কাবাডির জিয়ার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প
কাবাডিতে জিয়াউর রহমানের হাতেখড়ি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়। বড় ভাই আব্দুল জলিলের খেলা দেখেই কাবাডি খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন জাগে তাঁর মনে। স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেন। তখনই স্থানীয় কোচদের নজরে পড়ে যান তিনি। সুযোগ পেয়ে যান দিনাজপুর জেলা দলে। ১৯৯২ সালে দিনাজপুর জেলা দলের হয়ে ঢাকায় খেলতে আসেন জাতীয় যুব কাবাডিতে। প্রথমবারই পেয়ে যান সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ১৯৯৪ সালে জাতীয় যুব কাবাডির পরের আসরেও সেরা খেলোয়াড়ের নাম জিয়াউর রহমান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৯৫ সালে ডাক পান জাতীয় দলে। সে বছরের চেন্নাই সাফ গেমসে তাঁর দারুণ পারফরম্যান্স রুপা এনে দেয় বাংলাদেশকে। এর পরই সার্ভিসেস দলগুলো জিয়াকে দলে টানতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস) দলে যোগ দেন জিয়া।
টানা ২০ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলছেন। অভিজ্ঞতা আর সাফল্যে জিয়ার ক্যারিয়ার দারুণ সমৃদ্ধ। চারটি এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়েছেন। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে খেলেছেন কাবাডি বিশ্বকাপেও। ২০০৭ বিশ্বকাপে সেরা রেইডার হওয়ার দুই বছর আগে পেয়েছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
কাবাডি থেকে অনেক সাফল্য আর সম্মান পেলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে হতাশায় জীবন কাটছে জিয়ার। গত বছর ভারতীয় কাবাডি লিগে খেলতে গিয়ে আক্ষেপ বেড়ে যায় আরো। কাবাডিতে ভারতের একজন তারকা বছরে যত আয় করেন বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় তার ১০ ভাগের এক ভাগও আয় করেন কি না সন্দেহ! বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও কাবাডি-দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে তিনি ভীষণ হতাশ।
এ প্রসঙ্গে জিয়ার মন্তব্য, ‘আমাদের কাবাডি খেলোয়াড়রা বরাবর অবহেলিত। পরিকল্পনার অভাবে দিন-দিন পিছিয়ে পড়ছে খেলাটা। যে কারণে আমাদের খেলোয়াড়রা তেমন ভালো অবস্থায় নেই। অথচ পাশের দেশ ভারতে দেখেছি জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় কত সুযোগ-সুবিধা পান। সে তুলনায় আমাদের খেলোয়াড়রা তেমন কিছুই পাচ্ছে না।’
হতাশায় আচ্ছন্ন জিয়া অবসরের চিন্তা-ভাবনাও করছেন, ‘অনেক খেলেছি, এবার অবসর নিতে চাই। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেই অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।’
তবে অবসরের পর কাবাডিকে বিদায় জানানোর কোনো ইচ্ছা নেই। বরং ভবিষ্যতে তাঁকে কোচের ভূমিকায় দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে জিয়া বলেছেন, ‘কাবাডি যেভাবে পিছিয়ে পড়তে তাতে খেলাটিকে এগিয়ে নিতে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি কোচ হিসেবে কাবাডিতে অবদান রাখার কথা ভাবছি। দেশের কাবাডির জন্য কিছু করতে পারলে খুব ভালো লাগবে।’
জাতীয় খেলাকে এগিয়ে নিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন জিয়া। তাঁর মতে, ‘সরকার একটু উদ্যোগী হলে এই খেলাটা প্রাণ ফিরে পাবে। এ ক্ষেত্রে শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারও প্রয়োজন। তাহলেই কাবাডিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’