বাবা-মায়ের যে কাজগুলো সন্তানের মন ভালো রাখবে

ভোরে ঘুম থেকে না উঠলেই মায়ের বকুনি খেতে হয় অনেককেই। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পরই শুরু হয়ে যায়, ‘এটা করবি না’‘সেটা করবি না’। এতে সন্তান নিয়ম-নীতি কতটা শেখে জানা নেই, তবে আতঙ্ক চেপে বসে মনে, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে অবসাদের কারণও হয়ে ওঠে।
প্রযুক্তির সঙ্গে যুগেরও পরিবর্তন ঘটেছে। সেখানে বাবা-মাকেও এখন বুঝতে হবে, কতটা ছাড়তে বা ধরতে হবে সন্তানকে। পরিণত অভিভাবকত্বে প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে যুক্তিনির্ভর ও বাস্তবধর্মী, আনন্দবাজার অনলাইনকে এমনটাই জানালেন কলকতার মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বা অযথা সন্তানের মনে অস্থিরতা তৈরি করা নয়, বরং সহজসরলভাবে ছোট ছোট বিষয় তার মতো করেই বুঝিয়ে দেওয়া যায়। যেমন, সকালে উঠে সন্তান কী করবে আর কী নয়, তার তালিকা করুন ঠিকই, তবে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। তাকে বলুন, বাড়িতে যে নিয়মগুলো আপনারা মেনে চলেন, সেগুলো সে-ও মেনে চললে ভাল। কেন এই নিয়ম মেনে চলবে, তা ওর কাছে ব্যাখ্যা করুন। সেটাও আলোচনার মধ্য দিয়ে। অথরিটেটিভ প্যারেন্টিং-এর শুরু হবে এখান থেকেই।
উদাহরণ দিয়ে বলা যাক, সকালে কোন কোন কাজ জোর করে না করানোই ভাল। এই বিষয়ে একমত মনোবিদও।
প্রথমত, রাতে ঘুমানো ও সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠার রুটিন করে দিন। তবে জোর করবেন না যে ভোর ৫টায় উঠেই তাকে পড়তে বসতে হবে। সকলের শরীর সমান নয়। ধীরে ধীরে সকালে উঠার অভ্যাস তৈরি করুন।
দ্বিতীয়ত, ঘুম ভাঙার পরেই পড়তে বসে যাওয়া বা ব্যায়াম শুরু করে দেওয়ার জন্য জোর করবেন না। বরং ঘুম থেকে তুলে ১০ মিনিটের জন্য মেডিটেশন অভ্যাস করান। এতে মন স্থির হবে। দেখবেন, তারপর নিজেই প্রতিদিন যাবতীয় কাজ গুছিয়ে করতে পারছে।
তৃতীয়ত, অনেক শিশুই সকালে উঠে ফোন চায়। তখন চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় না করে বরং বোঝান, অন্যান্য গ্যাজেটের মতো ফোনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিভি বা ফ্রিজ নিয়ে যেমন সে খেলে না, তেমনই ফোনটাও খেলার বস্তু নয়। তার চেয়ে বরং কিছু প্রাণায়াম অভ্যাস করান। সঙ্গে আপনিও করুন। অথবা গান চালিয়ে দিয়ে যে কোনো রকম নাচ করতে বলুন। এতে শরীরচর্চাও হবে, আর শিশুও আনন্দ পাবে।
চতুর্থত, বকাবকিতে তিক্ততা বাড়ে, তাই সকালের যতই ব্যস্ততা থাক, সন্তানকে কাছে ডেকে বা জড়িয়ে ধরে তার সঙ্গে কথা বলা, সারাদিনের খুঁটিনাটি জানতে চাওয়া খুবই জরুরি। এতে তার মনেও ভরসার জায়গা তৈরি হবে। দিনের শুরু থেকেই তার মন ভাল থাকবে, যে কোনো কাজেই উৎসাহ পাবে।
ইতিবাচক প্যারেন্টিং খুবই জরুরি এমনটাই মনে করছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকার। তার পরামর্শ, ছোট থেকে শিশু যেন অভিভাবকের থেকে ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় পায়। পরীক্ষায় খারাপ নম্বর পেয়েছে বলে, সকালে উঠেই বকতে শুরু করে দিলেন, অন্যের সঙ্গে তুলনা করলেন, আজ স্কুলে গিয়ে আবার খারাপ নম্বর নিয়ে ফিরলে মারধর করবেন বলে ভয় দেখালেন, এতে সন্তানের সঙ্গে তিক্ততাই বাড়বে। তার চেয়ে সন্তান যে বিষয়গুলোতে ভাল, সেদিকে নজর দিন। কীভাবে অন্য বিষয়ে আরও ভাল করতে পারবে, তা নিয়ে আলোচনা করুন, উৎসাহ দিন, তাতে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।
ঘুম থেকে উঠেই একগাল হাসি নিয়ে দিন শুরু করতে হবে, পরিপাটি জামাকাপড়, জুতো পরতেই হবে, এমন নিয়মের বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। বরং শিশুকে ওর মতো করেই থাকতে দিন। ছোট থেকে বড়দের মতো আদব-কায়দা শেখাতে গিয়ে ওর শৈশব নষ্ট করে দেবেন না।