বাতের ব্যথার চিকিৎসায় হাঁটুর প্রতিস্থাপন

Looks like you've blocked notifications!

হাঁটুতে বিভিন্ন কারণে সমস্যা হতে পারে। তবে হাঁটুর ব্যথার ক্ষেত্রে বা হাঁটুতে বাতের সমস্যা হলে হাঁটু প্রতিস্থাপন সার্জারি করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫১৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ওয়াকিল আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : হাঁটুতে সাধারণত কী কী সমস্যা হয়?

উত্তর : হাঁটুর সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপন হচ্ছে বিশ্বে সর্বাধুনিক একটি চিকিৎসাব্যবস্থা। প্রতিদিন প্রাত্যহিক জীবনে আমরা হাঁটুর যে সমস্যা পেয়ে থাকি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাঁটুর ব্যথা। সেটা বাতজনিত কারণে হোক, সেটা আঘাতজনিত কারণে কিংবা সেটা অন্য কোনো কারণে হোক। এ ব্যথাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। আরো অনেক সমস্যা আছে, তবে হাঁটুর ব্যথা ও এ সময়ে হাঁটুর প্রতিস্থাপন নিয়ে কথা বলব।

মধ্য বয়সের কিছু আগে বা মধ্য বয়সের পরে হাঁটুর যে ব্যথা শুরু হয়, সেটা দেখা যায় প্রধানত বাতজনিত কারণে হয়। বাতের মধ্যে অনেক রকম প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন : অস্টিওআরথ্রাইটিস, রিউম্যাটো আরথ্রাইটিস। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বাতের ব্যথা অনেক সময় তীব্রতর হয়। তবে অল্প বয়সে যে বাতের ব্যথা হয় না, এমন নয়।

মাঝেমধ্যে এবং খুব কম বয়সে অনেক রকমের বাতের ব্যথা হয়ে থাকে। যাকে আমরা জুবিনাল আরথ্রাইটিস বলে থাকি। যে কারণে হোক, এই বাতের ব্যথা শুরুতে বিশ্রাম, সামান্য ফিজিওথেরাপি, হালকা ব্যথার ওষুধ বা জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা যায়। 

প্রশ্ন : হাঁটু সন্ধির সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপন বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : এটি আধুনিক বিশ্বের একটি সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। হাঁটুর ব্যথা হতে হতে এক সময় একটি পর্যায় গিয়ে দাঁড়ায়, যখন চিকিৎসাব্যবস্থা কোনো কাজ করে না, কোনো ওষুধে কোনো কাজ করে না। ফিজিওথেরাপিতে কোনো লাভ হয় না, সব পদ্ধতি যখন ফেল হয়, রোগীর ব্যথা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, যে রোগী হাঁটু গেড়ে বসতে পারে না। এমনকি শোয়ার সময় তার ব্যথা হয়, সে নামাজ পড়তে পারে না। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ করে ও পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে এই চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। 

এতে আমরা কী করি? হাঁটু হয়তো ক্ষয় হয়ে গেছে। এই ক্ষয়ের মাত্রা এত বেশি যে হাঁটুর ওপরের এবং নিচের হাড় ক্ষয়ের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। যখন সব চিকিৎসা পদ্ধতি ফেল করে। তখন ওপরের কিছু অংশ বা নিচের কিছু অংশ কেটে তার বাইরের লিগামেন্ট, মাংসপেশি সবই ঠিক থাকে। কেবল হাড়ের ক্ষত অংশ কেটে কিছু অনুষঙ্গ দিয়ে এই প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রতিস্থাপনের পর তার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়। 

প্রশ্ন : কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপন করতে হবে?

উত্তর : প্রতিস্থাপন করার বিষয়ে আমরা প্রধানত চিন্তা করি, শারীরিক পরীক্ষা করার পর রোগীটা ফিট আছে কি না। হাঁটুর ব্যথা সাধারণ চিকিৎসাগুলোর পর এমন অগ্রবর্তী পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন আর কোনো পদ্ধতি কাজ করে না। তখন সে ক্ষেত্রে এ রকম অস্ত্রোপচার করে থাকি। আর কোনো কোনো সময় আরথ্রাইটিসের পরও এই তীব্র হওয়ার কারণে, হাঁটু অনেক সময় বিকৃতি ধারণ করে। ভেতরের দিকে কিংবা বাইরের দিকে বাঁকা হয়ে যায়, তখনো আমরা প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা করে থাকি, যাতে ব্যথার পরিমাণ অনেক কমে যায়। শতকরা ৯০ ভাগ বা তার চেয়ে বেশি ব্যথা কমে যায়। আর অস্ত্রোপচারের পর যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলে কিছু ফিজিওথেরাপি করে, তাতে দেখা যায় যে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। 

