ড দিয়ে দেওয়া হয় যে এপিলেপসি হলে সবাই যেন জানতে পারে।