বানর যখন রেস্তোরাঁর ওয়েটার!

রেস্তোরাঁয় খেতে কার না ভালো লাগে? একটু সময়-সুযোগ মিললেই হলো, খাওয়ার সাথে বেশ সুন্দর একটা সময় কাটানোরও ফুরসত মেলে। সব রেস্তোরাঁই চেষ্টা করে একটু নতুনত্ব এনে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে। তাই বলে ওয়েটার যদি বানর হয়, তখন? হ্যাঁ এমন জায়গাও আছে বৈকি! অল ওয়ান্ডারস ওয়েবসাইটে রয়েছে এমন কিছু উদ্ভট রেস্তোরাঁর বিবরণ। একবার জেনেই দেখুন এগুলোর থিম আর কাজকর্মের কথা।
কায়াবুকিয়া তেভারেন : জাপানের বানর ওয়েটারের রেস্তোরাঁ
জাপানের কায়বুকিয়া তেভারেন রেস্তোরাঁয় দুটি বানর ওয়েটার হিসেবে রাখা হয়েছে। যাদের নাম ইয়াট চান এবং ফুকু চান। তারা সবাইকে পানীয় পরিবেশন করে, একইসাথে খাওয়ার পর তোয়ালে আনাও তাদের কাজ। তারা বিলের টাকাও নেয় এবং বাকি টাকা ফেরৎ দেয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বানর দুটি ইউনিফর্ম পরে খাবার পরিবেশন করে। আপনি তাকে সেদ্ধ করা সয়াবিন বখশিশ হিসেবে দিতে পারেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি থাকে তাদের। যদি আপনি তাদের পরিবেশন করা খাবার খেতে চান, তাহলে আগে থেকে জেনে নিতে হবে কোন দুই ঘণ্টা তারা রেস্তোরাঁয় কাজ করে।
ম্যাজিক রেস্টরুম ক্যাফে : আমেরিকার প্রথম টয়লেট থিমের রেস্টুরেন্ট
ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যাজিক রেস্টরুম ক্যাফে আমেরিকার প্রথম টয়লেট বেইজড থিমের রেস্তোরাঁ। এখানে বসার জন্য কমোড স্টাইলের চেয়ার এবং খাবার পরিবেশনের জন্য টয়লেট স্টাইলের প্লেট ও বাটি ব্যবহার করা হয়। এমনকি, তাদের খাবারের মেনু কার্ডও সাজানো হয়েছে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশবিশেষ নিয়ে। কিছু খাবারের আইটেমের নাম (খাদ্য তালিকা অনুযায়ী) শুনলে রীতিমতো আপনার গা গুলিয়ে উঠতে পারে, যেমন- কন্সটিপেশন, নুডলস উইথ সয়াবিন পেস্ট, ব্ল্যাক পুপ, গোল্ডেন পুপ রাইস ইত্যাদি। এই ‘আজগুবি’ নামগুলোর আদলে রয়েছে সচরাচর কিছু খাবারই, কেবল থিমটা একটু ‘অন্য’ ধাঁচের। আপনি যদি এমন অদ্ভুত অনুভূতি নিতে চান, তাহলে একবার এই রেস্তোরাঁ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
নিউ লাকি রেস্টুরেন্ট : ভারতের কবরস্থান থিমের রেস্তোরাঁ
মরা মানুষের সঙ্গে এক কাপ চা খেতে আপনার কী কোনো আপত্তি আছে? ভাবলেই গা শিউরে উঠে, তাই না? অথচ ভারতের আহমেদাবাদের অনেক পুরনো একটি কবরস্থানের মধ্যে দ্য নিউ লাকি রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়েছে। কবরের পাশে রেস্তোরাঁটির টেবিল সাজানো রয়েছে। এই রেস্তোরাঁয় দুধের চায়ের সঙ্গে নরম রোল পরিবেশন করা হয়। রেস্তোরাঁর ওয়েটাররাও কবরের পাশ দিয়ে খাবার পরিবেশন করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অনেক মানুষ আছেন যারা কবর আছে কী নেই- সে বিষয়ে কোনো মাথাব্যথাই করেন না! তারা স্রেফ চা উপভোগ করতে আসেন। এই রেস্তোরাঁয় একটা ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে যেখানে আপনি স্বাভাবিক শ্বাস নিতেও ভয় পেয়ে যেতে পারেন। তো, হবে নাকি এক কাপ চা?