প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারের পর কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

উত্তর : অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সময়ে নিয়মকানুন খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগী যদি ঠিকমতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলে, রোগী যদি তার নিজের প্রতি যত্ন নেয়, পায়ের যত্ন নেয়, তাহলে অনেক ভালো থাকে। 

প্রথম দিকে আমরা নিজে নিজে হাঁটতে দিই। বিছানার পাশে পা ভাঁজ করে বসতে দিই। পায়ে পুরোপুরি ভর দেওয়া কোনো সমস্যা নয়, এর পর ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে কিছু ঊরুর মাংসপেশি অন্যান্য মাংসপেশির কিছু স্ট্রেন্থেনিং এক্সারসাইজ বা মজবুতকরণের ব্যায়াম, ওগুলো করে আস্তে আস্তে রোগীর উন্নতি করা যায়। অস্ত্রোপচারের পরে ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন : কোন কোন ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব, আর কোন কোন ক্ষেত্রে সম্ভব নয়?

উত্তর : দুটো বিষয় আছে। একটি হচ্ছে যে পায়ে তার সমস্যা, ওই পায়ের একটি বিষয়। আরেকটি হচ্ছে পূর্ণ শরীরের একটি সুস্থতা। ওই পায়ের মধ্যে তীব্র ব্যথা আছে, তবে সেই জায়গায় একটি সংক্রমণ বা প্রদাহের লক্ষণ আছে, তাহলে কোনো অবস্থাতেই এ জায়গায় অস্ত্রোপচার করা যাবে না। এর বাইরে তার যদি স্নায়ুঘটিত কোনো আঘাত থেকে থাকে কিংবা পায়ের মাংসপেশি যদি দুর্বল হয়, সে ক্ষেত্রে কোনোভাবে এই অস্ত্রোপচার করা যাবে না। এর বাইরে ফিজিক্যাল ফিটনেস ও শারীরিক সুস্থতা দরকার।

যদি চিকিৎসক মনে করেন যে ওনার জন্য অজ্ঞান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আমরা রোগীকে এই অস্ত্রোপচার করতে চাই না। 

প্রশ্ন : অস্ত্রোপচারটি কোন বয়সে করা যাবে?

উত্তর : অনেকে বলে থাকে, এটি আসলে বয়স হলেই করা ভালো। তবে যদি বাতজনিত কারণে রোগী যদি অক্ষম হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি খুব একটি সমস্যা নয়।

দেখা যায় ২০ বছরের আগেও এটি আমরা দিয়ে থাকি। তার সুস্থতা ও সক্ষমতা একটি উল্ল্যেখযোগ্য বিষয়। কারণ তার যদি বয়সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, তাহলে জীবনের যে মূল সময় তার শেষ হয়ে যাবে। সে জন্য তাকে সুস্থ ও সক্ষম করে তোলা আমাদের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে বয়স খুব একটি বিষয় নয়। 
 

প্রশ্ন : অনেক বয়স্ক রোগীর ক্ষেত্রে ধারণা থাকে, এত বয়স্ক হয়তো অস্ত্রোপচার করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?

উত্তর : বয়স হয়ে গেলে যে করা যাবে না এমন নয়, যদি অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ও সার্জন রোগীকে সম্পূর্ণ পরীক্ষা করে ফিট মনে করেন, তাহলে করা যেতে পারে।

অবশ্যই সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। যেমন যে হাসপাতালে আমরা অস্ত্রোপচার করব, সেখানে আইসিইউর সুবিধা আছে কি না। ওই রকম ব্যবস্থা যেখানে আছে, আমরা সেই জায়গাতেই অস্ত্রোপচার করব। আর যেই রোগী আনফিট, সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের যতটুকু সম্ভব মেডিকেল চিকিৎসা দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করব। 

প্রশ্ন : আপনি কি রোগীদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান এ বিষয়?

উত্তর : আধুনিক বিশ্বের এই চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের দেশে খুব ভালোভাবে হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের চিকিৎসকরা বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে, যেমন—সিঙ্গাপুর, সাউথ কোরিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাংলাদেশে হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনের কাজ করছে এবং সফল হচ্ছে। তো, দেশের যারা রোগী রয়েছে, তারা হুট করে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা না করে, এই নীতি অনুসরণ না করে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রাখবেন। দেশের চিকিৎসকরা বিশ্বমানের এই চিকিৎসা দিতে সক্ষম। আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বের উন্নত দেশের পাশাপাশি বা সমপরিমাণ যেন যেতে পারি, এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।