ইরানের ফ্যাশন মার্কেটে আগ্রহী পশ্চিম
পরমাণু কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার পর ইরানের প্রতি পশ্চিম এখন উদার। গত জানুয়ারিতে অর্থনৈতিক আরোপ উঠিয়ে নেওয়ার পর বিভিন্ন দেশ ক্রমে ইরানের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। আর হবে নাই বা কেন? এ দেশের রয়েছে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তা ছাড়া আট কোটি মানুষের এই দেশের বাজারটাও তো ফেলনা নয়। আছে অর্থশালী উচ্চবিত্ত যেমন, তেমনি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তও। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলাসীপণ্য কেনার মতো মানুষের সংখ্যা সে দেশে মোট জনসংখ্যার অন্তত ৩ শতাংশ। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা আরো ধারণা করছেন, এই বাজার প্রত্যাশামতো সম্প্রসারিত হলে তা হবে বৈশ্বিক বিলাসীপণ্যের বাজারের ২ শতাংশ। বার্লিন দেয়াল পতনের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন মরগ্যান স্ট্যানলি।
অন্যদিকে, গত ৩০ বছর নানা কারণেই ইরানের প্রতি পাশ্চাত্যের মনোভাব ছিল বিরূপ। সম্প্রতি এ পরিস্থিতির অনেকাংশেই পরিবর্তন ঘটেছে। এমনকি সে দেশের নীতিনির্ধারকদের মনোভাব অনেক উদার ও সময়োপযোগী মনোভাবও হয়েছে। এমনকি ফ্যাশন আর মডেলিংয়ের মতো বিষয়ে ধর্মীয় বাধা নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণেই বলা যেতে পারে, সেখানে বিলাসীযাপনের উপযোগী পণ্যের প্রতি মানুষের অবদমিত আগ্রহের আগল খুলে গেছে। পোশাক, অন্যান্য ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের সুলভতার পালেও বাতাস লেগেছে। ইরানের ফ্যাশন ডিজাইনাররাও তাদের সৃজনদক্ষতা প্রকাশের উত্তরোত্তর সুযোগ পাচ্ছে। গত বছর প্রথমবারের মতো তেহরান ফ্যাশন উইকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া আরো বেগবান হওয়ার সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতেই ফ্লোরেন্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফ্যাশন হাউস রবার্তো ক্যাভেলি তেহরানে বুটিক খুলেছে। এর আগে অবশ্য সেখানে হাজির হয়ে যায় চামড়াজাত পণ্য উৎপাদক পিকাদ্রো ও পুরুষদের শার্ট উৎপাদক ক্যামিসিসিমা। এই মিছিলে শামিল হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ভারসাচি। খুব শিগগির তার ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলবে তেহরানে। ইতালিয়ানদের বলতেই হবে এ ব্যাপারে আগ্রহ অন্যদের থেকে বেশি। সেখানকার বিদ্যমান সমস্যাকে মাথায় রেখেই তারা এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে এখনো দেখেশুনে পা বাড়াতে চাইছে। এ তালিকায় রয়েছে শ্যানেল, গুচি আর এলভিএমএইচ। কোনো কোনো ফ্রেঞ্চ বুটিক, যেমন—লালিক, লংচ্যাম্প সরাসরি না এসে ফ্র্যাঞ্চাইজি সন্ধান করছে।
এই বাজারে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করতে বেশ উদ্যোগী ইতালিয়ানরা। গেল সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইতালির ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি খোদ দলবল নিয়ে দুদিনের ইরান সফরে এসে এ চুক্তি সম্পাদন করছেন।
মূলত চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ইতালির ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাশন অ্যাসোসিয়েশন বা সিসতেমা মোদা ইতালিয়া (এসএমআই) ও তেহরান গার্মেন্ট ইউনিয়নের মধ্যে (টিজিইউ)। এসএমআই যে সেক্টরের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, টার্নওভারের দিক থেকে তার পরিমাণ পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ইউরো।
এই চুক্তির ফলে দুদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল সম্পৃক্ত বাণিজ্য সহজ হবে। সরকারি জটিলতাও কমবে। প্রধানমন্ত্রী রেনজি ৬০ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে ইরান সফর করে তাঁর সরকারের পক্ষে নানা ধরনের সুবিধা দেওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে, ইরানের রিটেইল অবকাঠামো ততটা সুসংগঠিত নয়। পাশাপাশি শুল্কও চড়া। ব্যাংকের বিধিনিষেধও যথেষ্ট। এর পাশাপাশি ট্রেডমার্ক সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ ইরানে ততটা কঠিন নয়। এসব বিষয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সমস্যার হলেও তারা এ বাজারের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারছে না।
লেখক : সাংবাদিক, এটিএন নিউজ।