হসপিটালস : লাটভিয়ার হাসপাতাল থিমের রেস্তোরাঁ
হাসপাতাল যেকোনো সুস্থ মানুষের জন্য ভীতিকর এক জায়গা। আপনার ‘হাসপাতাল ভীতি’ যদি একটু বেশিবেশি হয়, তাহলে লাটভিয়ার রিগায় অবস্থিত দ্য হসপিটালিস রেস্তোরাঁ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এই রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে নার্সরা হাসপাতালের অ্যাপ্রোন পরে আপনাকে খাবার পরিবেশন করবে। তারা আপনার সঙ্গে এমন আচরণ করবে এবং দেখাশোনা করবে যেন আপনি কোনো রোগী! এ ছাড়া তাঁরা নিজেরাই আপনাকে গান গেয়ে শোনাবেন। বারের মধ্যে সার্জন আপনার জন্য পানীয় তৈরি করবে। তাদের বেশভুষায় মনে হবে কোনো অপারেশন থিয়েটারে আছেন। অপারেশন রুমের ডিশে এবং ফ্লাস্কের মধ্যে তারা খাবার পরিবেশন করেন। এমনকি সস দেওয়ার জন্য এখানে সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়!
ডিজাস্টার ক্যাফে : স্পেনের ভূমিকম্প থিমের রেস্তোরাঁ
হঠাৎ করেই ভূমিকম্প শুরু হলো। সবাই জীবন বাঁচানোর জন্য চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো। স্পেনের ডিজাস্টার ক্যাফেতে গেলে কিছুক্ষণ পরপর আপনার এই ধরনের অনুভূতি হবে। এই ক্যাফেতে কম্পন অবস্থায় খাবার পরিবেশন করা হয়। অনেক মানুষই এই ক্যাফেতে আসে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভব করতে। শুধু কম্পনের সময় আপনাকে নিজের ব্যালেন্স ঠিক রেখে বসে থাকতে হবে। নয়তোবা আপনার অর্ডার করা পানীয় কাঁপুনির চোটে পড়ে যেতেই পারে, তাতে কিন্তু কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না!
ল্যামবার্টস ক্যাফে : যুক্তরাষ্ট্রের খাবার নিক্ষেপ থিমের রেস্টুরেন্ট
যদি আপনি ক্যাচ ধরতে পারদর্শী হন, তাহলে আবশ্যই আপনার একবার হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ল্যামবার্ট ক্যাফেতে যাওয়া উচিত। কারণ এই ক্যাফেতে খাবার ছুঁড়ে মারার চল রয়েছে। আপনি যত বেশি ক্যাচ ধরতে পারবেন, তত খাবার খেতে পারবেন। তারা অনেক ফ্রি খাবারও যেমন- বিনস, আলু পরিবেশন করে থাকে। তাই এই রেস্তোরাঁয় উদাস হয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগই নেই আপনার।
হবিট হাউস রেস্টুরেন্ট : ফিলিপাইনের বামন ওয়েটারের রেস্তোরাঁ
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হবিট হাউস রেস্টুরেন্টে বামন ওয়েটাররা আপনাকে খাবার পরিবেশন করবে। জিম টার্নার নামের এক সাবেক অধ্যাপক এই রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা। পানীয়-রসিকদের জন্য এখানে রয়েছে অনেক ধরনের বিয়ার। রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সাথে সাথে সময়টাও খুব সুন্দর যায়, কারণ এখানকার বামন ওয়েটাররা ভারি বন্ধুবৎসল।