গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিস্ক্যানের গুরুত্ব

Looks like you've blocked notifications!
ডা. লুবনা ইসলাম।
 

গর্ভাবস্থায় শিশুর ক্রোমোজোমাল কোনো অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না এটি বোঝার জন্য অ্যান্টিস্ক্যান করা হয়।অ্যান্টিস্ক্যানের মাধ্যমে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় শিশুটি শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হচ্ছে কি না। আজ  ১০ মে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৩১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ফোরসাইট প্রিনেটাল ক্লিনিকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. লুবনা ইসলাম।

প্রশ্ন : প্রিনেটাল স্ক্রিনিং অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় যে স্ক্রিনিং করা হয় এটি সম্বন্ধে একটু বলুন। অ্যান্টিস্ক্যানের সঙ্গে এটির কী সম্পর্ক রয়েছে সেটি একটু বুঝিয়ে বলুন?

উত্তর : প্রিনেটাল স্ক্রিনিং নামটাই যেটা বলে, প্রি মানে আগে এবং নেটাল মানে জন্মের আগে। এই স্ক্রিনিংগুলো আমরা করি জন্মের আগে। জন্মের আগে অনেক স্ক্রিনিং রয়েছে। যেমন মায়ের রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসোনোগ্রাম ইত্যাদি। সবকিছুর পেছনের কারণ হচ্ছে যাতে বাচ্চাটা সুস্থ হয়। ছেলে হচ্ছে না মেয়ে হচ্ছে তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সুস্থ বাচ্চা যেন হয়। সেটাই আমাদের সবার কাম্য।urgentPhoto

প্রিনেটাল স্ক্রিনিংয়ের  মধ্যে এখন একটি নতুন বিষয় যোগ হয়েছে অ্যান্টিস্ক্যান। বিশ্বের সব দেশে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ,অস্ট্রেলিয়া, এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও পরীক্ষাটি করা হয়। এই অ্যান্টিস্ক্যান একটি নিয়মিত পরীক্ষা হিসেবে করা হয়।

আগে আমরা মায়ের বয়স ৩৫ এবং এর থেকে বেশি হলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলতাম। কিন্তু এখনকার নতুন বিষয় হলো, যেটা বিশ্বের বড় বড় হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, মায়ের বয়স যাই হোক না কেন সবার অ্যান্টিস্ক্যান পরীক্ষা করা দরকার। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে হয়, বাচ্চা ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা থেকে মুক্ত কি না। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় পেটের শিশুটির কোনো ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না সেটি যাতে ধরা পড়ে তার জন্য এই পরীক্ষা। কেননা ক্রোমোজোমাল সমস্যা হচ্ছে এমন একটি বিষয়- যা আমরা কোনো দিনই ঠিক করতে পারব না।

প্রশ্ন : এই যে অ্যান্টিস্ক্যানিংটা করা হয়, এর মাধ্যমে ঠিক কখন জানা যাবে বাচ্চাটির ক্রোমোজোমাল সমস্যা আছে ?

উত্তর : এটি একটি স্পর্শকাতর পরীক্ষা। এটি ১১ সপ্তাহ থেকে ১৩ সপ্তাহ ৬ দিন (১৪ সপ্তাহ হলে হবে না) এর মধ্যে মায়ের করতে হবে।

এর পদ্ধতি হচ্ছে, আমরা মায়ের রক্তের মধ্যে দুটি হরমোনের মাত্রা দেখব। ফ্রিবিটা এইসসিজি এবং প্রেগনেন্সি অ্যাসোসিয়েট প্লাজমা প্রোটিনে । পাশাপাশি মায়ের একটি আল্ট্রাসোনোগ্রাম করব, যেখানে শিশুটির কিছু বিষয় দেখতে হবে। আরো বেশ কিছু বিষয় আমাদের জানতে হয় শিশুটি সম্পর্কে। এরপর আমরা রক্তের রিপোর্ট যা পেয়েছি এবং আল্ট্রাসোনোগ্রামের রিপোর্টে যা দেখলাম, দুটোকে একটি সফটওয়্যারের মধ্যে দেই। তখন সফটওয়্যারটি একটি প্রতিবেদন দেয়, যে গর্ভাবস্থাটি নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ না কি  উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।

৯০ ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিস্ক্যান সঠিক তথ্যটিই দেবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থার অনেক প্রথম দিকে আপনি জেনে নিতে পারছেন বাচ্চাটার ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা বা শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না।

তখন প্রতিবেদন যদি উচ্চ ঝুঁকির দিকে আসে সেগুলোকে ঠিক আছে কি না দেখার জন্য আরো কিছু পরীক্ষা আছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে করা যাবে।

অ্যান্টিস্ক্যানের সুবিধা এটি, যেহেতু এটি একটি স্ক্রিনিং পদ্ধতি, আর সব গর্ভধারণ স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। আর স্ক্রিনিং করলে দেখা যাবে, হয়তো বা ৯৫ ভাগ কেস স্বাভাবিক। কিন্তু ওই যে ৫ শতাংশ কেস যে অস্বাভাবিক সেটি নির্ণয় করা গেল এবং ওখানেই সফলতাটি। ওখানে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে আদৌ কি শিশুটিকে রাখা ঠিক হবে কি না বা কী করতে হবে। তবে এটি পুরোপুরি নির্ভর করে শিশুটির মা-বাবার ওপর।

মা-বাবা যদি আবার আমাদের কাছে আসেন তাহলে আমরা আরো কিছু পরীক্ষা করে দেখি সমস্যাটি কোথায়। তবে অ্যান্টিস্ক্যানিং এমন একটি পরীক্ষা যেখানে মা এবং শিশুর কোনো সমস্যা হয় না। এগুলো আমরা এখন এ দেশে খুব সফলভাবে করছি।