ব্যাটিংয়ে ভরাডুবি, দুই দিনেই কানপুরে বাংলাদেশের পরাজয়
হতশ্রী, হতাশাজনক কিংবা বিবর্ণ—ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশা বোঝাতে এই বিশেষণগুলোও যথেষ্ট নয়। প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ, ঠিকঠাক লড়াইটাই করতে পারল না। চেন্নাইয়ে অসহায় আত্মসমর্পণের পর কানপুরে বৃষ্টিও মান বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশের। প্রায় আড়াই দিন খেলা না হলেও শেষ দেড় দিনেই বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল রোহিতরা।
আজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) কানপুরে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১৭.২ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারত। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিল গৌতম গম্ভীরের শিষ্যরা। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ২টি ও তাইজুল একটি উইকেট নেন।
চতুর্থ দিনে ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে পঞ্চম দিনে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ, দিনের শুরুতেই হারায় মুমিনুলের উইকেট। পঞ্চম দিনের শুরুটা বাংলাদেশ করেছিল সুইপ দিয়ে। সেই সুইপ করতে গিয়েই আবার বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন উইকেট। অশ্বিনের করা দিনের দ্বিতীয় ওভারে এক স্লিপ রেখে ফিল্ডিং সাজান রোহিত। আর সেই ফাঁদেই পা দেন মুমিনুল। সুইপ করতে গিয়ে রাহুলের হাতে দেন ক্যাচ। ৮ বলে ২ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
মুমিনুলের বিদায়ের পর সাদমানকে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন অধিনায়ক শান্ত। সাদমানের সঙ্গে গড়েছিলেন ৫৫ রানের জুটি। এমন পরিস্থিতিতে জাদেজার বলে রিভার্স সুইপ খেলতে চাইলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব্যাটে-বলে হয়নি, বল আঘাত করল স্টাম্পে। ৩৭ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর টিকতে পারেননি সাদমানও। ব্যক্তিগত ৫০ রানের কোটা পূরণ করে যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। তার বিদায়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে লিটন-সাকিবরাও পারেননি আস্থার প্রতিদান দিতে। মিরাজ কিছুটা আশা দেখালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। যার ফলে শেষদিকে একাকি লড়াই করতে হয় মুশফিককে। তবে, লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে সেই লড়াইটা বেশিক্ষণ চালাতে পারেননি এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। বুমরাহ এর বলে মুশফিক বোল্ড হয়ে ফিরলেন ১৪৬ রানে থামে লাল-সবুজের দল।
এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৩৩ রান তাড়ায় নেমে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ২৮৫ রান তোলে ভারত। যার ফলে ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিনই ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। তবে, এবারও জ্বলে উঠতে পারেননি মুশফিক-সাকিবরা। প্রথম ইনিংসে এক মুমিনুল হক ছাড়া কেউই পারেননি সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ১০৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।
এই সিরিজ হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গেল বাংলাদেশ। অন্যদিকে দাপুটে জয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখল ভারত। আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজও যে কতটা কঠিন হতে যাচ্ছে, তা ভালোই টের পেল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি শুরু ৬ অক্টোবর, গোয়ালিয়রে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৭৪.২ ওভারে ২৩৩/১০ (জাকির ০, সাদমান ২৪, মুমিনুল ১০৭*, শান্ত ৩১, মুশফিক ১১, লিটন ১৩, সাকিব ৯, মিরাজ ২০, তাইজুল ৫, হাসান ১, খালেদ ০; বুমরাহ ১৮-৭-৫০-৩, সিরাজ ১৭-২-৫৭-২, অশ্বিন ১৫-১-৪৫-২, আকাশ দীপ ১৫-৬-৪৩-২, জাদেজা ৯.২-০-২৮-১)
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫/৯ ডি. (জয়সওয়াল ৭২, রোহিত ২৩, গিল ৩৯, রিশাভ ৯, কোহলি ৪৭, রাহুল ৬৮, জাদেজা ৮, অশ্বিন ১, আকাশ দীপ ১২, বুমরাহ ১; হাসান ৬-০-৬৬-১, খালেদ ৪-০-৪৩-০, মিরাজ ৬.৪-০-৪১-৪, তাইজুল ৭-০-৫৪-০, সাকিব ১১-০-৭৮-৪)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৪৭ ওভারে ১৪৬/১০
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস : ১৭.২ ওভারে ৯৮/৩
ফল : ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : ভারত ২-০ ব্যবধানে জয়ী