মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসা সমাজকর্মীর ভূমিকা কী?

Looks like you've blocked notifications!

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় চিকিৎসা সমাজকর্মী বা ইংরেজিতে যাঁদের ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার বলা হয়, তাঁরা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৬৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তানিয়া রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সোশ্যাল ওয়ার্ক প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন : ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার বলতে আমরা বুঝি চিকিৎসা সমাজকর্মী। চিকিৎসা সমাজকর্মী মানে চিকিৎসা-সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে তাঁদের ভূমিকা রাখতে পারবেন। রোগটি নির্ণয় ও ধারণা করার ক্ষেত্রে তাঁরা ভূমিকা রেখে থাকবেন। তাঁদের পেশাগত ডিগ্রি পেতে হবে। পেশাগত ডিগ্রি তো সোশ্যাল ওয়ার্কারেরও আছে। তবে কেন ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার? ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোতে তাঁদের সোশ্যাল ওয়ার্কের ডিগ্রি থাকতে হবে। এই পেশাগত বিষয়টি তাঁর জন্য খুব জরুরি।

প্রশ্ন : মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্কারদের সম্পৃক্ততা কোথায়?

উত্তর : একদম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক আগে তো আমরা কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়েই বলতাম, তবে এখন আমরা বলি, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একটু চাপমুক্ত হও, একটু বিষণ্ণতা থেকে বের হয়ে আসো, একটু আনন্দ করো, নিজেকে একটু প্রশান্তি দাও। ক্লিনিক্যাল ওয়ার্কারদের সঙ্গে মেন্টাল হেলথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, ছোট ছোট জিনিস মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন আমরা যদি নখ না কাটি, নখের ময়লা থেকে ডায়রিয়া হয়। তেমনিভাবে ছোটখাটো চাপ, সমস্যাগুলো আমরা সেই মুহূর্তে যদি সমাধান না করি, তাহলে এটি দীর্ঘ সময়ে গিয়ে আমাদের মনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এটার অনেক বড় মাশুল আমাদের অনেক পরে দিতে হয়। যখন আমরা বলি, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আপনারা আগে আসেননি কেন?

আগে আসার সময়টিতে ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারদের কাছে যাবে। যেন ওই জায়গাটা যে আগে আসেননি কেন ওই কথাটার মুখোমুখি আমাদের না হতে হয়। শারীরিক স্বাস্থ্যকে যেমন আমরা রক্ষা করতে চাই, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যকে আমরা রক্ষা করতে চাই। এই রক্ষা করার জন্য ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা বা সমাজকর্মীরা ভূমিকা রাখতে পারে।

এটা সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। আমি যদি না জানি যে এটা ডিজঅর্ডার কি না, হয়তো কেউ খুব পরিষ্কার থাকে, এত পরিষ্কার থাকে যে তার বিছানায়ও কাউকে বসতে দেয় না। সারা দিন সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে। অনেকে এটিকে ভালো বলছে। তবে এটি যে একটি সমস্যা, এটা যে সমস্যা হতে পারে, এ সম্পর্কে কিন্তু সচেতন নয়। তাই এ সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা বা সচেতন করে তোলার জন্য ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা অনেক বড় ভূমিকা রাখেন। এদের এই সচেতনতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কাররা একটি বড় ভূমিকা পালন করেন।

প্রশ্ন : আমরা কিন্তু দেখছি, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের জোড়টা কমে যাচ্ছে। আমরা কিন্তু দেখছি মানসিক অবক্ষয়গুলো হচ্ছে। টিনএজারদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে আপনারা কী মনে করেন? ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারদের মধ্যে আপনারা কি সেই জায়গা থেকে শিক্ষাটা তাদের মধ্যে দিতে পারছেন?

উত্তর : আমরা আসলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া চার বছর ধরে আমরা এটা পেশাগত ডিগ্রি দিয়ে শুরু করেছি। এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক সেমিনার করছি। এগুলো করার মধ্য দিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায়, যেমন—কিশোর উন্নয়ন সংস্থা, সিআরপি, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র এসব জায়গায় যাচ্ছি, তাদের সমস্যাগুলো দেখার চেষ্টা করছি। ওই জিনিসগুলো নিয়ে আমরা গ্রামেগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইন করার ব্যবস্থা করছি। শিক্ষার্থীরা জেনে আসছে তাদের সমস্যাগুলো কী? কোথা থেকে এর সূত্রপাত?

প্রশ্ন : দাম্পত্য কলহ ইদানীং অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এর মূলে আসলে কী? এ বিষয়ে কীভাবে কাজ করা হচ্ছে?

উত্তর : দাম্পত্য কলহ চলছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চলছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেখা যাচ্ছে, বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই বাচ্চারা আবার পরে ওই কাজগুলো করছে। এগুলো দেখা যায় গ্রামের মাতবররা সমাধান করছে। আমরা কিন্তু না জেনে, না বুঝে অনেক কথা ব্যবহার করে আসছি। মা-নানি-খালা-দাদিরা বলে আসছেন। বাড়িতে হয়তো রাগ হয়েছে, বাচ্চার ওপর এর ঝাল ঝাড়ছে। এর মানে কি বাচ্চাকে এখন যে সে মারছে, মারার কথা নয়, এর পেছনের কারণ কী? তার যে অধিকার, তার যে বলার জায়গা, তার যে নিরাপত্তা, এই জিনিসগুলো সে জানে না যে তার আসলে কতটুকু অধিকার আছে। সে কতটুকু পর্যন্ত নিতে পারে। ওই জায়গাটিই সে ঠিক করতে পারে না। তখনই দেখা যাচ্ছে, মানসিকভাবে সে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি তারা জানতে পারত যে এ পর্যন্ত সহ্য করা যায় বা এখানে সহ্য করা যায়, এর পরে আসলে সহ্য করা যায় না—এই জায়গাটা জানার জন্য তো আমাকে সচেতন হতে হবে। আমার বিষয়গুলো জানতে হবে। আমরা ভাবি যে বলা যাবে না, মানুষ খারাপ বলবে, বলবে পাগল, চিকিৎসক বা সাইকিয়াট্রিকের কাছে যাচ্ছে, তাদের তো নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে, সে মেয়ে বিয়ে করে ঘরে আনা যাবে না, ওখানে বিয়েও করানো যাবে না। শরীরের অসুস্থতার মতো এটা হলো আমাদের মানসিক অসুস্থতা, যে সমস্যা থেকে আমরা সহজেই উত্তরণ পেতে পারি। আবার যদি না হয়, তাকে ব্যবস্থাপনা করতে পারি। ডায়াবেটিস হলে উত্তরণ না পেলে কী করে ব্যবস্থাপনা করে চলে। তেমনিভাবে যদি মানসিক কোনো সমস্যা হয়, নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হবে। আমাদের দরকার শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা।

প্রশ্ন : সরকারিভাবে আপনারা কোনো সাহায্য এ ক্ষেত্রে পেয়েছেন কি না?

উত্তর : আমরা চার বছর ধরে পেশাগত ডিগ্রি দেওয়া শুরু করেছি। তো, গত বছর থেকেই এটা নিয়ে চেষ্টা করছিলাম। ২০১৬ সালে যে মেন্টাল হেলথ অ্যাক্ট, আমাদের ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কারদের ভূমিকাকে যোগ করার জন্য আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।