ভাইকিংসদের বদলে যাওয়ার নেপথ্যে অধিনায়ক মুশফিক

দলে নেই রংপুর রাইডার্সের মতো একঝাঁক তারকা। ঢাকা ডাইয়নামাইটসের মতো সুপারস্টারে ঠাসা কোনো দলও নয় চিটাগং। অথচ, শীর্ষে থাকা ঢাকার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে তারা। ছয় ম্যাচে দশ পয়েন্ট ঢাকার, পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতে তাদের ঠিক পরের অবস্থানে আছে ভাইকিংসরা। বিপিএলে এখন পর্যন্ত দলটি যেভাবে পারফর্ম করছে, সেটা আগামী ম্যাচগুলোতেও ধরে রাখলে শিরোপায় চোখ রাখতেই পারে চিটাগং। মাঝারি সারির এক দল নিয়েও তাদের এমন সাফল্যের পেছনের মূল কারিগর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
গত আসরে ১২ ম্যাচে মাত্র তিন জয় নিয়ে সবার নিচে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল চিটাগং। কিন্তু দলে নতুন যোগ দেওয়া মুশফিকের নেতৃত্বের জীয়নকাঠির ছোঁয়ায় সেই দলটিই যেন বদলে গেছে। এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচ খেলেই চারটি জয় পেয়ে গেছে তারা। সবচেয়ে বড় কথা, দারুণ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কঠিন সব ম্যাচ জিতে যাচ্ছে দলটি। শিরোপার অন্যতম দাবিদার বনে যাওয়া দলটির সাফল্যের অগ্রনায়কের ভূমিকায় আছেন অধিনায়ক নিজে। পাঁচ ম্যাচে দুই ফিফটিতে ১৯১ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকার পাঁচ নম্বরে আছেন আছেন মুশি।
টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষেই কেবল দুই অঙ্কের নিচে (৫ রান) স্কোর করে আউট হয়েছিলেন মুশি। এখনো পর্যন্ত একমাত্র সেই ম্যাচটিই হেরেছে চিটাগং। তাই মুশফিকের রান করা মানেই চিটাগংয়ের জয়, এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে প্রায়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে বিশাল রান তাড়া করে মুশফিকের বিস্ফোরক ৭৫ রান কিংবা গতকাল খুলনার বিপক্ষে দ্রুতগতির ৫২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংসগুলো দলের অন্য সদস্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস।
অভিজ্ঞ আশরাফুলের বদলে তরুণ ইয়াসির আলীর উপরে আস্থা রেখেছেন, তাঁকে উৎসাহ দিয়ে শুনিয়েছেন আগামীর সম্ভাবনার কথা। দারুণ কিছু ইনিংস খেলে অধিনায়কের প্রশংসার প্রতিদান দিতে দেরি করেননি তিন নম্বর পজিশনে সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যান। অথচ, কয়েক মাস আগে এক সিএনজি এক্সিডেন্টে ক্যারিয়ারটাই শেষ হতে চলেছিল এই ক্রিকেটারের। দলের বোলারদেরও মুশফিক ব্যবহার করছেন বুদ্ধিমত্তার সাথে। তরুণ পেসার খালেদ আহমেদ আর আবু জায়েদ রাহির ওপর আস্থা রেখে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন হরহামেশা। তাই বোলিংয়ে এসে বাউন্ডারি খেলেও হতোদ্যম না হয়ে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দিচ্ছেন দুই পেসার। স্পিনার নাইম আহমেদ আর সানজামুলকেও ব্যবহার করছেন প্রয়োজন অনুসারে। পাশাপাশি নিজে দর্শনীয় কিছু ক্যাচ নিয়ে ফিল্ডারদের রাখছেন উজ্জীবিত। ম্যাচ বাই ম্যাচ প্রতিপক্ষ অনুযায়ী দলের কম্বিনেশনটা হচ্ছে দুর্দান্ত। মাঠে খেলোয়াড়রাও ঢেলে দিচ্ছে নিজেদের শতভাগ।
রবি ফ্রাইলিংক, ক্যামেরন ডেলপোর্ট, নজিবুল্লাহ জাদরান আর দাসুন শানাকার মতো বিদেশি খেলোয়াড়দের অগাধ আস্থা অধিনায়কের ওপর। বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডসের দায়িত্বে থাকা অস্টেলিয়ান কোচ সাইমন হ্যালমেটও চিটাগং ভাইকিংসের কোচিং করাতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন মুশফিকের অধিনায়কত্ব দেখে। এখন বদলে যাওয়া দলটিকে তাদের কাণ্ডারি চূড়ান্ত সাফল্যের বন্দরে ভেড়াতে পারেন কি না, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীরা।