২১ পেরিয়ে অবিচল এনটিভি
গণমাধ্যম গণমানুষের আয়না। কথা বলে মানুষের জন্য, মানুষের হয়ে। দেশ ও দশের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়ে ছুটে চলেন কর্মীরা। পর্দার সামনে ও পেছন থেকে নিরলস শ্রম দিয়ে যান তারা। সবকিছুর মূলে থাকে একটি প্ল্যাটফর্ম। দর্শক, পাঠক যেখানে অপেক্ষায় থাকে কাঙ্খিত সংবাদের। ‘এনটিভি’ তেমনই একটি প্ল্যাটফর্ম, যা মানুষের মনের আকাঙ্খা মেটাতে সক্ষম।
ভরা বর্ষায় পথঘাট ভিজিয়ে ময়লা ধুয়ে দেয়। পিচঢালা পথকে মনে হয় ভোরে স্কুলে যাওয়া শিশুর হাতে থাকা কালো স্লেট। শিশু সেখানে সাদা চক দিয়ে রোজ নতুন শব্দ লেখে। শব্দে শব্দে গল্প বোনে। দুপাশে গাছগাছালি, ধানক্ষেতের জমিনে ফুটে ওঠে সবুজ। ভোরের স্নিগ্ধ প্রকৃতি জানান দেয় আরেকটি নতুন দিনের। চায়ের কাপ হাতে নাগরিক অপেক্ষা করে গরম গরম খবরের। খবরে সরব থাকে এনটিভি। টেলিভিশন চ্যানেলটির লোগোটাকে এই আঙ্গিকে দেখলে বোধকরি ভুল দেখবে না কেউ।
এনটিভির খবর শুরুর মুহূর্তে যে আবহ সংগীত বেজে ওঠে, চ্যানেলের শুরু থেকেই একই রকম আছে সেটি। মানুষ বুঝতে পারে, খবরের সময় হয়েছে। তারা আশ্বস্ত হয়, সত্য আর অজানা তথ্য জানতে পারবে বলে! একটি গণমাধ্যম তখনই জনগণের আয়না হয়ে উঠতে পারে, জনগণ যদি সেখানে নিজেদের দেখতে পায়। ঘটনা আর রটনার গ্যাঁড়াকলে পড়ে সত্য-মিথ্যা যাছাই করতে লোকে দ্বারস্থ হয় খবরের। যেখানে সত্যের সঙ্গে আপস করতে শেখেনি এনটিভি।
কোনো কিছু পারফেক্ট হতে প্রয়োজন এর মজবুত ভিত। ভিতকে শক্ত করতে চাই নিখুঁত গাঁথুনি। গাঁথুনির জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট উপাদানের স্বচ্ছতা। সেগুলো যত ভালো হবে, ভিত তত নিখুঁত হবে। আর নিখুঁত করতে গেলে চাই দক্ষ কর্মী। দক্ষ কর্মীর হাতে স্বচ্ছ ও প্রয়োজনীয় উপাদান তুলে সেরাটা বের করে আনতে দরকার নেতৃত্বের। বিচক্ষণ নেতা সর্বোচ্চটুকু বের করে আনতে পারেন। সবকিছুর সমন্বয়ে বিন্দু বিন্দু করে আকাশ ছুঁতে পারে কোনো একটা স্বপ্ন। ২০০৩ সালের ৩ জুলাই শুরু হওয়া একটি স্বপ্ন ২১ বছর পর আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির আজ জন্মদিন।
এনটিভি বদলেছে, বদলে হয়েছে আরও তরুণ, আরও নবীন, আরও উচ্ছ্বল। নিজস্বতা ধরে রেখে ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’—প্রতিপাদ্যে নিজেকে বর্ধিত করেছে। গুণে, মানে, সেবায় হয়ে উঠেছে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম।
আয়োজনের দিক থেকে বরাবরই নতুনত্ব নিয়ে এসেছে এনটিভি। বাংলাদেশে সঙ্গীত শিল্পী তুলে আনার প্রথম অনুষ্ঠান ‘ক্লোজআপ ওয়ান’। কণ্ঠশিল্পী প্রতিভা অন্বেষণবিষয়ক এই আয়োজন সাড়া ফেলে গোটা দেশে। এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি টেলিভিশন চ্যানেলটি। এরপর শুরু করেছে ‘পিএইচপি কুরআনের আলো।’
একটি অনুষ্ঠান সুন্দর করতে উপস্থাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। উপস্থাপক তুলে আনার কাজটি টেলিভিশনে প্রথমবার আয়োজন করে এনটিভিই। ‘আলো ছড়াবে উপস্থাপনায়’ অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নতায় ভরা। প্রতিটি পর্বেই অংশগ্রহণকারীদের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, এই আয়োজনে এনেছে পূর্ণতা। পরিবার নিয়ে উপভোগ করার মতো একটি অনুষ্ঠান ‘কনকা সেরা পরিবার।’ ব্যাপক দর্শক সাড়া পেয়ে এবার দ্বিতীয় সিজন অনুষ্ঠিত হয় এনটিভির পর্দায়।
এখন চারদিকে অসংখ্য গণমাধ্যম। টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও কম নয়। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে অনলাইনেও তৈরি হয়েছে বিনোদনের নানা মাধ্যম। তবু লোকে দুঃখ নিয়ে বলে, আগের মতো আর বিনোদন জগতটা নেই। গানে প্রাণ নেই, নাটকে মান নেই, সিনেমার গল্পে ধার নেই। তবে, এনটিভির পর্দায় দৃষ্টি স্থির করলে দুঃখ অনেকটাই লাঘব হবে। দেখবেন ছুটির দিনের গানে আপনার প্রাণ জুড়াবে। দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের নাটকই পাবেন চ্যানেলে। ধারাবাহিক নাটক, সাপ্তাহিক প্যাকেজ নাটক-টেলিফিল্মে সামাজিক, কমেডি, রোমান্টিক; সব ঘরানার পরিবেশনা আছে এখানে। পুরোনো দিনের ক্লাসিক সিনেমার পাশাপাশি নতুন সিনেমার সমন্বয়ে চলচ্চিত্রের সঠিক স্বাদ দিচ্ছে সিনেপ্রেমীদের।
