‘সিনেমা যেমন, আমার বাদাম বেচাও তেমন চলছে’
টিকাটুলীর মোড়ে অভিসার সিনেমা হল, এর সামনে ১৯৯৫ সাল থেকে বাদাম বিক্রি করেন মনু মিয়া। বেশ ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ২০০৮ সালে নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে বাদাম বিক্রি। এখন আর বাদাম বিক্রি করে চলছে না তাঁর সংসার। তাই বাদাম বিক্রির পাশাপাশি করতে হচ্ছে খণ্ডকালীন পিয়নের চাকরি।
কিশোরগঞ্জের মনু মিয়ার বাবা পুরোনো ইত্তেফাক অফিসের সামনে বাদাম বিক্রি করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর ব্যবসার হাল ধরেন মনু মিয়া। সিনেমা হলে ঢোকার আগে ও পরে দর্শক বাদাম খায়। ছবি দেখতে দেখতেও অনেকে বাদাম খেতে পছন্দ করে। এ কারণে অভিসার সিনেমা হলের সামনে মনু মিয়া বাদাম বিক্রি শুরু করেন নব্বইয়ের দশকে।
এখন ব্যবসার খবর কী—জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে মনু মিয়া বলেন, ‘সিনেমা যেমন, আমার বাদাম বেচাও তেমন চলছে। দর্শক সিনেমা হলে আসেন সিনেমা দেখতে। ছবি শুরুর আগে ও বিরতির সময় তারা বাদাম নিয়ে সিনেমা হলের ভেতরে যান। যাঁরা পরের শোর জন্য অপেক্ষা করেন, তাঁরা এখান থেকে বাদাম কিনে খান। এখন সিনেমার দর্শক কম, তাই বেচাবিক্রিও কম।’
এই বাদাম বিক্রি করে সংসার কেমন চলছে—জানতে চাইলে মনু মিয়া বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন বাদাম বিক্রি করে প্রতিদিন হাজারখানেক টাকা কামাই করতে পারতাম। এখন প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা লাভ থাকে। শুক্র ও শনিবার পাঁচশ টাকার মতো কামাই করতে পারি। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। আমার দুইটা বাচ্চা, সঙ্গে মা-বউ মিলে পাঁচজনের সংসার। যে কারণে পাঁচ-ছয় বছর ধরে একটা অফিসে পিয়নের চাকরি করছি। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিউটি করি। ৪টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অভিসারের সামনে বাদাম বিক্রি করি।’
নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর থেকে সিনেমা হলের দর্শক কমতে থাকে আর তার প্রভাব পড়ে মনু মিয়ার ব্যবসায়ও। তিনি বলেন, ‘নায়ক মান্না ভাই মারা গেছেন ২০০৮ সালে, তার পর থেকেই বাদাম বিক্রি কমছে। গত সাত-আট বছর একেবারেই কমে গেছে, যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।’
দর্শক কেন কমছে—এমন প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন মনু মিয়া। এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি তো বাদাম বেচি, এটা আমি কী করে বলব? তবে আমি আগে প্রতি বৃহস্পতিবার সিনেমা দেখতাম। শুক্রবার ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সপ্তাহজুড়েই দর্শক ছবিটি দেখত। বৃহস্পতিবার দর্শক কিছুটা কম হতো, কারণ পরের দিন নতুন ছবি মুক্তি পাবে। সেই ফাঁকে আমি ছবি দেখতাম। তখন ছবিতে একটা গল্প থাকত, বাসায় যেতে যেতে সিনেমার গল্পটা মাথায় ঘুরত। ছবির গানগুলো গুনগুন করে গাইতাম। এখন ছবি দেখতে ভালো লাগে না। ছবি দেখে বের হওয়ার পর আর ছবির গল্প মনে থাকে না, গানগুলোও মনে করতে কষ্ট হয়।’
কথা বলতে বলতেই বাদাম ভাজছিলেন মনু মিয়া। পাশে কয়েকজন ক্রেতাও দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের হাতে বাদামভর্তি ঠোঙা তুলে দিতে হবে। সন্ধ্যার শো শুরু হবে কিছুক্ষণ পরই। মনু মিয়া দ্রুত হাতে সব সামলে নিচ্ছেন।