উন্মাদীয়
টাইগারস উইন দ্য ক্রাউড!

সাধারণত বিয়েশাদির প্রাথমিক আলাপে এমনটা হয়ে থাকে। পাত্রীপক্ষের বাসায় পাত্রপক্ষ আসবে বিয়ের প্রাথমিক আলাপে। তখন পাত্রীপক্ষ থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হয়—
— আপনারা ক’জন আসবেন? ওই পক্ষ থেকে বলা হয়।
— বেশি না, পাঁচ-ছয়জন!
— জি আচ্ছা।
কিন্তু দেখা যায়, পাঁচ যোগ ছয় এগারোজন এসে হাজির হয়।
আমাদের বিস্ময় বালক ক্রিকেটার মুস্তাফিজের (আমি তাকে বালকই বলছি, কারণ তার চেহারা থেকে বালকসুলভ ব্যাপারটা এখনো যায়নি) ক্ষেত্রে এমনটাই যেন হয়েছে। ভারতের সঙ্গে এই সিরিজ খেলার আগে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কি না, জানি না। ধরা যাক হয়েছিল—
— মুস্তাফিজ, তোমার এই অভিষেকে তুমি কটা উইকেট পাবে মনে করো?
— বেশি না, পাঁচ-ছয়টা।
এবং বাস্তবে দেখা গেল মুস্তাফিজ এগারোটা উইকেট পেয়েছে। এবং সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসে এটা একটা নতুন রেকর্ড হয়ে গেছে।
ক্রিকেট খেলাটা আমার কাছে এখনো যথেষ্ট জটিল লাগে। যে কারণে আমি ফুটবলের ভক্ত। কিন্তু বাংলাদেশের মাঠের টাইগাররা যেভাবে খেলা শুরু করেছে, তাতে করে আমি দ্রুত ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা করছি।
এবার একটা গল্প শোনা যাক। গল্পটা ক্রিকেট নিয়েই। এক তরুণ, সে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এ বয়সেই সে যথেষ্ট ধার্মিক, প্রতিদিন চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করে। ধরা যাক, সে মিরপুর স্টেডিয়ামের ভারত-বাংলাদেশের এই সিরিজ খেলাটা দেখেছে। মুস্তাফিজের এগারো উইকেট নেওয়ার ব্যাপারটা দেখে সে খুবই উজ্জীবিত । হঠাৎ তার মনে হলো, মুস্তাফিজের মতো বোলার হতে হবে তাকে। বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য সে তিনটা স্টাম্প আর একটা ক্রিকেট বল নিয়ে গেল এক নির্জন খেলার মাঠে। তিনটা স্টাম্প সে মাটিতে গাড়ল (ক্রিজে যেমনটা গাড়া থাকে), তার পর সে বল করতে শুরু করল।
এদিকে দুই অ্যাঞ্জেল ব্যাপারটা খেয়াল করল।
— দেখেছ ?
— কী?
— এই ছেলে প্রতিদিন চার্চে যেত, আজ সে চার্চে গেল না।
— হ্যাঁ, চার্চে না গিয়ে সে বল প্র্যাকটিস করছে।
— আমার মনে হয়, আমরা ওকে একটা শাস্তি দিতে পারি।
— হ্যাঁ, ওকে একটা শাস্তি দেওয়া হোক। শুরু হলো শাস্তি। দেখা যাক, কী শাস্তি দেয় অ্যাঞ্জেলরা...
তরুণ বল করছে, পর পর তিন ওভার বল করল। এবং তিন ওভারেই সে নিখুঁতভাবে মাঝের স্টাম্পকে ফেলে দিল... তার তুরন্ত বল দিয়ে।
— অসাধারণ বোলিং। একজন অ্যাঞ্জেল বলল।
— কিন্তু ওর শাস্তির কী হলো?
— এটাই তো ওর শাস্তি।
— মানে?
— এই যে সে তিন ওভার বল করল। একজন ব্যাটসম্যান থাকলে কী হতো জানি না, কিন্তু প্রতিবারই সে নিখুঁত বল করে মাঝখানে স্টাম্পটা ফেলে দিল। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে একটা নতুন রেকর্ড হতে পারত... গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠতে পারত।
— সবই বুঝলাম, কিন্তু গির্জায় না যাওয়ার জন্য তার শাস্তিটা কী হলো?
— এটাই ওর শাস্তি, এত চমৎকার পারফরম্যান্স কিন্তু কেউ জানল না, দেখল না!!
মিরপুরেই আমার অফিস। আমি সব সময় স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরি। যখন খেলা চলে, তখন একটু পর পর দর্শক জনসমুদ্রের চিৎকার শুনি। অসাধারণ এক সাউন্ডস্কেপ... নিশ্চয়ই টাইগাররা ছয় মেরেছে বা চার মেরেছে কিংবা বিপক্ষের কাউকে বোল্ড আউট করেছে। তখন আমার প্রাচীন পৃথিবীর একটা খেলার কথা মনে পড়ে। ইতালির অ্যারেনায় তরুণ স্পার্টাকাস যখন গ্ল্যাডিয়েটর হয়ে প্রথম অস্ত্র হাতে নামতে যাচ্ছে তখন তার কানে কানে আফ্রিকান ট্রেইনার বলেছিল, ‘স্পার্টাকাস উইন দ্য ক্রাউড!’ স্পার্টাকাস কোনো মন্তব্য করেননি... তার পরের ইতিহাস তো আমরা সবাই জানি। কে জানে, আমাদের টাইগাররাও যখন মাঠে নামে তখন কি কোচ বলেন, ‘টাইগারস উইন দ্য ক্রাউড!’ জানি না, হয়তো বলেন, নইলে কেন হাজার হাজার দর্শক এ রকম সমুদ্রের মতো গর্জন করে ওঠে?