অধিনায়কদের কথায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস
আগামী ৩০ মে শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের মেগা আসর শুরুর আগে বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১০টি দলের অধিনায়ককে নিয়ে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলন। ১৯৯২ সালের পর আবার রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। অংশগ্রহণকারী সব দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলবে এবার। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এবারের টুর্নামেন্টটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট। লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে ১০ অধিনায়কের কণ্ঠেও পাওয়া গেল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ।
সঞ্চালক মার্ক চ্যাপম্যানের প্রশ্নের উত্তরে এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন ও ভাবনা তুলে ধরেন ১০ দেশের অধিনায়ক।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড) : গত বিশ্বকাপে যারা আমাদের দলে ছিল, তাদের অনেকেই এবারও আছে। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া। তবে স্বাভাবিকভাবেই চার বছরের পার্থক্যে বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড় দলে জায়গা করে নিয়েছে। একটা ব্যাপার আমার কাছে মনে হয়েছে যে র্যাঙ্কিং, ফেভারিট, আন্ডারডগ—এসব নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই সব দলই অনেক ভারসাম্যপূর্ণ আর নির্দিষ্ট একটি দিনে যেকোনো কিছুই হতে পারে।
বিরাট কোহলি (ভারত) : বিশ্বকাপে সবাই বড় স্কোরের ম্যাচের কথা বলছে, দেশেও সংবাদ সম্মেলনে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই ব্যাপারে। আমি বলেছি, বিশ্বকাপে ২৬০-২৭০ রান করাও ৩৫০-৩৬০ করার মতোই কঠিন হবে। কারণ এটি বিশ্বকাপ, সবাইকেই চাপের মুখে খেলতে হবে। সবাই জেতার জন্য সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করবে। আমার মনে হয়, এই বিশ্বকাপে ২৫০ রান করেও কোনো কোনো দল ম্যাচ কিছু বাঁচিয়ে ফেলবে। আর সেটাই হবে এবারের বিশ্বকাপের সৌন্দর্য।
মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ) : সর্বশেষ আয়ারল্যান্ডে হয়ে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে আমরা ভালো করেছি। আশা করছি, ২ জুন ফাফ ডু প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ভালো করব। ক্রিকেটে নিজেদের দিনে যেকোনো দলকেই হারিয়ে দেওয়া সম্ভব, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য। যদি শুরুটা ভালো করি এবং সেটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব আমাদের পক্ষে। তবে সে জন্য শুরুটা খুব ভালো হতে হবে।
ফাফ ডু প্লেসি (দক্ষিণ আফ্রিকা) : কয়েক বছর ধরে খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট হতে দেখা যাচ্ছে। এমন নয় যে শুধু ঘরের মাঠেই একটা দল ভালো খেলছে। বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্ট, যেটা চার বছরে একবার আসে, সেখানে ভালো করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও মাঠে নেমে পড়ার অপেক্ষায় আছি। আর আশা করছি, মাশরাফির ইচ্ছেটা পূরণ হতে দেব না।
গুলবাদিন নাইব (আফগানিস্তান) : বিশ্বকাপে শীর্ষ সব দলের সঙ্গে থাকতে পেরে এবং তাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা খুবই অধীরভাবে অপেক্ষা করছি মাঠে নামার জন্য। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার আর আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাদের তর সইছে না। আশা করি, আমরা সেটা ভালোভাবেই করতে পারব আর নিজেদের সেরা খেলাটা খেলব।
জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) : খুবই রোমাঞ্চকর একটা বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এবার। আগে বিশ্বকাপে একটা দল চার-পাঁচটি ম্যাচ খেলত, এবার আরো কয়েকটি ম্যাচ বেশি খেলতে হবে। এবারের ফরম্যাটটা বেশ রোমাঞ্চকর হয়েছে। বিশ্বকাপে এখন সবার সঙ্গে সবার খেলা হবে। তাই যে দলটা ট্রফি হাতে উদযাপন করবে তারা জানবে যে কতটা কষ্টকর ছিল পুরো যাত্রাটা। লম্বা টুর্নামেন্ট, আমাদের প্রথম ভাগটা ভালোভাবে শেষ করতে হবে। এরপর দেখতে হবে সামনে কী আছে।
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া) : আমরা বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে, নতুন একটা আসর শুরু হচ্ছে। সবকিছুই একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, গত বিশ্বকাপজয়ী দলের ছয়জনকে এবারও আমাদের দলে পাচ্ছি। তবে এটা একেবারেই নতুন আরেকটি বিশ্বকাপ।
এউইন মরগান (ইংল্যান্ড) : আমি মনে করি না যে, কেউ কারো ওপরে আছে এবার। এটা ১০ দলের বিশ্বকাপ, বিশ্বের সেরা ১০টি দল খেলবে এখানে। আসরটা প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আশা করছি খুব ভালো ক্রিকেট হবে এবার। স্বাগতিক হিসেবে আমাদের একটা সুবিধা তো আছেই! আমরা বেশিদিন নিজেদের বাসায় থাকতে পেরেছি, নিজেদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরেছি। তবে অনেক দিন ধরেই আমরা এই বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা নিয়েছি। তাই খেলতে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।
সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান) : এবার সব দলই খুব ভারসাম্যপূর্ণ। সবার জন্যই শুভকামনা রইল। আশা করছি দর্শকরা দারুণ সব ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন। ইংল্যান্ডে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স বরাবরই ভালো। ১৯৯২ সালে টেস্ট সিরিজের কথা যদি ধরি, এরপর ২০০৯ সালের বিশ্বকাপ টি- টোয়েন্টি, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানের রেকর্ড বেশ ভালো। এই বিশ্বকাপেও আমরা খুব ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী।
দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা) : আমরা গত কয়েক বছরে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। ইংল্যান্ডে খেলারও অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। আশা করছি, আমরা ভালোই করব। প্রস্তুতি আর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমরা একটু আগেভাগেই ইংল্যান্ডে চলে এসেছি। কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছি। আমরা নিজেদের সেরা প্রস্তুতিতেই আছি, আশা করছি ভালো করব।