আমাদের নাটক সিনেমা নিয়ে প্রচলিত একটি ধারণা, বাজেট নেই। বাজেটের অভাবে ভালো কিছু নির্মাণ করতে পারেন না নির্মাতারা। ‘বাজেট’ বিষয়টি কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিবছর দেশের সব খাতের জন্য সরকারি বাজেট নির্ধারণ করা হয়। বাজেট অধিবেশনের আগে সেটি পর্যালোচনা ও তা নিয়ে আশা-আকাঙ্খা সংক্রান্ত আয়োজন ‘কেমন বাজেট চাই’। এনটিভির এই অনুষ্ঠান এতটাই বিস্তৃত, যে পরিসরে অন্য কেউ এখনও ভাবতেও পারেনি। এটি দেশব্যাপী বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বাজেটের আগে।
সময়টা বড্ড এলোমেলো। নানা ঘটনা হঠাৎই মোড় নেয় একদিক থেকে অন্যদিকে। সঠিক বিশ্লেষণ হয় না অনেক সময়। রোজকার ঘটনা নিয়ে এনটিভির জনপ্রিয় টক শো–‘এই সময়।’ যেখানে বিশেষজ্ঞের বক্তব্যে উঠে আসে সমসাময়িক ঘটনার আলাপ।
ইতিহাসভিত্তিক জনপ্রিয় সিরিজ দিরিলিস আরতুগ্রুল ও কুরুলুস উসমান অন এয়ার হওয়ার পর দর্শক সেসব সাদরে গ্রহণ করেছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘আপনার জিজ্ঞাসা’য় আসা নানা প্রশ্ন বলে দেয় দর্শকপ্রিয়তা।
‘এখন যৌবন যার’–হেলাল হাফিজের বিখ্যাত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার বিখ্যাত এই লাইনের মতোই তারুণ্যের হাতে নিহিত ক্ষমতার সিংহভাগ। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তরুণদের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার। তারা নিজেদের ভালো লাগা অনুযায়ী ব্যবহার করছে এসব ডিভাইস। প্রযুক্তি আরও আধুনিক হচ্ছে, তা কাজে লাগিয়ে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে।
এনটিভিও পিছিয়ে থাকেনি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সময়ের চাওয়া পূরণে শুরু করে ‘এনটিভি অনলাইন।’ ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ডিজিটাল এই মাধ্যম্যের পথচলা। সব খবর, সর্বশেষ খবরের বিশাল ভাণ্ডার এনটিভি অনলাইনে রয়েছে অসংখ্য সেগমেন্ট। মূলধারার গণমাধ্যমের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পাঠক, দর্শকের জন্য নিয়ে এসেছে স্বস্তি। নিজস্ব কনটেন্টের সমারোহে পরিপূর্ণ এনটিভি অনলাইন নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করছে দিন দিন। মুহূর্তেই হাতের কাছে তরতাজা নিউজ পাচ্ছে পাঠক। পাঠকের হাতে নির্ভুলভাবে সংবাদ পরিবেশনে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দায়িত্বরতরা কাজে এক চুল ছাড় দেন না। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এনটিভি ডিজিটালের লড়াইটা নিজের সঙ্গেই, নিজেকেই রোজ ছাড়িয়ে যাওয়ার শুদ্ধ লড়াই চলছে।
বাংলাদেশের মানুষের আবেগের বড় অংশজুড়ে রয়েছে খেলাধুলা। খেলা নিয়ে বাঙালির মাতামাতিতে বাড়তি উন্মাদনা যোগ করেছে এনটিভি স্পোর্টস। ক্রীড়া সাংবাদিকদের বয়ানে, তাদের কলমে এমনভাবে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের কোনো জয়ের চিত্র, কিংবা ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রিয় দলের সাফল্যের খবর; দর্শক ও পাঠকের মনে হবে, এই বুঝি গ্যালারি থেকে ঘরে এলাম! ঘরে এসেও খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে আছে এনটিভির খেলাবিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘গ্যালারি।’ যেখানে সমসাময়িক বিষয়ে আলাপ হয়, বিশ্লেষণ হয়।
অনেক কথা হলো। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘কলম’ কবিতার কয়েক চরণ দিয়ে শেষ করি…
‘কলম, তুমি কত না যুগ কত না কাল ধরে
অক্ষরে অক্ষরে
গিয়েছ শুধু ক্লান্তিহীন কাহিনি শুরু করে।
কলম, তুমি কাহিনি লেখ…
তোমার কাহিনি কি দুঃখে জ্বলে
তলোয়ারের মতো ঝিকিমিকি?’
এনটিভি তো কালি কলম আর লাইট ক্যামেরার সমন্বয়ে সুখে-দুঃখে জ্বলছে ঝিকমিক করেই। একুশ পেরিয়ে ক্লান্তিহীন, অবিচল।