জিম্বাবুয়ের লড়াই থামিয়ে বাংলাদেশের রুদ্ধশ্বাস জয়
হতশ্রী ব্যাটিংয়ে দেড়শ ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় লড়াই জমিয়ে তোলে জিম্বাবুয়ে। লেজের ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জয়ের কাছাকাছিও চলে যায় সফরকারীরা। কিন্তু শেষ ওভারে জিম্বাবুয়েকে থামিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে যান সাকিব আল হাসান। শেষ ওভারে টানা দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জয় উপহার দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি হবে একই ভেন্যুতে, আগামী ১২ মে। এরপরই বাংলাদেশ উড়াল দেবে বিশ্বকাপের দেশে।
ব্যাটিংয়ে বরাবরের মতোই নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ। ভালো শুরু করেও টার্গেট দেয় মাত্র ১৪৪ রানের। এই রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। ওপেনিংয়ে নামা বেনেটকে রানের খাতা খোলার আগেই মাঠছাড়া করেন তাসকিন আহমেদ।
দলটির অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকেও থিতু হতে দেননি তাসকিন। বোল্ড করে রাজাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি। দলীয় ৩২ রানে মারুমানির উইকেট তুলে নেন সাকিব। এরপর চতুর্থ ধাক্কা দেন রিশাদ হাসান। এরপর উইকেট উৎসবে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমান। রায়ার্ন বার্ল ও লুক জঙ্গুয়েকে বিদায় করে তুলে নেন জোড়া শিকার।
অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করা বাংলাদেশকে পথ দেখান বোলাররা। আগের তিন ম্যাচের মতো এবারও জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরেন তারা। কিন্তু শেষ দিকে টেলএন্ডারদের ব্যাটে চড়ে জয়ের দুয়ারে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। শেষ ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এসে থামান তাদের। তাতে জিম্বাবুয়ের লড়াই ভেস্তে দিয়ে জয়ের নাগাল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৯.৪ ওভারে ১৩৮ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
বল হাতে ৩৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন সাকিব। ১৯ রান দেওয়া মুস্তাফিজের শিকার তিনটি। তাসকিন নেন দুটি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৪৩ রান তুলে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেছেন তানজিদ তামিম। ৩৭ বলে যা সাজানো সাত বাউন্ডারি আর এক ছক্কায়।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত শুরু করেন তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকার। শুরু থেকেই হাতখুলে খেলেন তামিম। সৌম্য শুরু করেন রয়েসয়ে। প্রথমে থিতু হন এরপর বল হাওয়ায় ওড়ান।
ওপেনিং জুটিতে দুজন মিলে গড়েন শতরানের জুটি। এর মধ্যে ৩৪ বলে তামিম পান হাফসেঞ্চুরির দেখা। সৌম্যও ছুটছিলেন একই পথে। কিন্তু দুজনের ছন্দে বাঁধ সাধেন লুক জঙ্গুয়ে। দুই ওপেনারকে এক ওভারেই মাঠ ছাড়া করেন তিনি।
১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লুক জঙ্গুয়েকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাম্পবেলের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তামিম। একই ওভারের শেষ বলে সৌম্যকে এলবির ফাঁদে ফেলেন জঙ্গুয়ে। ৩৪ বলে ৪১ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
শুরুর জুটি ভাঙার পরই ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। একের পর এক উইকেটে আসা-যাওয়ার মিছিলে মাতেন ব্যাটাররা। ওয়ানডাউনে নেমে সিকান্দার রাজার বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তাওহিদ (১২)। এরপর উইকেটে এসেই বোল্ড হন সাকিব আল হাসান। এক রানে বেনেটের বোল্ডের শিকার হন তিনি। স্কোরবোর্ডে ১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি সাকিব।
একই কায়দায় বোল্ড হন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাকেও বোল্ড করেছেন বেনেট। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুধুই হতাশার সুর। কেউই উইকেটে এসে পারলেন না থিতু হতে। মাত্র ১১ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এমন স্বপ্নময় শুরুর পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এমন ভয়ংকর চিত্রে বেশদূর আগায়নি ইনিংস। শেষ পর্যন্ত দেড়শর নিচেই থেমে যাইয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বল হাতে ২০ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন লুক জঙ্গুয়ে। সমান দুটি করে নেন বেনেট ও রিচার্ড এনগার্ভা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৪৩ (তানজিদ ৫২, সৌম্য ৪১, হৃদয় ১২, শান্ত ২, সাকিব ১, জাকের ৬, রিশাদ ২, তাসকিন ০, তানজিম ৬, মুস্তাফিজ ৩, তানভির ৩*; রাজা ৪-০-২৪-১, মুজারাবানি ৩.৫-০-৩০-১, রিচার্ড ৪-০-২৭-২, বেনেট ৩-০-২০-২, জঙ্গুয়ে ৩-০-২০-৩, ফারাজ ১-০-৯-০, মাসাকাদজা ১-০-৭-০)।
জিম্বাবুয়ে : ১৯.৪ ওভারে ১৩৮/১০ (বেনেট ০, রাজা ১৪, মারুমানি ১৭, ক্লাইভ, ক্যাম্পবেল ১২, রায়ার্ন বার্ল ১৯, জঙ্গুয়ে ১, ফারাজ ১১, মাসাকাদজা ৯, এনগার্ভা ০, মুজারবানি ৮; তাসকিন ৪-০-২০-২, তানজিম সাকিব ৩-০-৪২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-৩, সাকিব ৩.৪-০-৩৫-৪, তানভীর ২-০-১৪-০)।
ফল: ৫ রানে জয়ী বাংলাদেশ।